—প্রতীকী চিত্র।
স্বামী পরিত্যাগ করার পরেও প্রায় দুই দশক স্বামীর সঙ্গে থাকেন স্ত্রী। একটি মামলার শুনানিতে ওই মহিলাকে ‘আদর্শ ভারতীয় বধূ’ বলে অভিহিত করল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। বিচারপতি বিবেক রুশিয়া এবং বিচারপতি বিনোদকুমার দ্বিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, হিন্দু ধারণা অনুসারে বিবাহ পবিত্র একটি জিনিস। ওই মহিলার আচরণ এবং কর্তব্যপরায়ণতা ধর্ম, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, বিয়ের পবিত্রতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের।
স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্বামী। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ হয়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। স্বামীর অভিযোগ ছিল, স্ত্রী তাঁকে পছন্দ করেন না। তিনি মদ্যপান করেন এবং অন্য সম্পর্কে লিপ্ত সন্দেহে এক সঙ্গে থাকতে অস্বীকার করেন। স্ত্রী অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা জানান, বিবাহিত জীবনে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির প্রতি কর্তব্যপালনে বিচ্যুত হননি। স্বামী অন্য মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতেই তিনি স্বামীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেন বলে জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে স্ত্রী জানিয়েছেন, স্বামী পরিত্যাগ করলেও শ্বশুরবাড়িতে থেকে গিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল করে গিয়েছেন।
হিন্দু বিবাহ আইনে বিয়ে হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের বাসিন্দা ওই দম্পতির। ২০০২ সালে তাঁদের এক পুত্রসন্তান হয়। ২০০৬ থেকে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। স্ত্রীকে ছেড়ে চলে যান স্বামী। বিবাহবিচ্ছেদের এই মামলার সম্প্রতি শুনানি হয় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে। সেই শুনানিতে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর স্ত্রীর প্রশংসা করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। দুই বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, “স্বামীর চরিত্রহনন করেননি তিনি। স্বামীর অনুপস্থিতিতেও শ্বশুরবাড়ির প্রতি তিনি তাঁর কর্তব্য পালন করে গিয়েছেন। তিনি সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করেননি। বরং তাঁর এই অবস্থাকে শক্তি হিসাবে কাজে লাগিয়েছেন, যা এক জন হিন্দু মহিলার আদর্শ হওয়া উচিত।” একই সঙ্গে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “একা হয়ে গেলেও তিনি (স্ত্রী) বিবাহের দুই স্মারকচিহ্ন মঙ্গলসূত্র ছিঁড়ে ফেলেননি কিংবা সিঁদুর মুছে ফেলেননি। কারণ তাঁর কাছে বিবাহ কোনও চুক্তি নয়, একটি সংস্কার।” এই পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্যের পরেই স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি খারিজ করে দেয় উচ্চ আদালত। বহাল থাকে নিম্ন আদালতের রায়।