দেশের চৌকিদারি দশের দায়

তিনি একা নন। দেশের সকলেই চৌকিদার। নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্র। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯ ০২:৫২
Share:

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

তিনি একা নন। দেশের সকলেই চৌকিদার। নরেন্দ্র মোদীর নতুন মন্ত্র।

Advertisement

নিজেকে দেশের চৌকিদার বলে এত দিন প্রচার করে এসেছেন মোদী। ইদানীং রাফাল নিয়ে রাহুল গাঁধী লাগাতার ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে স্লোগান তুলছেন। সেটা সামাল দিতেই নতুন প্রচারে নামতে হল মোদীকে। ভোটারদের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘শপথ করুন আপনিও চৌকিদার।’’

লোকসভা ভোটের প্রচারের ঝাঁঝ যত বাড়ছে, ততই প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। বিজেপি বুঝতে পারছে, রাফাল নিয়ে জল আরও ঘোলা হওয়ায় ‘চৌকিদার’ মোদীকে নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ আরও বাড়বে। তাই ভোট প্রচারের একেবারে প্রথম ধাপেই আনা হল পাল্টা স্লোগান। বাজারে এল ভিডিয়ো, যেখানে মোদী নিজেকে যেমন ফের ‘চৌকিদার’ বলে দাবি করেছেন, তেমনই যাঁরাই দুর্নীতি, গরিবি, সন্ত্রাস ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে সরব, তাঁদের প্রত্যেককেই তাঁর মতো ‘চৌকিদার’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। ভিডিয়োতে সরকারের সাফল্যের ফিরিস্তির পাশাপাশি ৩১ মার্চ ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ নামে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দেখার জন্যও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কংগ্রেসের মন্তব্য, ‘চৌকিদারি’তে ব্যর্থ হয়ে এখন নিজের দায়িত্ব দেশবাসীর ঘাড়ে তুলে দিতে চাইছেন মোদী। রাহুলের অভিযোগ, মোদীর ভিতরের অপরাধবোধকেই সামনে আনছে এই নতুন প্রচার। নীরব মোদী, অনিল অম্বানী, বিজয় মাল্যের মতো ঋণখেলাপিদের সঙ্গে মোদীর ছবি দিয়ে তাঁর টুইট, ‘‘আপনি কি আজ অপরাধবোধে ভুগছেন?’’

Advertisement

‘অপরাধবোধ’ কিসের? বিরোধীদের বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনে নিজেকে ‘চৌকিদার’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নিজে দুর্নীতি করবেন না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবেন না। কিন্তু তাঁর শাসনকালেই বিজয় মাল্য থেকে ললিত মোদী, নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীর মতো ঋণখেলাপিরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পলাতকেরা সকলেই শাসক শিবিরের ঘনিষ্ঠ। তাঁদের বিদেশে পালাতে সাহায্য করেছে চৌকিদারের দলই। আজ উত্তরাখণ্ডের প্রচারসভায় রাহুল গাঁধী টিপ্পনী কাটেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি কেন জানি না মোদী হয়!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বস্তুত ‘চৌকিদার’ নিয়ে প্রচারে যাওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিমত ছিল বিজেপিতেও। দলীয় সূত্র বলছে, ঝুঁকি নিয়েই প্রচারে নামেন মোদী। এটা বুমেরাং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দলেই। তবে দলের একাংশের এ-ও দাবি, রাহুলের ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না বলে দলীয় সমীক্ষায় প্রকাশ। তাই ঝুঁকি সত্ত্বেও ‘চৌকিদার’ প্রশ্নেই প্রথম প্রচার ভিডিয়ো প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয় দল। সূত্র বলছে, প্রথমে ক’দিন জল মাপবে দল। দেখা হবে, মানুষ কী ভাবে ভিডিয়োটিকে নিচ্ছেন। তেমন বুঝলে ৩১ মার্চের পরে অন্য ভিডিয়ো আনা হবে। তার আগে ১৮ই মোদীর জীবনীচিত্রের দ্বিতীয় পোস্টার প্রকাশ করবেন অমিত শাহ। তবে আজ দিনের শেষে বিজেপির দাবি, তাদের প্রচার ‘হিট’ করে গিয়েছে। ভিডিয়োটি টুইটারে সর্বাধিক জনপ্রিয় বিষয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ফলে আপাতত হাসি বিজেপি নেতাদের মুখে।

যদিও জনমাধ্যমে আম আদমির তরফে তির্যক মন্তব্যেরও অভাব ঘটেনি। আর কংগ্রেসের বক্তব্য, ‘‘মানুষ বোকা নয়। প্রত্যেকেই জানে আপনি কেবলমাত্র চোরেদেরই চৌকিদার। আপনি স্যুট-বুটের চৌকিদার।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতে, ‘‘চৌকিদার নয়! দেশের মানুষের এখন একটাই কথা, ‘ম্যায় ভি বেরোজগার হুঁ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন