শিনা মামলায় এ বার তলব সিবিআইকে

শিনা বরা মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চাইছে মহারাষ্ট্র সরকার। শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব কে পি বক্সী বলেন, ‘‘শুধু তো খুন নয়, এই ঘটনার সঙ্গে আর্থিক অপরাধ-সহ অনেক কিছু জড়িয়ে। ঘটনার বিস্তৃতির কথা ভেবেই সিবিআইকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২০
Share:

শিনা বরা মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে চাইছে মহারাষ্ট্র সরকার। শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব কে পি বক্সী বলেন, ‘‘শুধু তো খুন নয়, এই ঘটনার সঙ্গে আর্থিক অপরাধ-সহ অনেক কিছু জড়িয়ে। ঘটনার বিস্তৃতির কথা ভেবেই সিবিআইকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’

Advertisement

এর আগে শিনা মামলার তদন্ত নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। এ দিন সেই রিপোর্ট হাতে আসার পরে তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে আলোচনা হয় স্বরাষ্ট্রসচিবের। তার পরেই এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রসচিব জানান।

গত কালই মহারাষ্ট্র সরকারের এক শীর্ষ কর্তা সংবাদ সংস্থাকে বলেন, শিনা তদন্তের হালহকিকত সঠিক সময়েই জানাবে সরকার। তার পরেই আজকের এই ঘোষণা। ৮ই সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের তদানীন্তন পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়াকে হঠাৎই ডি়জি (হোমগার্ড) পদে সরিয়ে দিয়েছিল সরকার। শিনা তদন্ত মারিয়াই তদারকি করছিলেন। সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক শিবিরে মারিয়াকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে হইচই শুরু হতে ওই দিনই সন্ধেবেলা সরকার জানায়, মারিয়াই তদন্ত চালাবেন। কিন্তু মারিয়া নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, কমিশনার পদে না থেকে তদন্ত চালানোয় তিনি আগ্রহী নন।

Advertisement

এই অবস্থায় শিনা মামলার পরিণতি কী হতে চলেছে, তাই নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল মানুষের মনে। কিন্তু এ দিন সিবিআই তদন্তের ঘোষণা ফের কিছু নতুন প্রশ্নও তুলে দিয়ে গেল। কেন হঠাৎ সিবিআইকে ডাকা হচ্ছে, সেটাই তার মধ্যে সবচেয়ে আগে।

মহারাষ্ট্র প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছেন, তদন্ত যখন পুরোদমে চলছিল তখন রাকেশ মারিয়াকে কমিশনার পদ থেকে সরিয়ে জাভেদ আহমেদকে বসানো হয়েছিল। মনে করা হচ্ছিল, রাকেশ মারিয়ার সঙ্গে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের স্বামী পিটারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেই তাঁকে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু পরে সরকার জানতে পেরেছে, জাভেদ আহমেদও কিন্তু পিটারের কম ঘনিষ্ঠ নন। জাভেদ নিজের ঈদের পার্টিতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন পিটার-ইন্দ্রাণীকে। এমনকী, ইন্দ্রাণী গ্রেফতার হওয়ার পরে পিটার প্রথম ফোনটা জাভেদকেই করেছিলেন বলে মুম্বই পুলিশের একাংশের দাবি।

মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার মহেশনারায়ণ সিংহ শুক্রবার মুম্বই থেকে বললেন, ‘‘বুঝুন ব্যাপারখানা! মারিয়াকে সরিয়ে যাঁকে আনা হল দেখা গেল তিনিও পিটারের বন্ধু! বৃহস্পতিবার এটা জানাজানির পরেই শুক্রবার সিবিআইকে ডাকা হল।’’ মহেশের মতো প্রাক্তন অফিসারদের মতে, পিটার যে জাভেদের বন্ধু সে কথা জানাজানি হওয়ার পরে হয় জাভেদকে সরিয়ে দিতে হতো নয়তো মামলা সরাতে হতো। সিবিআই-কে ডেকে এক ঢিলে দু’পাখি মারতে

চাইল সরকার।

কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হল, রাকেশ নিজে সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, রহস্য ভেদ হয়ে গিয়েছে। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে ইন্দ্রাণী, তাঁর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খন্না এবং ইন্দ্রাণীর গাড়ির চালক শ্যাম রাই তিন জনই গ্রেফতার হয়েছেন। ১৪ দিন ধরে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁদের জেরা করেছে পুলিশ। ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে থাকার পরে এখন তাঁরা জেলে। তা

হলে সিবিআই নতুন করে কী

তদন্ত করবে?

কী ভাবে শিনাকে খুন করা হয়েছিল, খুন করে কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, খুনের সময়ে গাড়িতে কে কে ছিলেন, কে তাঁর পা ধরে রেখেছিল— এ সমস্তই তদন্তে বার করে ফেলেছে মুম্বই পুলিশ। দাবি করা হয়েছে, শিনার মা ইন্দ্রাণী নাকি স্বীকার করে নিয়েছেন যে শিনাকে তিনিই খুন করেন। শিনার দেহ জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার আগে ইন্দ্রাণীই মেয়েকে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছিলেন। মুম্বই পুলিশের একাংশ তাই প্রশ্ন তুলছেন, এই অবস্থায় এই মামলার তদন্তের ভার নিয়ে সিবিআই ঠিক কী করবে? আর তখনই উঠে আসছে এই ঘটনার সঙ্গে আর্থিক বেনিয়মের সম্পর্ক।

প্রাক্তন কমিশনার রাকেশ মারিয়া নিজেই ৭ সেপ্টেম্বর রাতে বলেছিলেন, ‘‘শিনা খুনের মামলায় আর্থিক দিকটির তদন্ত করাও জরুরি হয়ে উঠেছে। সেই তদন্ত করতে আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। সেখানে মুম্বই পুলিশের আর্থিক অপরাধ দমন শাখার অফিসারেরা ছাড়াও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আয়কর দফতরের অফিসারদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’’

এ বার কি সিবিআই তা হলে আর্থিক দিকটাই সবিস্তার খতিয়ে দেখবে? সূত্রের খবর, পিটার কয়েক কোটি টাকা ভাগ করে রেখেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে। তার মধ্যে শিনাও ছিলেন। কিন্তু পরে সেই টাকা ফেরত নেওয়ার সময় যখন আসে তখন নাকি শিনা বেঁকে বসেন এবং শিনা খুনের পিছনে এটাও অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে সম্পর্কের জটিল গোলোকধাঁধার হিসেব। প্রশ্ন উঠেছিল, ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে শিনা নিখোঁজ হওয়ার কথা তিনি জানতেন না বলে যে দাবি পিটার করেছিলেন তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

মুম্বই পুলিশের একাংশের মতে, পিটারকে রাকেশ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই চর্চায় জল ঢেলে মারিয়াকে বদলি করে মহারাষ্ট্র সরকার। জাভেদ আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্ত হবে।’’ এখন দেখা যাচ্ছে জাভেদও পিটারের বন্ধু। ফলে নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার স্বার্থেই সিবিআই-কে ডেকে দায়মুক্ত হতে চাইল সরকার। বক্সী নিজেই এ দিন দাবি করেছেন, ডিজি-র রিপোর্ট অনুযায়ী তদন্ত যথাযথই হয়েছে। এমনকী নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করার প্রয়োজন আছে বলেও নাকি সরকার মনে করে না। সরকার শুধু চায়, সিবিআই গভীরে গিয়ে সব খতিয়ে দেখুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন