ভোট দেওয়ার আগে মায়ের পায়ে মোদী

হীরাবেন তাঁর বাসায় ফের সুনসান। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে গোটা দেশে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেল মাতা-পুত্র সংবাদ! মেরে পাস মা হ্যায়!

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৩
Share:

মায়ের আশীর্বাদ: চলছে তৃতীয় দফার নির্বাচন। ভোট দিতে যাওয়ার আগে মা হীরাবেন মোদীর আশীর্বাদ নিতে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার গাঁধীনগরে। পিটিআই

আগে ঢুকল ট্রাইপড। পিছন পিছন সাংবাদিক, আলোকচিত্রীরা। হইচই শুনে নবতিপর হীরাবেন টের পেলেন, নির্ঘাৎ ছেলে আসছে!

Advertisement

আজ ভোরে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে গাঁধীনগরে নিজের বুথে যাওয়ার আগে মায়ের কাছে আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভিডিয়ো ক্যামেরা এবং ফ্ল্যাশের ঝলকানির মধ্যে মাকে প্রণাম করলেন। মিষ্টি মুখে তুলে দিলেন। পূর্ব পরিকল্পনামাফিক এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে একটি শাল এগিয়ে দিলেন মায়ের হাতে। মা সেটি ধরিয়ে দিলেন পুত্রকে। সঙ্গে নারকেল আর মিষ্টি আর পাঁচশোটি টাকা। ছেলে প্রণাম করলেন। ক্যামেরার সামনে মাপা কুড়ি মিনিট কাটিয়ে রওনা দিলেন বুথে।

হীরাবেন তাঁর বাসায় ফের সুনসান। কিন্তু সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে গোটা দেশে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেল মাতা-পুত্র সংবাদ! মেরে পাস মা হ্যায়!

Advertisement

অমিত শাহের ভোট

ভারতমাতা, গোমাতা, আপন মাতা— বর্তমান জমানায় ভারতীয় রাজনীতিতে মাতৃবন্দনার বান ডেকেছে। কখনও বিদেশের মাটিতে ‘দুখিনী’ মায়ের কথা বলে চোখের জল ফেলেছেন মোদী, কখনও নোট বাতিলের পরে এটিএমের লাইনে দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রীর মায়ের ছবি আনা হয়েছে প্রচারে। বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে মোদী মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও ফলাও করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার ছবি। সম্প্রতি কানহাইয়া কুমার একটি অনুষ্ঠানে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে মোদী এ বার বলবেন, রাফাল নিয়ে বড় চাপের মধ্যে রয়েছি। মা চলো, এ বার সীমান্তটাও তোমায় একটু ঘুরে আসতে হবে!’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মাতৃভক্তি নিয়ে কেন এত প্রচার? ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান রীতু সেনচৌধুরীর কথায়, ‘‘মাকে বড় করে দেখানোর মধ্যে একটা নির্দিষ্ট মনস্তত্ত্ব কাজ করে। এ ক্ষেত্রে মা কোনও ব্যক্তি নন। তিনি এমনই এক নারী যার মধ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা, ত্যাগ, ধৈর্য আর সহনশীলতা রয়েছে। একে পুজো করার একটি সুবিধা হচ্ছে, এতে নারীর একটা উল্টো দিকও তৈরি করা যাচ্ছে। আপাত ভাবে যে নারীর এই গুণগুলি নেই, তাকে তুমি শোষণ, অপমান, অবহেলা করতেই পার। মোদীর মাতৃবন্দনার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীর হাল তো দেখাই যাচ্ছে।’’ সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করাচ্ছেন, মানুষকে রাজনৈতিক ভাবে উত্তেজিত করতেও মাতৃমূর্তির জুড়ি নেই। গোরক্ষকদের গত পাঁচ বছরের তাণ্ডব বুঝিয়ে দিয়েছে, ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরিতেও তা অদ্বিতীয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উনিশ শতকের গোড়ায় কিরণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ভারতমাতা’ নাটকের হাত ধরে ভারতের রাজনীতিতে মাতৃমূর্তির অনুপ্রবেশ। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর কথায়, ‘‘জয় ভবানী থেকে বন্দে মাতরম— ভারতে দীর্ঘকাল ঘরেই লড়াইয়ের প্রশ্নে মাতৃতন্ত্রের উপাসনা। কৃষিপ্রধান ভারতে মাটিকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করার রেওয়াজও রয়েছে। তবে মোদী জমানায় হিন্দুত্বের মধ্যে সামরিক চেতনা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাই মাতৃপূজার প্রয়োজন পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন