Lok Sabha Election 2019

‘৫৬’-র হাওয়ায় খেলা কি ঘোরাতে পারবেন অশোক

শ্রীলঙ্কায় বোমা ফাটিয়ে কত লোককে মেরে ফেলেছে দেখেছেন? নরেন্দ্র মোদী থাকলে পারত? ঘরে ঢুকে পাল্টা মেরে আসতেন। দেবীলালের গলায় ঝাঁজ বাড়তে থাকে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

জোধপুর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৯
Share:

—ফাইল চিত্র।

আর কোনও প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন, যিনি পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন?

Advertisement

তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রি পেরিয়েছে। নাকে-মুখে ঢুকে পড়া রাজস্থানের শুকনো, গনগনে হাওয়ায় মরু-রাজ্যের চেনা রুক্ষতা। দেবীলাল সিংহের ভটভটি চেপে অশোক গহলৌতের জনসভার সাক্ষী হতে চলেছি। ভেবেছিলাম, গল্প জমালে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর নিজের শহরে তাঁর প্রশংসা শোনা যাবে। কিন্তু দেবীলালের দেশপ্রেমের পারদ জোধপুরের গরমের মতোই তুঙ্গমুখী।

শ্রীলঙ্কায় বোমা ফাটিয়ে কত লোককে মেরে ফেলেছে দেখেছেন? নরেন্দ্র মোদী থাকলে পারত? ঘরে ঢুকে পাল্টা মেরে আসতেন। দেবীলালের গলায় ঝাঁজ বাড়তে থাকে।

Advertisement

কংগ্রেসের সদ্য দখলে আসা তিন রাজ্যের সফরে বেরিয়ে, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ হয়ে রাজস্থানে ঢুকতেই, ঘন দুধের চায়ের সঙ্গে এই ‘কড়া’ দেশপ্রেমের স্বাদ মিলতে শুরু করেছে। হাজার হোক, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী রাজ্য। রক্তে রাজপুতদের বীরত্ব। রাজস্থানের শেখাওয়াতি এলাকার প্রতি ঘরের প্রায় সব ঘরের কেউ না কেউ সেনা বা আধাসেনায়। এ রাজ্যে দেশপ্রেমের সুর বরাবরই চড়ায় বাঁধা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নরেন্দ্র মোদী এ রাজ্যে যতবার এসেছেন, ছাতি ঠুকে একটা কথা নিয়ম করে বলেছেন। ‘ইয়ে দেশ ঝুকনে নেহি দুঙ্গা’। জোধপুরে বিজেপির হোর্ডিং-ব্যানারে মস্ত হরফে নরেন্দ্র মোদীর ছাতির মাপ-- ‘৫৬’। দেবীলালের অটোর পিছনেও ’৫৬ ইঞ্চ কা ছাতি হ্যায়, সর উঠা কে জিনা হ্যায়’।

২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিজেপি রাজস্থানে ২৫-এ ২৫টি আসন জিতেছিল। কিন্তু এবারের লোকসভা ভোটের মাত্র চার মাস আগে বিধানসভার অর্ধেক আসন জিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে নন। বিজেপির অন্য কোনও নেতা নন। দলের প্রার্থীরা তো ননই। বিজেপি রাজস্থানে ভোট লড়ছে এক ও একমাত্র নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর ‘রাষ্ট্রবাদ’-কে সামনে রেখে।

বিধানসভা ভোটের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে অশোক চাষিদের ঋণ মকুবে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু সেই ‘জয় কিষাণ’ স্লোগান ছাপিয়ে বিজেপির জনসভা থেকে বালাকোটে বায়ুসেনার হানা, মহাকাশে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দামামা বাজিয়ে ‘জয় জওয়ান, জয় বিজ্ঞান’ স্লোগান উঠছে। তাতে গলা মেলানোয় গরিব-ধনী, শিক্ষিত-অল্পশিক্ষিতের ফারাক থাকছে না।

জোধপুর রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর এলাকা। শহরের মধ্যেই সর্দারপুরার বিধায়ক তিনি। গহলৌতের কথায়, ‘‘আমি তো জোধপুরের প্রতিটি পরিবারের সদস্য। জোধপুরেই আমার রাজনীতির শিক্ষা। এখানে যা শিখেছি, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তা কাজে লেগেছে।’’ রাজস্থানে বিজেপির চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক ব্রাহ্মণ-বৈশ্য-রাজপুত-জাঠেরাও বলছেন, তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসা গহলৌত ভাল কাজ করছেন। জোধপুরকে তিনি‌ই ঢেলে সাজিয়েছেন।

জোধপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে এবার কংগ্রেস প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী-পুত্র বৈভব গহলৌত। অন্য কোনও রাজ্য হলে বৈভবের হাসতে হাসতে জেতার কথা। কিন্তু ওই যে! মেবারের উদয়পুর থেকে মারওয়াড় অঞ্চলের জোধপুর—রাজপুতানার হাওয়ায় নরেন্দ্র মোদীর ‘বীরত্বের গল্প’। পাকিস্তানকে ঘরে ঢুকে ‘মোদীই’ মেরে এসেছেন। চিন ডোকলাম দিয়ে দেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেছিল। ‘মোদী’ আটকে দিয়েছেন। সীমান্তে পাকিস্তান বেগড়বাই করলেই ‘মোদী’ ও দিকে গোলাগুলি ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছেন। গোটা দুনিয়া এখন ‘মোদীর সাহস’-এর প্রশংসা করছে। কংগ্রেসের নেতারা মোদীর সেনার নামে ভোট চাওয়ার নিন্দা করছেন বটে। কিন্তু রাজপুতানার রাষ্ট্রবাদের সামনে তা ধোপে টিকলে তো! ফলে কংগ্রেসের নেতারাও ২৫টির মধ্যে ৮-১০টির বেশি আসন মিলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত।

মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের সামনে এখন রাজস্থানে জোড়া চ্যালেঞ্জ। এক, রাজস্থানের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের দিকে খেলা ঘোরানো। দুই, নিজের ঘরের মাঠে ছেলেকে জিতিয়ে আনা। পারবেন গহলৌত?

অশোকের বাবা ছিলেন রাজস্থানের বিখ্যাত জাদুকর বাবু লক্ষ্মণ সিংহ দক্ষ। গোটা দেশে ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াতেন। বাবার সঙ্গে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ঘুরতেন অশোকও। নিজেও ম্যাজিক দেখাতেন। বাবার মৃত্যুর পর সব ছেড়েছুড়ে রাজনীতি। তবে রাজীব গাঁধীর পাল্লায় পড়ে দু’একবার ছোট্ট রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে ম্যাজিক দেখাতে হয়েছিল বলে শোনা যায়।

জাদুকর অশোকের সেরা ম্যাজিক ছিল জ্বলন্ত মোমবাতিকে হাতের কেরামতিতে ফুলের তোড়ায় বদলে ফেলা। এবার রাজস্থানে ‘পদ্মফুল’ মুছে অশোক ‘হাত’-এর জাদু দেখাবেন, এই আশাতেই রয়েছে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন