মোদীর বিরুদ্ধেই সম্প্রীতির বারাণসী

রামমন্দির আবেগকে উস্কে দিয়ে নতুন করে হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেষ্টা করছে সঙ্ঘ পরিবার। সেই সময়ে খোদ নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে এককাট্টা হিন্দু ও মুসলমানরা। তা-ও আবার মোদীরই স্বপ্নের প্রকল্প কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডরের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

রামমন্দির আবেগকে উস্কে দিয়ে নতুন করে হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেষ্টা করছে সঙ্ঘ পরিবার। সেই সময়ে খোদ নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে এককাট্টা হিন্দু ও মুসলমানরা। তা-ও আবার মোদীরই স্বপ্নের প্রকল্প কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডরের বিরুদ্ধে।

Advertisement

২০১৪-র ইস্তাহারে বারাণসীর ভোল পালটে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। তারই অন্যতম হাতিয়ার ছিল গঙ্গার ঘাট থেকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির পর্যন্ত ৫০ ফুট চওড়া করিডর। কিন্তু ৬০০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে কয়েক’শো প্রাচীন বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। তাতেই ক্ষেপে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মন্দির সংলগ্ন এলাকাতেই বহু দিন ধরে বসবাসকারী ব্রাহ্মণ পরিবারগুলির অন্যতম কেদারনাথ ব্যাসের ঐতিহাসিক ভবনও ভাঙা পড়েছে। তাঁর ছেলে জিতেন্দ্রনাথ ব্যাস ও জ্ঞানবাপী মসজিদের দেখাশোনার ভারপ্রাপ্ত কমিটি ‘অঞ্জুমন ইন্তেজামিয়া মোসাজিদ’ মিলে সুপ্রিম কোর্টে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করার দাবিতে মামলা করেছে। তাঁদের অভিযোগ, কেন্দ্রের মোদী সরকারের নির্দেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকার ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট সব কাজ করছে।

আর এক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প। কাজ করতে গিয়ে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের আধিকারিকেরা অসামান্য কিছু সম্পদ পেয়েছেন। ওই চত্বরের অলিগলিতে অষ্টাদশ শতাব্দীর একাধিক প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান মিলেছে। কংক্রিট, প্লাস্টারে চাপা পড়ে গিয়েছিল এই সব সুন্দর মন্দির।

Advertisement

আরও পড়ুন: দলিত না ব্রাহ্মণ, আর্য না অনার্য, নাকি বনবাসী! মহাসঙ্কটে বজরঙ্গবলী

পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এমন অন্তত ৪৩টি মন্দিরকে চিহ্নিত করেছেন, যেগুলির সংরক্ষণ দরকার। ফলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর প্রকল্পের নকশাতেও রদবদল করতে হচ্ছে। যোগী সরকারের কর্তারা অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের মামলাটিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। কারণ ইলাহাবাদ হাইকোর্টেও এমন একটি মামলা হয়েছিল। তা খারিজ হয়ে যায়। তাঁদের যুক্তি, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্টের এই প্রকল্পে কোনও আপত্তি নেই। ট্রাস্টই প্রকল্প রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আরও পড়ুন: ‘আরও একটা হেলিকপ্টার নেমে আসুক’​

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের মামলার গুরুত্ব অন্য দিকে বলে মনেই করছেন রাজনীতিকরা। তাঁদের যুক্তি, বারাণসীতে লাগোয়া কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদের মতোই হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সুবিদিত। ইতিহাস বলে, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব বিশ্বনাথের একটি মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপী মসজিদ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটা ১৬৬৯-র ঘটনা। কিন্তু ইনদওরের মহারানি অহল্যাবাই হোলকার সেই মসজিদের পাশেই ১৭৮০-তে মন্দির পুনর্নির্মাণের পর থেকে মন্দির-মসজিদ একসঙ্গে রয়েছে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে অযোধ্যায় রামমন্দির ঘিরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্দোলনের ধাক্কায় কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদের পরিচালন পর্ষদ আইনি বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। সময়ের চাকায় এ বার ফের যখন অযোধ্যার রাম মন্দির নিয়ে সঙ্ঘ সক্রিয়, তখন মোদীর প্রকল্পের বিরুদ্ধেই বারাণসীর হিন্দু-মুসলমানরা এককাট্টা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement