—ফাইল চিত্র।
রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএমের সমঝোতার প্রাথমিক সলতে পাকিয়ে রাখলেন রাহুল গাঁধী ও সীতারাম ইয়েচুরি। বিজেপি এবং তৃণমূলের মোকাবিলায় কংগ্রেস সভাপতি এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক যখন একত্রে লড়াইয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছেন, কলকাতায় তখন প্রদেশ কংগ্রেসও জানিয়ে দিল বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হবে না। সূত্রের দাবি, ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনায় রাহুলও জানিয়েছেন, রাজ্য রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেসের উপরে তাঁরা জোর করে মত চাপিয়ে দেবেন না।
সিবিআই-কাণ্ডে মোদী সরকারের বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা কলকাতায় ধর্না শুরু করার পরে তাঁকে ফোন করে সমর্থন জানিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র সোমবার বলেছেন, ‘‘আর্থিক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে রাজ্য কংগ্রেসের আন্দোলন চলবে। রাফাল কেলেঙ্কারির স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে রাজ্য কংগ্রেস যেমন পথে নেমে আন্দোলন করছে, তেমনই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে প্রতারিতদের ন্যায়বিচার পাওয়ার দাবিতেও আমরা সরব থাকব।’’ কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে সিবিআইয়ের জেরা করতে চাওয়া নিয়ে যে এত কাণ্ড, সেই প্রসঙ্গেও সোমেনবাবুর মত, অন্যায় না করে থাকলে রাজীব কুমারের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মুখোমুখি হওয়া উচিত ছিল।
সোমেনবাবুরা যে কথা বলছেন, সেই প্রসঙ্গই এ দিন কংগ্রসের সংসদীয় দফতরে রাহুলের কাছে তোলেন ইয়েচুরি। সূত্রের দাবি, রাহুল তাঁকে বলেন, বিজেপি-বিরোধী ঐক্যের স্বার্থে তিনি তৃণমূল নেত্রীকে বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু বাংলার কংগ্রেসের অবস্থানে তিনি কোনও বাধা দিচ্ছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নার বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে সংসদে রাহুলের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান অধীর চৌধুরী। তাঁকেও সুর নরম করার কথা বলেলনি রাহুল। বরং, ইয়েচুরি-রাহুল বৈঠকের পরে সোমেনবাবুরা ঘোষণা করেছেন, সারদা-সহ অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির তদন্ত দ্রুত শেষ করার দাবিতে কাল, বুধবার রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ভিক্টোরিয়া হাউস পর্যন্ত মিছিল করবে প্রদেশ কংগ্রেস।
ইয়েচুরি-রাহুলের আলোচনায় এ দিন উঠে এসেছে, দু’দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশই সমঝোতা করে লোকসভা ভোটে লড়তে চান। রাহুল জানান, জেলা নেতাদের চূড়ান্ত মত নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস অবস্থান জানাবে। তাদের কাছ থেকেআসনের প্রাথমিক তালিকাও নেওয়া হবে।ইয়েচুরিও তাঁকে জানান, সিপিএমের রাজ্য কমিটি আলোচনা করে আসনভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা করবে। তার পরে সেই তালিকা ধরে ফের আলোচনায় যাবেন দু’দলের শীর্ষ নেতারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ দিন আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে জবাবি ভাষণে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও বার্তা দিয়েছেন, সিবিআই-কাণ্ড বা অন্য বিষয়ে তাঁরা এখন কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সংঘাতে’ যাবেন না।
গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় প্রচারে এসে রাহুল যে সারদা-কাণ্ডের প্রসঙ্গে মমতার সমালোচনা করেছিলেন, সেই বক্তব্য সামনে এনে কংগ্রেস সভাপতিকে বিঁধেছেন বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাহুল গাঁধীর মত বদলের কারণ কী? একসময় কংগ্রেস ও বামেরাই তো চিটফান্ডের বিষয় নিয়ে আদালতে গিয়েছিল!’’ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা শুধু বাংলা নয়, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, ওড়িশা-সহ নানা রাজ্যে সিবিআই, ইডি-র কেন্দ্রীয় সংস্থাকে অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার কথা বলতে চেয়েছি।’’