মুখরক্ষা করেছে একা পালঘর। একার ক্ষমতায় একটি লোকসভা আসনই দখল করতে পেরেছে বিজেপি। কিন্তু ওই কেন্দ্রে যে ভাবে সমানে-সমানে টক্কর দিয়েছে শিবসেনাও, তাতে উদ্বিগ্ন বিজেপি এ বার উদ্ধব ঠাকরের মন পেতে মাঠে নামছে। এ কাজে আরএসএসের সাহায্য চাইছে দল।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে দু’পক্ষের তিক্ততা শুরু। পরে মহারাষ্ট্র বিধানসভা ও মুম্বই পুরসভা নির্বাচনের সময়ে তা চরমে ওঠে। এর আগে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসকে দিয়ে একপ্রস্থ শিবসেনার মানভঞ্জনের চেষ্টা করেছিল বিজেপি। আজও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ফডণবীস বলেন, ‘‘পালঘরে জিতলেও যে ভাবে দু’টি শরিক দলের মধ্যে লড়াই হয়েছে তা দুঃখজনক। ভোট প্রচারে দুই শরিক দলের মধ্যে তিক্ততার বাতাবরণ সৃষ্টি হলেও, আশা করব ওই তিক্ততা দ্রুত মিটে যাবে।’’ ফডণবীসের পরে এ বার এনডিএ-র ভাঙন রুখতে তথা শিবসেনাকে কাছে টানতে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন অমিত শাহ। প্রয়োজনে মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভার রদবদল করার কথাও ভাবছে বিজেপি। কিন্তু আজ শিবসেনা যে ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাহায্যে টাকা ছড়িয়ে, ইভিএমে কারচুপি করে তাদের হারানোর অভিযোগ তুলেছে, তাতে ওই ফাটল আদৌ জুড়বে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েই গিয়েছে।
পালঘরে বিজেপি জিতলেও, প্রায় আড়াই লক্ষ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে শিবসেনা। দু’লক্ষের কাছাকাছি ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে বহুজন বিকাশ আগাড়ি নামে স্থানীয় দল। যাদের ভোট বিজেপির জেতা প্রার্থীর থেকে মাত্র ৬৩ হাজার কম। ওই পরিসংখ্যানে অশনিসঙ্কেত দেখছে বিজেপি। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এনডিএ শিবিরের ভোট দু’দলের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতেও ওই প্রবণতা চালু থাকলে লোকসভায় এর ফায়দা নেবে কংগ্রেস-এনসিপি। আমাদের ভোট ভাগাভাগির সুযোগে আসন ছিনিয়ে নেবে বিরোধীরা।’’ দ্রুত তাই এনডিএ-র ক্ষত মেরামতিতে নামতে চাইছে বিজেপি।
কিন্তু শিবসেনার কাছে সমস্যা হল, গত জানুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রে ‘একলা চলো’-র নীতি হাতে নেয় দল। কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকার থেকে শিবসেনা এখনই সমর্থন না তুললেও, উদ্ধবের অবস্থান মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন অক্ষের সৃষ্টি করে। লাগাতার বিজেপির বিরুদ্ধে সরব থাকা উদ্ধবের পক্ষেও এখন হঠাৎ করে সুর নামানো কঠিন। আপাতত তাই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর কৌশল নিয়ে শিবসেনা প্রার্থীকে জোর করে হারানোর অভিযোগ তুলেছেন উদ্ধব ঠাকরে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হার স্বীকার করছি না। ভোটার তালিকায় ব্যাপক কারচুপি করেছে বিজেপি।’’ আজকের ফলে যে দুই শরিকের দূরত্ব আরও বেড়ে গেল তা স্পষ্ট করে দিয়ে উদ্ধব বলেন, ‘‘আমরা এক সময়ে শরিক থাকলেও, এখন দেখে মনে হচ্ছে বিজেপির আর বন্ধুর প্রয়োজন নেই।’’