নরেন্দ্র মোদী।
রাত পোহালে পঞ্চম দফার ভোট। তার আগে প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা জবাব দিলেন মায়াবতী-অখিলেশ।
উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, জম্মু-কাশ্মীরের মোট ৫১টি আসনে ভোট কাল। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশে রাজনাথ সিংহের আসন লখনউ যেমন আছে, তেমনই রাহুল গাঁধী-সনিয়া গাঁধীর কেন্দ্রও রয়েছে। গত কাল উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী বিরোধী জোটে ফাটল ধরাতে চেয়েছিলেন। মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার টোপ দিয়ে কংগ্রেস আসলে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে রফা করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু আজ সেই ‘বহেনজি’ই সাতসকালে মোদীর চালকে ভেস্তে দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী গত কাল বলেছিলেন, ‘‘জোটের বাহানায় বহেনজির ফায়দা তুলেছে এসপি। চালাকি করেছে। এখন বহেনজিও বুঝেছেন, এসপি ও কংগ্রেস অনেক বড় খেলা খেলেছে।’’ উত্তরপ্রদেশে আর ৪১টি আসনে ভোট বাকি। তার মধ্যে ১৪টিতে কাল। মোদীর চাল বুঝতে পেরেই অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের বিরোধীদের জোটই প্রধানমন্ত্রী দেবে। আর সেটি অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধি হলেও আপত্তি নেই।’’ সুকৌশলে অখিলেশ বোঝাতে চাইলেন, কোনও মহিলা প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ মায়াবতীতেও আপত্তি নেই। আবার কথার এমন বুনোট সাজিয়ে তিনি এ কথা বলেছেন, তার অন্য অর্থও হয়।
কিন্তু অখিলেশের এই মন্তব্যের পরেই আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে ওঠেন মায়াবতী। তিনি বলেন, ‘‘ফাটল ধরিয়ে রাজ করতে চান প্রধানমন্ত্রী। যখন থেকে উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি ও আরএলডির জোট হয়েছে, মোদী সঙ্কটে। তাঁর পেটে এমন ব্যথা হচ্ছে যে কোনও ওষুধ পাচ্ছেন না। ৪ দফার ভোটে পিছিয়ে থাকার পর এই পন্থায় নিজেদের সম্মান বাঁচাতে চাইছেন তিনি।’’ কিন্তু এর পর মায়াবতী আরও সোজাসাপটা ভাষায় বললেন, পরের সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে মোদীর চিন্তা করার দরকার নেই। আর এর সঙ্গেই দ্ব্যর্থহীন ভাবে জানিয়ে দিলেন, উত্তরপ্রদেশে জোট না হলেও অমেঠী ও রায়বরেলীতে বিএসপি-র সব ভোট যাবে কংগ্রেসে। কারণ, বিজেপি-আরএসএসকে ঠেকাতে এই আসন দু’টি বিরোধী জোট কংগ্রেসকেই ছেড়ে দিয়েছে।
দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, এ নিয়ে কোনও সংশয় নেই— অখিলেশের সঙ্গে রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর যে সম্পর্ক, সেটি মায়াবতীর সঙ্গে নয়। সে কারণেই অমেঠীতে এসপি-র মঞ্চে গিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু অখিলেশ বয়সে নবীন হলেও মায়াকে সামলানোর মন্ত্র জানেন। মূলত তাঁর প্রয়াসেই আজ মায়াবতী অমেঠী ও রায়বরেলীতে বিএসপি-র ভোট কংগ্রেসকে দেওয়ার আবেদন করলেন। আজ প্রিয়ঙ্কাও একটি অডিয়ো বার্তা জারি করে রাহুলের জন্য ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন।
দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ কবুল করেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে বিরোধী মহাজোটের কারণে আমাদের আসনের খেসারত দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে গত বারের থেকে ৩০টির বেশি আসন খোয়ানোর অঙ্ক ধরে নিয়েই এগোচ্ছি।’’ উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো রাজ্যেও ১৯টি আসনে ভোট কাল। যে দুটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সদ্য পরাজয় হয়েছিল বিজেপির। আর এই দুই রাজ্যেই সরাসরি লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গেই। তবে সেখানে জমি কিছুটা মেরামত করা গেলেও গত বারের মতো আসন আসবে না ধরেই নিয়েছে বিজেপি। গোবলয়ের অন্য রাজ্যেও একই পরিস্থিতি।
কালকের ভোট হয়ে যাওয়ার পরে বাকি থাকবে আর দু’টি দফার ভোট। ৫৪৩টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকবে আর ১১৮টি কেন্দ্রের নির্বাচন। দিল্লি ও চণ্ডীগড়ের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে মোট ১০ রাজ্যে ভোট বাকি থাকবে। তার প্রচারও শেষ হয়ে যাবে ১২ দিনের মাথায়। গোটা ভোট সম্পন্ন হবে হাতে গুনে ঠিক দুই সপ্তাহে। অথচ এখনও পর্যন্ত আগের মতো ঝড় দেখা যাচ্ছে না কোথাও। নরেন্দ্র মোদীরা অবশ্য বলছেন, আগের থেকেও বেশি ঝড় দেখছেন। আর রাহুল গাঁধীদের মত, ২৩ মে নরেন্দ্র মোদীর বিদায় নিশ্চিত।