—ফাইল চিত্র।
ভোট চলছে। এর সঙ্গে চলবে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলকে অর্থ জোগানোর প্রক্রিয়াও। এই বন্ডের উপরে স্থগিতাদেশ জানানোর আর্জি আজ খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মোদী সরকার চেয়েছিল, সাধারণ নির্বাচনের মাঝপথে যেন নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পে হস্তক্ষেপ না করা হয়। ভোটের পরে এ নিয়ে মামলা চলতে পারে। সরকারের এই যুক্তি খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ আজ অম্তর্বর্তী রায়ে কিছু শর্তের কথাও বলেছে। যেমন, ভোট চলা কালে এপ্রিল-মে মাসে বন্ড বিক্রির দিন কমিয়ে অর্ধেক করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আর লোকসভা ভোটের পর্ব মিটলে ৩০ মে-র মধ্যে সব দলকে জানাতে হবে, কাদের কাছ থেকে কত অর্থ পেয়েছে তারা। সেই তথ্য মুখবন্ধ খামে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। কংগ্রেসের দাবি, মোদী সরকারের আরও একটি দুর্নীতি সামনে এল।
কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, ‘‘সরকার এই নির্বাচনী বন্ডের জন্য পাঁচটি আইন বদলে ফেলেছে। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশের পর নরেন্দ্র মোদীকে এ বারে লিখে জানাতে হবে, ওই আয়ের উৎস কী? বন্ডে পাওয়া টাকা কালো না সাদা? এ বারে তাদের আরও একটি দুর্নীতি ধরা পড়ে গেল।’’
ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এর ঘোষণা করেন প্রথমে। এর পরে সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে দলের হাতে দেওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। বন্ড হবে ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ ও ১ কোটি টাকার।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু অভিযোগ ওঠে, নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নষ্ট করছে। এ নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় সিপিএম এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (এডিআর) নামে একটি সংগঠন। তাদের আর্জি, নির্বাচনী বন্ড বিক্রি নিষিদ্ধ করা হোক, কিংবা বন্ড কারা কিনছে, তাদের নাম জানানো হোক। সিপিএমের বক্তব্য, রাজনৈতিক দলগুলিকে যারা সাহায্য করছে, তাদের নাম গোপন থেকে গেলে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিয়ে আন্দোলনকারীরাও অভিযোগ করেন, এতে অস্বচ্ছতাই বাড়ছে। বিশ্বের কোনও দেশে এমন ব্যবস্থা নেই। কোন কর্পোরেট সংস্থা কাকে ভোটে সাহায্য করছে এবং বিনিময়ে সরকারের থেকে কী সুবিধে আদায় করছে, তার কিছুই বোঝা যাবে না। জেটলিরা পাল্টা যুক্তি দেন, চাঁদা কারা দিচ্ছেন, তা প্রকাশ করতে গেলে কালো টাকার লেনদেনই চলতে থাকবে। জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে এক বেঞ্চ গত বছর অক্টোবর মাসে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দেয়।
নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল গত কাল সরকারের তরফে বলেছিলেন, ‘‘প্রার্থী সম্পর্কে জানার পূর্ণ অধিকার রয়েছে ভোটারদের। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে, তা কেন জানতে চাইবেন তাঁরা?’’ আজ এডিআরের পক্ষে সওয়াল করতে উঠে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আজ বলেন, মোট ২২১ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছে। তার মধ্যে ২১০ কোটি টাকার বন্ডই বিজেপির তহবিলে ঢুকেছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মন্তব্য করেন, ‘‘(প্রশান্ত ভূষণের) কথা শুনে মনে হচ্ছে, নির্বাচনী বক্তৃতা হচ্ছে।’’
এ পর্যন্ত হওয়া সওয়াল-জবাবের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালতের প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলি অজ্ঞাত সূত্র থেকে টাকা পেলে তা বড় বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। সে কারণে অন্তবর্তী রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। অল্প সময়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়। এর মধ্যে যাতে কোনও পক্ষপাতের ঘটনা না-ঘটে, সে জন্য অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হল।’’
অর্থ মন্ত্রকের প্রতি শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোনও দল যাতে বাড়তি সুবিধা না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচনী বন্ড কেনার সময় ১০ দিন থেকে কমিয়ে ৫ দিন করতে হবে।