Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

জাতীয়তাবাদ, সুশাসনের সঙ্গে রইল রামমন্দির তাসও, ইস্তাহার প্রকাশ বিজেপির

ইস্তাহারের থিম ‘সংকল্পিত ভারত-সশক্ত ভারত’। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত, মজবুত ভারত।

নয়াদিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে)  সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং অরুণ জেটলি। ছবি: রয়টার্স 

নয়াদিল্লিতে বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে)  সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহ, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং অরুণ জেটলি। ছবি: রয়টার্স 

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ১৬:৩২
Share: Save:

জাতীয়তাবাদ। হিন্দুত্ববাদ। উন্নয়ন।

চুম্বকে বিজেপির ইস্তাহারের মূল মন্ত্র বলতে গেলে এটাই। বিজেপি ভোটে জিতলে এই তিন লক্ষ্যেই যে সরকার চলবে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোট শুরুর তিন দিন আগে সোমবার নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর কার্যালয়ে বিজেপির ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘জাতীয়তাবাদ আমাদের অনুপ্রেরণা, সমাজের দুর্বল অংশের ক্ষমতায়ন আমাদের লক্ষ্য এবং সুশাসন আমাদের মন্ত্র।’’ ইস্তাহারের রূপকার রাজনাথ সিংহ দিলেন রাম মন্দিরের প্রতিশ্রুতি। আর জেটলি-সুষমারা দিলেন গত পাঁচ বছরে সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান। অর্থাৎ সাফল্য এবং আরও সাফল্যের প্রতিশ্রুতি রইল। রইল না ২০১৪ সালে যে ১৫ লক্ষের প্রতিশ্রুতি এবং কালো টাকার প্রসঙ্গ, নীরব মোদী-বিজয় মাল্য-ললিত মোদীদের প্রসঙ্গ বা নোটবন্দি-জিএসটি মোকাবিলার দাওয়াই।

ইস্তাহারের থিম ‘সংকল্পিত ভারত-সশক্ত ভারত’। অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত, মজবুত ভারত। কিসের প্রতিজ্ঞা? বিজেপির ইস্তাহার বলছে, তিন মন্ত্রেই দেশকে আরও শক্তিশালী, আরও উন্নত করার শপথ বা সংকল্পই হল এই ইস্তাহার। জাতীয়তাবাদে রয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে ৭৫ প্রকল্পের কথা। এমনকি, স্বাধীনতার শতবর্ষ ১৯৪৭ সালে যে ভারতের স্বপ্ন দেখে ভারতবাসী, ২০২৩ সালের মধ্যেই দেশকে সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন পর্যন্ত ফেরি করে গেলেন মোদী।

পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান এ বারের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার। ইস্তাহারেও তার প্রতিফলন স্পষ্ট। রাফাল নিয়ে যতই বিতর্ক থাক, মোদী শোনালেন, ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনীর যে সব সামরিক অস্ত্রশস্ত্র কেনা বাকি, সেগুলি সবই পূরণ করা হবে। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর বলেছিলেন, সেনাকে সব রকম স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ইস্তাহার প্রকাশের পর বললেন, সেই প্রক্রিয়া ‘বজায় থাকবে’। এ ছাড়া অনুপ্রবেশ বন্ধ করা, জঙ্গি দমনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রতিশ্রুতি।

আরেক ‘মন্ত্র’ সুশাসন। তার জন্য সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অংশের ক্ষমতায়ন যেমন রয়েছে, তেমনই উল্লেখ করা হয়েছে দুর্নীতি দমনের। প্রতিশ্রুতি ২০২০ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার। বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘কৃষক সমদ্ধি যোজনা’। তাতে গরিব কৃষকদের বছরে ৬০০০ টাকা আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। ইস্তাহারে আশ্বাস, ক্ষমতায় এলে আর শুধু গরিব নয়, কোনও বাছবিচার না করে সব কৃষকই এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। এ ছাড়া কৃষকদের পেনশন, দিন মজুরদের পেনশন দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মোদী।

আরও পড়ুন: গাঁধীর হত্যাকারীদের থেকে দেশপ্রেম শিখব না, মোদী-বিজেপিকে আক্রমণ মমতার

ইস্তাহারে থাকলেও উগ্র হিন্দুত্ববাদ তথা মেরুকরণ তাস অবশ্য আস্তিনের মধ্যেই রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে গোপন রাখেননি রাজনাথ সিংহ। গত কয়েকমাস ধরে এই ইস্তাহার তৈরি করেছেন রাজনাথের নেতৃত্বে একটি দল। তাঁদের দাবি, সারা দেশের কয়েক লক্ষ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ‘মনের কথা’ জানার চেষ্টা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় মত জানতে হয়েছে দেশবাসীর। সব মিলিয়ে রাজনাথ ও তাঁর দলের কয়েক মাসের কঠোর পরিশ্রমের ফসল এই ‘সংকল্প পত্র’। সেই রাজনাথই বললেন, ‘‘ক্ষমতায় এলে যত দ্রুত সম্ভব রাম মন্দির তৈরি করা হবে।’’

ইস্তাহারে ছিল আগামীর দিশা। কিন্তু তা বলে গত পাঁচ বছরে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার এমন ‘মওকা’ ছাড়বে কেন শাসক দল। তাই জেটলি, সুষমারা ঢাক পেটালেন। অর্থমন্ত্রী বললেন, কী ভাবে দেশের অর্থনীতি গত পাঁচ বছরে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন তাঁরা। ইউপিএ সরকারের সময় মূল্যবৃদ্ধি ছিল দুই অঙ্কে। সেটা পাঁচ বছরে অধিকাংশ সময়েই এক অঙ্কে অর্থাৎ ১০-এর নীচে ছিল। তাঁর আরও দাবি, এটাই সম্ভবত দেশের প্রথম সরকার, যাঁদের পাঁচ বছরের জমানায় এক বারও আয়কর বাড়েনি, বরং কমেছে।

আরও পড়ুন: মোদী দেশকে যে সম্মান দিয়েছেন, নেহরু-ইন্দিরা-রাজীবরা তা পারেননি! নাম না করেই সমালোচনায় বরুণ

অথচ নোটবন্দির ফলে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার উল্লেখ নেই ইস্তাহারে। জিএসটি-তে খুচরো ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তাও আসেনি। অর্থনীতির এই দুই ক্ষত কী ভাবে আগামী পাঁচ বছরে মেরামত করা যেতে পারে, তার দিশা যেমন ইস্তাহারে নেই, অর্থমন্ত্রীও নিজের ভাষণে তার ধারে-কাছে গেলেন না। বললেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে গত পাঁচ বছরে।

গত পাঁচ বছরে ‘এনআরআই প্রধানমন্ত্রী’ কটাক্ষ বহুবারই শুনতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে মোদীর বিদেশ সফরের খরচের বহর নিয়ে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ভোট প্রচারে বিভিন্ন সভায় অভিযোগ তুলছেন, ‘সাড়ে চার বছর বিদেশে কাটিয়ে এখন ৬ মাস দেশপ্রেমী সেজেছেন মোদী’। ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে অবশ্য মোদীর সেই বিদেশ সফরের সুফলই তুলে ধরলেন বিদেশমন্ত্রী। সুষমার দাবি, ‘‘মোদীর এই সব সফরের জোরেই সৌদি আরব, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ অধিকাংশ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ভারতকে সবাই সমীহ করছে।’’

২০১৪-র লোকসভো ভোটে বিজেপির ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার ছিল কালো টাকা দেশে ফেরানো। আর সেই সূত্রেই মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল ওই কালো টাকা উদ্ধার করে গরিব মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে ১৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু কালো টাকা উদ্ধার হওয়া দূরে থাক, মোদীর জমানাতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন বিজয় মাল্য, নীরব মোদীরা। ২০১৯-এ ফের লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে না বিজেপির ইস্তাহারে, না মোদীর ভাষণে উল্লেখ করা হল কালো টাকার সেই অস্বস্তিকর প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE