২০১৪-র ভোটে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসের আক্রমণকে নিজের অস্ত্র করে তুলেছিলেন মোদী। ছবি: এপি।
পরিবারতন্ত্র থেকে হিন্দু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ, ভোটের আগে একে একে সব ক’টি অস্ত্রই বার করে আনছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে নরেন্দ্র মোদী ও ওড়িশায় অমিত শাহ, দু’জনেই আজ এক সুরে ‘হিন্দু সন্ত্রাসের’ কথা বলার জন্য কংগ্রেসকে নিশানা করলেন। রাহুল গাঁধী কেন অমেঠী ছাড়াও কেরলের ওয়েনাড থেকে লড়ছেন, তা নিয়ে নিজস্ব তত্ত্ব তুলে ধরতেই আজ হিন্দু সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টানেন মোদী।
ওয়র্ধার প্রচারসভায় মোদী এ দিন বলেন, ‘‘হিন্দু সন্ত্রাসের কথা বলে কংগ্রেস দেশের কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় হিন্দুকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছে। আপনারাই বলুন হিন্দু সন্ত্রাস কথাটা শুনে আপনারা গভীর আঘাত পেয়েছিলেন কি না?’’ মোদীর দাবি, ইংরেজরাও কখনও মনে করেনি হিন্দুরা হিংস্র হতে পারে। এ দেশের সংস্কৃতির পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে এমন একটি ঘটনাও কেউ দেখাতে পারবে না। এর সঙ্গেই মোদীর হুঙ্কার, ‘‘শান্তিপূর্ণ হিন্দুদের গায়ে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার মতো পাপ করেছে কংগ্রেস। মানুষ ওদের শাস্তি দেবেই।’’ রাহুল গাঁধীর নাম না করে মোদীর দাবি, হিন্দুপ্রধান কোনও এলাকা থেকে কংগ্রেসের নেতাদের জেতার জেতার সম্ভাবনা নেই। অনেকে তো ভোটেই লড়ছেন না।’’ ইঙ্গিতটি স্পষ্ট, তিন বার জেতার পরেও অমেঠীতে আর জেতার আশা নেই বুঝে কেরল থেকে লড়তে হচ্ছে রাহুলকে। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনগণনায় পাওয়া হিসেব বলছে, কেরলের ওয়েনাড জেলায় হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, ৪৯.৪৮ শতাংশ। সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলিম ও খ্রিস্টান যথাক্রমে ২৮.৬৫ এবং ২১.৩৪ শতাংশ। কংগ্রেসের দাবি, মোদী ওয়েনাডের সংস্কৃতিক ঐতিহ্য তথা গোটা দক্ষিণ ভারতকে অপমান করেছেন। ক্ষমা চাইতে হবে তাঁকে।
২০১৪-র ভোটে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসের আক্রমণকে নিজের অস্ত্র করে তুলেছিলেন মোদী। ফায়দা তুলেছিলেন সনিয়া গাঁধীর ‘মওত কা সওদাগর’ বা মণিশঙ্কর আইয়ারের ‘নীচ’ মন্তব্য থেকে। এ বার ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে কংগ্রেস প্রচার চালাচ্ছে। ‘শৌচালয়ের চৌকিদার’ বলেছে তাঁকে। আজ মোদী বলেন, ‘‘এটাকে আভূষণ হিসেবে গ্রহণ করছি।’’ ভোটমঞ্চ থেকেই এ দিন তিনি ইএমআইস্যাট উপগ্রহ সফল ভাবে কক্ষপথে পাঠানোর জন্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ দিন অন্ধ্রপ্রদেশের ভোটসভায় মোদীর নিশানা ছিলেন এনডিএ-ছুট চন্দ্রবাবু নায়ডু। দু’দিন আগে ‘ইউ-টার্ন বাবু’ বলেছেন তাঁকে। আজ তাঁর রাজ্যে রাজামুন্দ্রীর সভায় মোদী তাঁকে বললেন ‘স্টিকার বাবু’। তুলনা করলেন ‘বাহুবলী’ ছবির খল চরিত্র বল্লালদেবের সঙ্গে। বললেন, ‘‘চন্দ্রবাবুর সরকারই রাজ্যে পোলাভরম সেচ প্রকল্প রূপায়ণে দেরি করাচ্ছে। ইউ-টার্ন বাবুর কাছে ওটা যেন একটা এটিএম। যখন খুশি টাকা তোলো আর দুর্নীতি করো।’’ ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি জানিয়েছিলেন, ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার টাকা নেই সরকারের। সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদীর দাবি, গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও কর বাড়ায়নি। আবার উন্নয়নের কাজেও ঢিল দেয়নি। অথচ আগের (ইউপিএ) সরকার বলত, রাফাল কেনারও নাকি টাকা নেই!’’ ওই সভাতেই মোদীর প্রশ্ন, কাশ্মীরের জন্য আলাদা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দাবি তোলা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাকে কংগ্রেস ও বিরোধীদের মহাজোট সমর্থন করে কি না সেটা স্পষ্ট করে জানাক।