ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। ছবি: এপি।
নির্বাচনী ইস্তাহারের নামে ফের ‘জুমলা’ বিজেপির, অভিযোগ বিরোধীদের। সোমবার দিল্লিতে লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করেছে বিজেপি। তার পরেই কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের এমন মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। তাদের দাবি, আগের বারও ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেছিল বিজেপি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তার একটিও পূরণ করতে পারেনি। এ বারের ইস্তাহারও তাদের ‘জুমলা’ বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভরা।
আগের ইস্তাহারটিকে হুবহু ‘কপি-পেস্ট’ করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ।
এ বছর বিজেপির ইস্তাহারের থিম ‘সংকল্পিত ভারত-সশক্ত ভারত’। যদিও ইস্তাহারের প্রথম পাতায় ভারতের অধিবাসীদের দেখা মেলেনি। বরং জনসাধারণের ঝাপসা মুখের প্রেক্ষাপটে পাতা জুড়ে জায়গা পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। তা নিয়ে এ দিন বিজেপিকে কটাক্ষও করেছে কংগ্রেস। নিজেদের ইস্তাহারের সঙ্গে তুলনা টেনে টুইটারে তারা লেখে, ‘ইস্তাহারের প্রথম পাতাই প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষের গুরুত্ব বেশি আমাদের কাছে। ওদের কাছে পাতায় নিজেদের ছবি ছাপাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইস্তাহারে দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাবনাচিন্তা জায়গা পেয়েছে, ওদের ঘোষণাপত্রে শুধুমাত্র মোদীর ‘মনকি বাত’-কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বার দেশই সিদ্ধান্ত জানাবে।’
আরও পড়ুন: জাতীয়বাদ, সুশাসনের সঙ্গে রইল রামমন্দির তাসও, ইস্তাহার প্রকাশ বিজেপির
রামমন্দির নির্মাণের উল্লেখ থাকলেও বিজেপির ইস্তাহারে নোটবন্দি এবং কৃষক আত্মহত্যার উল্লেখ নেই। তা নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল টুইটারে লেখেন, ‘২০১৪-র জুমলাগুলির কী হল, এখনও পর্যন্ত তার সদুত্তর পাননি দেশবাসী। তার মধ্যেই একগুচ্ছ নয়া জুমলা প্রকাশ করেছে বিজেপি। নোটবন্দি কেন করা হল, তা নিয়ে কথা বলার সাহসটুকু পর্যন্ত দেখাননি মোদী-শাহ। দু’ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গতবার। উল্লেখ নেই তারও। কেন ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হল কৃষকদের, ইস্তাহারে তা-ও বলা নেই।’ সিপিএমেরসাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইট করে বলেন,‘সঙ্কল্পপত্র নয়, আসলে জুমলাপত্র প্রকাশ করেছে বিজেপি। গতবারও অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওরা। তার মধ্যে একটাও পূরণ করতে পারেনি। কৃষক আত্মহত্যা রুখবে বলেছিল, তার কী হল?’
আরও পড়ুন: অভিনন্দন পাক এফ-১৬ বিমানই নামিয়েছিলেন, প্রমাণ হিসাবে রেডার ইমেজ পেশ করল বায়ুসেনা
অন্য দিকে, গতবারের ইস্তাহারই বিজেপি এ বছর কপি-পেস্ট করে দিয়েছে বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। তাঁর দাবি, ‘২০১৪-র ইস্তাহারই হুবহু টুকে দিয়েছে বিজেপি। শুধু তারিখগুলো পাল্টে ২০১৯, ২০২২, ২০৩২, ২০৪৭, ২০৯৭ করে দেওয়া হয়েছে। ভাগ্য ভাল, আগামী শতাব্দী পর্যন্ত তারিখ বসিয়ে দেয়নি।’
সংবাদমাধ্যমে তিনি আরও বলেন, ‘‘ইস্তাহারের প্রথম পাতায় সাধারণ মানুষকে জায়গা দিয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি শুধু একজনকেই গুরুত্ব দিয়েছে। শুধুমাত্র এর জন্যই ক্ষমাপত্র প্রকাশ করা উচিত ওদের।’’
সংবিধানের ৩৫এ ধারা অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরের জন্য বিশেষ অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। যার আওতায় রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কারা, তা ঠিক করার অধিকার পায় উপত্যকার সরকার। ক্ষমতায় এলে ওই ধারা বাতিল করা হবে বলে বেশ কিছু দিন ধরেই বিজেপি নেতাদের বলতে শোনা যাচ্ছিল। নির্বাচনী ইস্তাহারেও তা রাখা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, ‘‘বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। ওই ধারা বাতিল হলে শুধু উপত্যকা নয়, গোটা দেশে আগুন জ্বলবে।’’ আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয় বলেও বিজেপিকে পরামর্শ দেন মেহবুবা।
(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)