বিচারপতি যশবন্ত বর্মা। — ফাইল চিত্র।
নগদকাণ্ডে অভিযুক্ত বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া কী হবে? আসন্ন বাদল অধিবেশনে লোকসভা না রাজ্যসভা, কোন পথে বিচারপতিকে অপসারণের পথে হাঁটবে কেন্দ্র? সে সব প্রশ্ন নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপের দাবিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরাও। আগামী ২১ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে বাদল অধিবেশন। তার আগেই কেন্দ্রের তরফে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, যদি এর মধ্যে বিচারপতি বর্মা নিজে থেকে পদত্যাগ না করেন, তা হলে জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া বাদল অধিবেশনেই তাঁকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করবে কেন্দ্র। এর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না নগদকাণ্ডে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখে বর্মার ইমপিচমেন্ট-এর (অপসারণ) বিষয়ে সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচারপতি বর্মাকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করার আর্জিও জানিয়েছিলেন, যদিও সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি। অন্য দিকে, আগেই পদত্যাগের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারপতি বর্মা। নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলেও দাবি করেছেন তিনি। ফলে তাঁকে অপসারণ করতে গেলে এ বার সংসদই ভরসা।
কী সেই প্রক্রিয়া? ভারতীয় সংবিধানের ১২৪(৪) নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতিকে অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এ জন্য প্রাথমিক ভাবে সংসদের উচ্চ কক্ষ তথা রাজ্যসভায় কমপক্ষে ৫০ জন সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন। আর লোকসভায় প্রয়োজন ১০০ জনের স্বাক্ষর। যদি প্রস্তাবটি উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে পাশ হয়, তা হলেই পরবর্তী ধাপ হিসাবে লোকসভার স্পিকার অথবা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ করবেন। তিন সদস্যের ওই কমিটিতে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের এক জন বর্তমান বিচারপতি, হাই কোর্টের এক প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের মনোনীত কোনও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ। সেই কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে সরকার।
চলতি বছরের দোলের দিন দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের গুদামে আগুন লেগে যায়। দমকলকর্মীরা আগুন নেবাতে গিয়ে আধপোড়া নোটের রাশি রাশি বান্ডিল উদ্ধার করেন। সেই থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথমে ওই বিচারপতিকে দিল্লি থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্রমে মামলার জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত ওই ঘটনার অনুসন্ধানের জন্য হাই কোর্টের তিন বিচারপতিকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মে মাসে ওই অনুসন্ধান কমিটি একটি মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে। তাতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের দিন বিচারপতি বর্মার বাসভবনের ভিতরে রাশি রাশি টাকার স্তূপ দেখেছিলেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীও। যদিও বিচারপতির দাবি, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না।