নিষেধাজ্ঞার অর্থই বদলে দিলেন যোগী

ভোটের আদর্শ আচরণবিধি না-মানা নেতাদের বাগে আনতে নির্বাচন কমিশনের ‘জেগে উঠেছে’ দেখে গত কালই সন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

অযোধ্যা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৭
Share:

অর্চনা: সরযূ নদীর ধারে আরতি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। বুধবার। ছবি: পিটিআই

আইনি কারণে আইইউএমএল নিয়ে তাঁর দু’টি টুইট ভারতে না-দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে টুইটার। বক্তৃতায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার জন্য মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টা প্রচার করতে পারছেন না তিনি। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ এ সবে বিচলিত নন। তিনি অন্য ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন সময়টাকে। প্রচার করা বারণ। কোথাও রাজনৈতিক বিবৃতি বা সাক্ষাৎকার দেওয়াও চলবে না। কিন্তু অযোধ্যায় এসে সাধু-সন্তদের সঙ্গে আলোচনা করতে তো বাধা নেই নির্বাচন কমিশনের। দলিত পরিবারে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে খাবার খেতেই বা বাধা দেবে কে! ‘শাস্তির’ দ্বিতীয় দিনটিতে আজ তাই এই সব কাজেই ব্যস্ত রইলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। দলিতদের যে বিজেপি ব্রাত্য মনে করে না, দ্বিতীয় দফার ভোটের মুখে সেই রাজনৈতিক বার্তাটি দিলেন ভরপুর। তিনি প্রচার করলেন না বটে, তাঁর কর্মসূচির পুরো দস্তুর প্রচার করল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

Advertisement

ভোটের আদর্শ আচরণবিধি না-মানা নেতাদের বাগে আনতে নির্বাচন কমিশনের ‘জেগে উঠেছে’ দেখে গত কালই সন্তোষ প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সামাজিক বা প্রশাসনিক কাজকর্মের মাধ্যমে যে সেই নিষেধাজ্ঞার অর্থ কতটা বদলে দেওয়া যায়, সেটাই করে দেখাচ্ছেন যোগী।

শুধু দলিত পরিবারে গিয়ে খাওয়াই নয়, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের শিকার হওয়া এক মহিলার সঙ্গে আজ নিজের বাসভবনে দেখা করেন যোগী। গোন্ডার বাসিন্দা নাজ়িয়া তাঁর বোনকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়েছিলেন সাহায্য চাইতে। যোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরে নাজ়িয়া বলেন, ‘‘স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আমাকে মেরে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। স্বামী আর এক জনকে বিয়েও করেছে। ওরা হুমকি দিয়েছে, বাড়িতে ফিরলে মেয়ে-সহ আমাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলবে। আমি তাই বাপের বাড়িতে গিয়ে রয়েছি।’’ নাজ়িয়া জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য চাইতে এসেছিলেন তিনি। যোগী সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যা বলার নাজ়িয়া বলেছেন। সংবাদমাধ্যমে যোগী নিজে কিছুই বলেননি। কিন্তু এই ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক ভাবে যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবং সেই বার্তা ছড়িয়ে গিয়েছে টিভি-সহ খবরের বিভিন্ন মাধ্যমের হাত ধরে।

তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিয়ে বারবার অধ্যাদেশ জারি করলেও রাজ্যসভায় এর বিল পাশ করাতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দল ও সংশ্লিষ্ট মহল বিবাহ বিচ্ছেদের মতো বিষয়কে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিরোধিতা করছে। বিজেপি কিন্তু ক্ষমতায় ফিরলে ওই বিলকেই আইনে পরিণত করতে চায়। এবং সেটা তারা আগে থেকেই ঘোষণা করে রেখেছ। যোগী আজ বোঝালেন, তাঁরা নিপীড়িতা মুসলিম মহিলাদের পাশে রয়েছেন। দ্বিতীয় দফা ভোটের আগের দিন, যে যা বোঝে বুঝুক!

রইল বাকি হিন্দুত্ব! গেরুয়া শিবিরের সকলেই জানেন, এর সঙ্গে গোরক্ষপীঠের পীঠাধীশ্বর যোগীর সম্পর্ক জল ও মাছের মতো। এ দিন তিনি গিয়েছিলেন লখনউয়ের হনুমান সেতু মন্দিরে। সেখানে ‘হনুমান চালিশা’ পাঠ করেন তিনি। অযোধ্যায় এসে যান রাম জন্মভূমি স্থলে, আখড়ায় ও হনুমান গঢ়ী মন্দিরে। দেখা করেন, রামজন্মভূমি ন্যাসের সভাপতি মহন্ত নৃত্যগোপাল দাসের সঙ্গে। সন্ধের পরেও চলে তাঁর মন্দির দর্শনের পর্ব।

নিষেধ মেনে বিজেপির হয়ে ভোট প্রচারে সভা সমাবেশ করেননি। কিন্তু প্রচারে আদৌ কি বিরতি নিয়েছেন যোগী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন