প্রয়াতকে নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন সংগ্রহশালায়

আশপাশের দেওয়াল জুড়ে রাজীব গাঁধীর হাসি মুখের ছবি। তাঁর ব্যবহার করা পেন-পেনসিল, সানগ্লাস। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর বাসভবন ছিল এক নম্বর সফদরজঙ্গ রোডের বাড়ি। সে সময় এই ঘরটিতেই সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে থাকতেন রাজীব। তখন তিনি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলট, ক্যাপ্টেন রাজীব গাঁধী।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

সেই পোশাক: সফদরজং রোডের সংগ্রহশালায়। নিজস্ব চিত্র

সেই সাদা রঙের স্নিকার্স। সাদা মোজা জোড়াও রয়েছে। তার উপরেই ঝুলছে রক্তমাখা পাজামার এক টুকরো, শতচ্ছিন্ন অংশ।

Advertisement

কাচ দিয়ে ঘেরা জায়গাটার সামনে দাঁড়িয়ে আজ দুপুরে ছেলেমেয়েকে তাদের বাবা বলছিলেন, শ্রীপেরুমবুদুরে বোমা বিস্ফোরণের পর এই জুতোটা দেখেই দেহ চিহ্নিত করা হয়েছিল। পাজামাটা দেখে বুঝতেই পারছ, শরীরের কী অবস্থা হয়েছিল!

আশপাশের দেওয়াল জুড়ে রাজীব গাঁধীর হাসি মুখের ছবি। তাঁর ব্যবহার করা পেন-পেনসিল, সানগ্লাস। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর বাসভবন ছিল এক নম্বর সফদরজঙ্গ রোডের বাড়ি। সে সময় এই ঘরটিতেই সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কাকে নিয়ে থাকতেন রাজীব। তখন তিনি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের পাইলট, ক্যাপ্টেন রাজীব গাঁধী।

Advertisement

এখন সেই ঘরের দেওয়ালে রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে সাইকেলে রাজীবের ঘুরতে বেড়ানোর ছবি। কোনও দেওয়ালে রাজীবেরই ক্যামেরাবন্দি পুত্র-কন্যার ছেলেবেলা। তা দেখতে দেখতে আচমকা এক কোণায় রক্তমাখা, ছিন্নভিন্ন পাজামা দেখে এখনও থমকে দাঁড়ান ‘ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল’-এ আসা গোটা দেশের মানুষ। স্নিকার্স-মোজা আর শতচ্ছিন্ন পাজামা ভুলিয়ে দেয় মোবাইলে ছবি
তোলার অভ্যাসও।

স্ত্রী-ছেলে-মেয়েকে রাজীব গাঁধী সংগ্রহশালা ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতেই ছত্তীসগঢ় থেকে আসা সুশীল কুমার বলছিলেন, ‘‘জঙ্গি-হামলায় প্রাণ দেওয়া মানুষটাকে নিয়ে আবার রাজনীতি শুরু হয়েছে কেন বুঝতে পারছি না।’’ দেওয়ালে ফ্রেমবন্দি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সকে পাঠানো রাজীব গাঁধীর পদত্যাগপত্রে তখন তাঁর নজর। মায়ের মৃত্যুর পর রাজনীতিতে নামার জন্য অবিলম্বে পদত্যাগ করতে চাওয়া রাজীব ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের সিএমডি-কে ৬ হাজার টাকার চেক-ও পাঠিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, তিনি নিয়ম মাফিক নোটিস পিরিয়ডের ৩০ দিন কাজ করতে পারবেন না। তার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তা দেখে সুশীলের প্রশ্ন, ‘‘এই মানুষটাই কি দুর্নীতি করতে পারেন? নরেন্দ্র মোদী ভ্রষ্টাচারী নাম্বার ওয়ান বলেছেন ওঁকে। কী জানি, বুঝতে পারি না।’’

জাতীয় রাজনীতিতে রাজীব গাঁধীকে ঘিরে নতুন বিতর্কে দিল্লির এক নম্বর সফদরজঙ্গ রোডের ভিড়ে কোনও হেরফের হয়নি। কাজের দিনের দুপুরে মূলত ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, কেরল, তামিলনাড়ু থেকে দিল্লিতে বেড়াতে আসা মানুষের ভিড়। ১৯৮৫ থেকে সংগ্রহশালার কর্মী রূপরাজ সিংহের মতে, দিনে অন্তত ছ’সাত হাজার মানুষ আসেন ইন্দিরা-রাজীবের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে। শীতের সময়, ছুটির দিনে লম্বা লাইন পড়ে।

রাজস্থান থেকে আসা হামিদ আনসার মহম্মদকে প্রশ্নটা করা গেল। রাজীবের মানসম্মান নিয়ে ভোটে লড়ার জন্য নরেন্দ্র মোদীর চ্যালেঞ্জের কথা শুনেছেন? হামিদের গলায় বিরক্তি, ‘‘মৃত মানুষকে নিয়ে টানাটানি করা কী রকম রাজনীতি জানি না। ওঁর শরীরের মতো মানসম্মানটাও বোধহয় ঝাঁঝরা করে দিতে চায়।’’

সফদরজঙ্গ রোডের এই বাড়িতেই ইন্দিরা-হত্যা। তৈরি হয় ‘ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল’। রাজীবের হত্যার পর, তাঁর দু’টি ঘর নিয়ে রাজীব-সংগ্রহশালা সাজানো হয়। তার কোথাও দুন স্কুল থেকে ১১ বছরের ছোট্ট রাজীবের কাঁচা হাতের লেখায় ‘মাম্মি’-কে পাঠানো চিঠি। স্কুলের প্রতিষ্ঠা দিবসে আসার আবদার। তারপরে ছুটির সময় দিল্লিতে থাকার কথা। সেইসঙ্গে দেহরাদূন থেকে বাসে চেপে দিল্লিতে যাওয়ার ছবি।

বিজেপি রাজীব-জমানার দিকে আঙুল তুললে কংগ্রেস এখনও জবাব দেয়—এ দেশে কম্পিউটার এসেছিল রাজীবের হাত ধরেই। এই ঘরেই রাখা রাজীবের ব্যবহার করা কম্পিউটার। তার সামনে দাঁড়িয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করা মালয়ালি তরুণী কে জে শ্রীরূপা বলছিলেন, ‘‘দেখলে মনে হয়, ভদ্রলোকের দূরদৃষ্টি ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো ওঁর জমানায় কত কিছু খারাপ হয়েছে বলছেন। এত দিন পরে পিছনে ফিরে তাকানোর কী মানে? রাজনীতির বিতর্ক তো হওয়া উচিত আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন