অখিলেশ যাদবের সঙ্গে চন্দ্রবাবু নায়ডু। লখনউয়ে। নিজস্ব চিত্র
আগামিকাল সপ্তম তথা শেষ দফা ভোট হওয়ার আগেই বিজেপি-বিরোধী জোট গড়তে পুরোদস্তুর মাঠে নেমে পড়লেন বিরোধী নেতারা। তাঁদের এক সুতোয় বাঁধতে এগিয়ে এলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। গত কালই দিল্লি এসে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন টিডিপি নেতা। আজ দিল্লিতে রাহুল গাঁধী ছাড়াও তিনি দেখা করেন শরদ পওয়ার, সিপিআইয়ের ডি রাজা ও এলজেডি নেতা শরদ যাদবের
সঙ্গে। এর পর তিনি সোজা উড়ে যান লখনউ। আসন্ন জোট গঠনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন এসপি নেতা অখিলেশ যাদব ও বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর সঙ্গে।
ভোটের ফল ঘোষণা হবে ২৩ মে। কিন্তু আগামিকাল সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জনমত সমীক্ষার ফলাফল আসতে শুরু করবে। যার ভিত্তিতে প্রাথমিক পর্যায়ের তৎপরতা শুরু হয়ে যাবে উভয় শিবিরেই। বিজেপির দাবি, গরিষ্ঠতা পেয়ে ফের সরকার গঠন করবেন নরেন্দ্র মোদী। অন্য দিকে কংগ্রেস সূত্রে দাবি, ‘‘দল একশো আসন তো পাবেই। দেড়শো পেলেও অবাক হব না।’’ এই পরিস্থিতিতে চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো এক জন অ-কংগ্রেসি নেতাকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলির মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি শুরু করে দিলেন রাহুল গাঁধী।
কংগ্রেসের বক্তব্য, দল যদি দেড়শো আসন পায়, সে ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধীকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হবে। যদি ১২০ আসনের কম পায়, সে ক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতেও যে দল রাজি আছে— সেই বার্তা ইতিমধ্যেই পটনায় দিয়ে এসেছেন গুলাম নবি আজাদ। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রয়োজনে আমরা কর্নাটক মডেলে জোট সরকারকে সমর্থন করতে রাজি আছি। প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনও দল থেকে হলে কংগ্রেসের কোনও সমস্যা নেই।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজনৈতিক শিবির বলছে, ওই বার্তা ছিল এনডিএ শরিক নীতীশ কুমারের উদ্দেশ্যে। গুলাম নবি বোঝাতে চান, কংগ্রেসের সঙ্গে থাকলে নীতীশের প্রধানমন্ত্রী বা উপপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে থাকলে তা নেই। সূত্র জানিয়েছে, একই ভাবে চন্দ্রশেখর রাও যাতে বিজেপির দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তার জন্যও উপপ্রধানমন্ত্রী পদের টোপ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
তবে এই মুহূর্তে কংগ্রেসের অন্যতম অস্বস্তি মায়াবতী। ফল বেরোলে কী হবে, তা নিয়ে এখনও ঝেড়ে কাশেননি মায়াবাতী। অখিলেশ যে বিজেপি শিবিরে যাবেন না, সে বিষয়ে নিশ্চিত কংগ্রেস। রাহুল কাল বলেছেন, তাঁর স্থির বিশ্বাস, অখিলেশ ও মায়া কেউই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন না। মুখে রাহুল ও কথা বললেও মায়াকে নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বের। ভোট ঘোষণার পর থেকে রাহুলের সঙ্গে মায়াবতীর সরাসরি কথা হয়নি। উল্টে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস আলাদা করে প্রার্থী দেওয়ায় নিজের ক্ষোভ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন মায়াবতী। তিনি মনে করেন, কংগ্রেস প্রার্থী না দিলে বিরোধী ভোট ভাগীভাগি কম হত। বিজেপির বিরুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা আরও বাড়ত মহাজোটের প্রার্থীদের।
মায়াবতীর এই ক্ষোভ বিলক্ষণ জানেন রাহুল। তাই আজ মায়াবতীর মানভঞ্জনে রাহুলের পরামর্শেই লখনউ যান নায়ডু। অতীতে দিল্লিতে রাহুলের সঙ্গে দেখা করে সোজা কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন চন্দ্রবাবু। কিন্তু এ বার দিল্লি থেকে লখনউয়ের বিমান ধরেন তিনি। অনেকেই বলছেন, তিনি যে সরাসরি রাহুল গাঁধীর বার্তা নিয়ে এসেছেন, তা বোঝাতেই আজকের ওই সফর নায়ডুর।
চন্দ্রবাবুর মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ঘরোয়া ভাবে সক্রিয় সনিয়া গাঁধীও। রাজ্য রাজনীতিতে জগন্মোহন বা কে চন্দ্রশেখর রাওদের মতো যে নেতারা চন্দ্রবাবুর বিরোধী, তাঁদের পাশে পেতে অহমেদ পটেল, পি চিদম্বরমের মতো সাত জন বর্ষীয়ান নেতাকে আলোচনার দায়িত্ব দিয়েছেন সনিয়া। নবীন পট্টনায়েককে বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমল নাথকে। সব মিলিয়ে ক্রমশ তৎপরতা বাড়ছে বিরোধী শিবিরে।
২১ মে থেকে ২৩ মে-র মধ্যে দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির বৈঠক করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন নায়ডু। কিন্তু মমতা থেকে মায়াবতী কেউই সংখ্যা না দেখে দিল্লির বিমান ধরতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিরোধী জোট গঠনের সলতে পাকানোর কাজটি সেরে রাখলেন চন্দ্রবাবু।