গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঝুলিতে নেই কোটি কোটি টাকার অনুদান। প্রচারে নেই গ্ল্যামারের ছটা। তা সত্ত্বেও রাজনীতিতে নাম লেখান কিছু মানুষ। সাহস দেখান রাঘব বোয়ালদের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ানোর। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব কমজনই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন। যে কারণে স্বাধীনতার পর থেকে ৪০ হাজারের বেশি নির্দল প্রার্থী ভোটে দাঁড়ালেও, তাঁদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন। গত কয়েকবছরে সংখ্যাটা আরও কমে এসেছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্প্রতি নির্দল প্রার্থীদের নিয়ে নথিপত্র প্রকাশ করেছেজাতীয় নির্বাচন কমিশন। তা থেকেই এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৫১-৫২ সালে দেশে প্রথমবার লোকসভা নির্বাচন হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৯৬২ জন নির্দল প্রার্থী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে তাঁদের মধ্যে মাত্র ২২২ জনই জয়ী হয় সংসদে প্রবেশ করার ছাড়পত্র পেয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীর সংখ্যা এক অঙ্ক ছাড়িয়েছে মাত্র ছ’বার। গত কয়েক বছরে তা আরও নিম্নমুখী হয়েছে। গত ১৬টি লোকসভা নির্বাচন মিলিয়ে নির্দল প্রার্থীদের গড় সাফল্যের হার মাত্র ০.৪৯ শতাংশ।
দেশের প্রথম লোকসভা নির্বাচনে ৪৮৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৫৩৩ জন নির্দল প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ৩৭ জন জয়ী হন। ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হন ৪২ জন নির্দল প্রার্থী, যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক।১৯৫৭-র পর থেকে লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্র্রার্থীদের জয়ের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হতে শুরু করে বলে নির্বাচন কমিশনের নথিপত্র ঘেঁটে জানা গিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সালে ২০টি আসনে জয়ী হন নির্দল প্রার্থীরা। ১৯৬৭ সালে সংখ্যাটা ৩৫ ছুঁলেও, ১৯৭১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৪। ১৯৮৯ সালে আরও দু’টি আসন কমে গিয়ে সংখ্যাটা এসে ঠেকে ১২-তে। বাকি দশ লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩ হাজার ২৩৪ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে মহাজোট নয়, কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বললেন কেজরিওয়াল
১৯৯১ সাল থেকেই পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সে বছর ৫ হাজার ৫১৪ জন নির্দল প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জন বিজয়ী হন। নির্দল প্রার্থীদের সফল্যের হারও সে বছর সর্বনিম্ন ছিল, ০.০২ শতাংশ। এই মুহূর্তে উত্তর প্রদেশে ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে। আগে যা ছিল ৮৬টি। হিন্দি বলয়ের ওই রাজ্যে থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩৭ জন নির্দল প্রার্থী সংসদে যেতে পেরেছেন।
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী দেশের যে কোনও নাগরিকই নির্দল প্রার্থী হিসাবে লোকসভা নির্বাচনে লড়তে পারেন। যদিও এ ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। যেমন,
ওই নাগরিককে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। বয়স পঁচিশের কম হলে চলবে না। ভোটার তালিকায় নাম থাকতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে তাঁর হয়ে কাউকে সুপারিশ করতে হবে। কমপক্ষে১০ জনের সমর্থন পেতে হবে নির্দল প্রার্থীকে। ১০ হাজার টাকা জমানত দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ফের তথ্যপ্রমাণ চেয়েও মোদীর কাছে ‘শান্তির সুযোগ’ চাইলেন ইমরান
তবে যে ভাবে নির্দল প্রার্থীদের সাফল্যের হার ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে, সেদিকে তাকিয়ে ১৯৯৯ সালে১৭০ তম আইন কমিশনের তরফে লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁদের যুক্তি ছিল, যদি দিন যাচ্ছে নির্দল প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনই সাফল্য পাচ্ছেন। অথচ তাঁদের মনোনয়ন থেকে নির্বাচনী লড়াই, কম ঝক্কি পোহাতে হয় না। তাই এই প্রথা তুলে দিলেই হয়। পরবর্তী কালে নির্বাচন কমিশনের তরফেও একই দাবি তোলা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
(ভোটের খবর, জোটের খবর, নোটের খবর, লুটের খবর- দেশে যা ঘটছে তার সেরা বাছাই পেতে নজর রাখুন আমাদের দেশ বিভাগে।)