লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা আগে মুলায়ম সিংহ যাদব ও অখিলেশকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে দিল সিবিআই।
বুথ ফেরত সমীক্ষা না মিললে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে হঠানোর জন্য বিরোধী দলের নেতারা মঙ্গলবার থেকেই দিল্লিতে সলতে পাকানো শুরু করেছেন। বিরোধীদের বৈঠকের ঠিক আগে আজ সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি বিরোধী জোটে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা? সরকার গড়তে সংখ্যা কম পড়লে সমাজবাদী পার্টির শীর্ষনেতৃত্বকে আগাম বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে রাখা?
১২ বছর ধরে মুলায়ম-অখিলেশদের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলা চলছে। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে আজ হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, মুলায়ম-অখিলেশের বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলেনি। কোনও অপরাধমূলক কাজেরও প্রমাণ মেলেনি। সিবিআইয়ের যুক্তি, ২০১৩–র অগস্টেই এই তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভিজিল্যান কমিশনকেও তা জানানো হয়েছে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ না পাওয়ায় ফৌজদারি মামলা বা এফআইআর করা হয়নি। মুলায়মের বিরুদ্ধে ২.৯৯ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি ও যাদব পরিবারের বিরুদ্ধে ৯.২২ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তির অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৩-য় যে সম্পত্তির মূল্য ছিল ২৪ কোটি টাকা। কিন্তু সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মত দিয়েছেন, মুলায়ম-অখিলেশের সম্পত্তি একসঙ্গে যোগ করে দেখাটাও ভুল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সিবিআইয়ের ‘ক্লিনচিট’-এর পরে এসপি নেতা রামগোপাল যাদব আজ বলেন, ‘‘সিবিআই তো আগেই ক্লিনচিট দিয়েছিল। মাঝখানে হেনস্থা করার জন্য সিবিআই হানা দিচ্ছিল। আজ সব সাফ হয়ে গেল।’’ এ বারের ভোটে অখিলেশ মায়াবতীর সঙ্গে সমঝোতা করলেও, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়নি। যদিও অখিলেশ কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন ছিলেন। আবার রাহুল গাঁধী-সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে মহাজোট প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু বুথফেরত সমীক্ষার পরে কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেন অখিলেশ। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিজেপি, কংগ্রেস ভোটের সময় আরোপ, পাল্টা আরোপের রাজনীতি করেছে। সিবিআইয়ের ‘ক্লিনচিট’-এর পরে প্রশ্ন উঠেছে, যদি ২০১৩-তেই তদন্ত শেষ হয়ে থাকে, তা হলে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের ঠিক আগে ‘ক্লিনচিট’-এ কথা সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হল কেন?
মুলায়ম-অখিলেশের বিরুদ্ধে বেআইনি সম্পত্তির অভিযোগ তুলে যিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন, সেই বিশ্বনাথ চতুর্বেদী কংগ্রেস শিবিরের লোক বলে পরিচিত। মুলায়ম, অখিলেশের পাশাপাশি মুলায়মের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী-র ছেলে প্রতীক যাদব, অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন তিনি। মুলায়ম তখনই অভিযোগ তুলেছিলেন, এ সব তাঁদের ভাবমূর্তিতে কালি ছেটানোর চেষ্টা।
২০০৫-এর সেই জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে ২০০৭-এ সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে এই অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেয়। মুলায়মেরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করলেও ২০১২-য় তা খারিজ হয়ে যায়। তবে ডিম্পলের আবেদনে সাড়া দিয়ে তদন্ত থেকে তাঁর নাম সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। কারণ, ডিম্পল কোনও সরকারি পদে ছিলেন না। মার্চে বিশ্বনাথ ফের সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ তোলেন, সিবিআই আদালতকে তদন্তের বিষয়ে কিছুই জানায়নি। তার ভিত্তিতেই সিবিআইয়ের কাছে তদন্তের রিপোর্ট চায় সুপ্রিম কোর্ট। তখনও মুলায়ম অভিযোগ তুলেছিলেন, ভোটের জন্য ফের পুরনো বিষয় খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। সিবিআইয়ের যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্ট চেয়েছিল বলেই আজ হলফনামা পেশ করা হয়েছে।