নিজস্বী: অনুবাদক জ্যোতির সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা। —নিজস্ব চিত্র।
ইংরেজি যাচ্ছে এক দিকে। মালয়ালম চলছে অন্য দিকে! ঠোক্কর খেয়ে শেষমেশ তাঁর দ্বিতীয় নির্বাচনী রণক্ষেত্রে অনুবাদকে ভরসা পেলেন রাহুল গাঁধী। সঙ্গে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও।
দক্ষিণ ভারতে বক্তৃতা করতে গিয়ে দেশের অন্য প্রান্ত থেকে আসা নেতাদের সমস্যা চিরকালের। সাধারণত দলের কোনও স্থানীয় নেতাই ভাষান্তরের দায়িত্ব নেন। কেরলে সেই তর্জমা নিয়েই অতীতে বিভ্রাটের মুখে পড়তে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটকে। তাঁরা দু’জনেই যা বলছিলেন, তার সঙ্গে বাড়তি কথা জুড়ে দিয়েছিলেন তর্জমাকারীরা। তাতে তৈরি হয়েছিল বিভ্রান্তি। ওয়েনাড লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার পরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলের অভিজ্ঞতা আর একটু অন্য রকম। কেরল সফরে গিয়ে প্রথম যে স্থানীয় নেতা অনুবাদের জন্য মাইক হাতে নিয়েছিলেন, তিনি কিছুতেই মূল বক্তার সঙ্গে তাল রাখতে পারছিলেন না। এর পরে শবরীমালার জেলা পাতানামতিট্টায় বিপত্তি এড়াতে তর্জমাকারীর ভূমিকায় রাখা হয়েছিল রাজ্যসভার প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েনকে। কিন্তু তিনি ডেকে এনেছিলেন আরও বেশি বিপত্তি!
রাহুল যখন এক একটা ছোট্ট ইংরেজি বাক্য বলে থামছিলেন, কুরিয়েন প্রথম চেষ্টায় শুনতেই পাচ্ছিলেন না। তাঁর কানে কানে আবার বলে দিতে হচ্ছিল রাহুলকে! এক সময় মাইক পাশে সরিয়ে রেখে রাহুলের আরও কাছে এসে কান পাতছিলেন কুরিয়েন! কিন্তু অনুবাদ জনতার কানে পৌঁছচ্ছে না দেখে রাহুলই মাইক এনে দেন তাঁর হাতে। সেই ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। রসিকতা করেই কংগ্রেস সভাপতি কেরলে দলের নেতাদের কাছে বলেছিলেন, ‘‘আমাকেই মালয়ালম শিখতে হবে দেখছি!’’ এর পরেই টনক নড়ে বাকি সকলের এবং আবির্ভাব হয় জ্যোতিরাধিকা বিজয়কুমারের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পেশায় আইনজীবী জ্যোতিই বাকি যাত্রায় রাহুল ও পরে প্রিয়ঙ্কার ত্রাতা হয়ে দেখা দিয়েছেন!
রাহুলের তিনটি এবং ওয়েনাডে প্রিয়ঙ্কার প্রচারে তর্জমার দায়িত্ব পালন করেছেন জ্যোতিই। কোনও হোঁচট ছাড়াই। তাঁর মতে, ‘‘রাহুলজি এবং প্রিয়ঙ্কাজি, দু’জনেই ছোট ছোট করে সহজ কথা বলেন। তাঁদের বক্তৃতা অনুবাদ নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথাই নয়! আমাকে তো বেশি কিছু করতেই হয়নি।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওয়েনাডে এ বারই প্রথম এলেন এবং রাজনৈতিক বক্তৃতা করলেন প্রিয়ঙ্কাজি। সেই সময়ে তাঁকে সাহায্য করার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যিই অভিভূত!’’ জ্যোতি যে তাঁদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েই রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা মঞ্চের বাইরে ওই তরুণীর সঙ্গে ছবি তুলেছেন। যাকে তাঁর জীবনের ‘সব চেয়ে স্মরণীয় উপহার’ বলে মনে করছেন জ্যোতি।
জ্যোতির বাবা বিজয়কুমার কেরলে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা। ওয়েনাডে রাহুলের প্রচারের সময়ে সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা নন্দকিশোর হরিকুমারের কথায়, ‘‘ওঁর বাবার সূত্রেই আমরা জ্যোতির সন্ধান পেয়েছিলাম। ভাগ্যিস পেয়েছিলাম! ওয়েনাড থেকে রাহুলজি সাংসদ হওয়ার পরে তাঁর এবং প্রিয়ঙ্কাজি’র আরও প্রয়োজনে জ্যোতিকে লাগবে।’’