অমিতবিক্রম গাঁধীনগরে, ঐক্যবদ্ধ এনডিএ-র বিজ্ঞাপনে নেই আডবাণী

চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিতি এক জনেরই। তিনি গাঁধীনগরের বিদায়ী সাংসদ লালকৃষ্ণ আডবাণী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

গাঁধীনগর শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৯ ০২:১৭
Share:

জোট-শক্তি: মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে আমদাবাদের সভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও নিতিন গডকড়ী, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদল। ছবি: পিটিআই ।

বাঁ পাশের চেয়ারে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, ডান পাশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কয়েক জনের পরে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে।

Advertisement

গাঁধীনগরের কালেক্টরেট অফিস। জীবনে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়ন পেশ করছেন অমিত শাহ।

পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীও সঙ্গে রয়েছেন দিনভর। আছেন এনডিএ শরিক শিরোমণি অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদল, লোকজনশক্তি পার্টির প্রধান রামবিলাস পাসোয়ান। শোনা গেল, শারীরিক কারণে আসতে পারেননি নীতীশ কুমার। তবু সব মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ এনডিএ-র বিজ্ঞাপন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চোখে পড়ার মতো অনুপস্থিতি এক জনেরই। তিনি গাঁধীনগরের বিদায়ী সাংসদ লালকৃষ্ণ আডবাণী। এক কালে এই কেন্দ্রে তাঁর নির্বাচনী ম্যানেজার যিনি ছিলেন, সেই অমিত আজ প্রার্থী। অথচ আডবাণী সশরীরে তো নেই-ই, গোটা গাঁধীনগরে একটা পোস্টার পর্যন্ত দেখা যায়নি তাঁর। অমিত শুধু এক বার বললেন, ‘‘আডবাণীজির পরম্পরা বহন করতে চেষ্টা করব। আমার সৌভাগ্য, যে আসন থেকে আডবাণীজি, অটলবিহারী বাজপেয়ী, পুরুষোত্তম গণেশ মভলঙ্কর প্রার্থী হয়েছেন, সেখান থেকে আমাকে প্রার্থী করেছে দল। বিজেপি ছাড়া আমার জীবন শূন্য।’’

তারকার বিষয় আশয়

অমিত শাহ

কেন্দ্র: গাঁধীনগর (গুজরাত)
মোট সম্পত্তি
স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৩৮.৮১ কোটি টাকা
• নিজের হাতে নগদ ২০৬৩৩ টাকা
• স্ত্রীর হাতে নগদ ৭২৫৭৮ টাকা
• ব্যাঙ্কে জমা ২৭.৮০ লক্ষ টাকা
• স্থায়ী আমানত ৯.৮০ লক্ষ টাকা
• সস্ত্রীক বার্ষিক আয় (আয়কর রিটার্ন মোতাবেক) ২.৮৪ কোটি টাকা
• আয়ের উৎস
রাজ্যসভা সাংসদের বেতন, ভাড়া দেওয়া সম্পত্তি, কৃষি
• গাড়ি : নেই
• ফৌজদারি মামলা
চারটি। পশ্চিমবঙ্গে দু’টি, বিহারে দু’টি। কোনওটিতেই দোষী সাব্যস্ত নন।
• পড়াশোনা: বি কম দ্বিতীয় বর্ষ
*গত সাত বছরে সম্পত্তি বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০১২-য় ছিল ১১.৭৯ কোটি।
সূত্র: হলফনামা

কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিরোধী শিবির মনে করাচ্ছে, এক বার লখনউয়ে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে রাজনাথ সিংহ দেখেছিলেন, শহর ছয়লাপ অটলবিহারী বাজপেয়ীর ছবিতে। নরেন্দ্র মোদীও নিজেকে বাজপেয়ীর উত্তরাধিকারী হিসেবে তুলে ধরেন। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, আজ কার্যত মুছেই দেওয়া হল আডবাণী যুগকে। এবং সেটা করা হল এনডিএ-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আডবাণীর সতীর্থ বাদল, কদাচিৎ মহারাষ্ট্রের বাইরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পা-রাখা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব, মন্ত্রিসভার ‘নম্বর টু’ রাজনাথ, মোদীর সব চেয়ে ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী জেটলিকে পাশে রেখে। ছক কষেই তৈরি করা হল এমন ফ্রেম। সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপির অস্বস্তি বাড়ানো উদ্ধবই আজ বলে দিলেন, ‘‘সমস্যা মিটে গিয়েছে। হিন্দুত্ব আমাদের বেঁধে রেখেছে।’’ বিজেপি সূত্র বলছে, মোদীর হস্তক্ষেপ ছাড়া তাঁর সেনাপতির মনোনয়ন জমা দেওয়াকে ঘিরে এমন শক্তি প্রদর্শন অসম্ভব। বস্তুত, গত ভোটে মোদীর মনোনয়ন পেশের জাঁকজমককেও ছাপিয়ে গিয়েছেন অমিত। ২০১৪-র ২৪ এপ্রিল বারাণসীতে মনোনয়ন জমার দিনে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অমিত, রবিশঙ্কর প্রসাদ, মুখতার আব্বাস নকভি এবং রাজ্য বিজেপির তৎকালীন সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ী।

সেখানে গাঁধীনগরে যাওয়ার আগে অমিত ফুলে ঢাকা জিপে চড়ে আমদাবাদে চার কিলোমিটার রোড শো করলেন। গোলাপি পাগড়ি পরে মালা ছুড়ে দিলেন রাস্তার দু’ধারে। পাশে তখন রাজনাথ এবং রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশে অমিত বললেন, ‘‘এ বারের ভোট হবে একটা মাত্র ইস্যুতে— দেশের নেতৃত্ব কে দেবেন? একটাই শব্দ শুনতে পাবেন, ‘মোদী, মোদী মোদী’। যিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পঞ্চায়েত ভোটেও লড়েননি, মাত্র পাঁচ বছরে তিনি সারা দেশের প্রিয় হলেন কী করে? কারণ ৭০ বছর ধরে মানুষ যে নেতার অপেক্ষায় ছিলেন, তাঁকে মোদীর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।’’

চা-বিক্রেতা হিসেবে মোদীর অতীতকে গত ভোটে অস্ত্র করেছিল বিজেপি। আর অমিতকে তুলে ধরা হল দেওয়াল-লেখা বুথকর্মী থেকে সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়া এক বিজেপি সদস্য হিসেবে। রাজনাথ আজ যাঁকে বলেছেন, ‘আডবাণীর উত্তরাধিকারী’। বাদল আবার আশাবাদী, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে হয়তো মন্ত্রিসভাতেই দেখা যাবে অমিতকে। এমনিতে বালাকোটের মতো ঘটনায় সরকারের আগেই বিবৃতি দিয়ে ফেলা অমিতকে ‘সুপার প্রাইম মিনিস্টার’ বলে কটাক্ষ করেন বিরোধীরা। আজকের আড়ম্বর উস্কে দিল আরও একটা জল্পনা। শুধু কি প্রজন্মেরই বদল দেখল গাঁধীনগর, নাকি অমিত শাহকে আদতে মোদীর উত্তরাধিকারী করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেল? ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা মনে করাচ্ছেন, পাঁচ বছর পরে মোদীর বয়স হবে ৭৩। যে নেতারা ৭৫ পেরিয়েছেন, তাঁদের টিকিট দেওয়া বন্ধ করছে বিজেপি। অমিত এখন সবে ৫৪।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন