‘মহারাষ্ট্র রাইজিং ডে’

‘জয় জয় মরাঠা মাঝা’— মরাঠি ‘মাঝা’ শব্দটির বাংলা হল ‘আমার’। এ ভাবেই মরাঠি অস্মিতা নিয়ে সমস্ত মরাঠাবাসী স্বরাজ্যের গুণকীর্তন করেন। লিখছেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।‘জয় জয় মরাঠা মাঝা’— মরাঠি ‘মাঝা’ শব্দটির বাংলা হল ‘আমার’। এ ভাবেই মরাঠি অস্মিতা নিয়ে সমস্ত মরাঠাবাসী স্বরাজ্যের গুণকীর্তন করেন। লিখছেন মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০১
Share:

‘‘মঙ্গল দেশা পবিত্র দেশা

Advertisement

মহারাষ্ট্র দেশা

প্রণাম ধ্যেয়া মাঝা হা

Advertisement

শ্রী মহারাষ্ট্র দেশা।’’

গৌরবের আঁচে মরাঠি সমাজ তাঁদের জাত্যভিমান ধরে রাখেন সহজ তাগিদেই। ‘মহারাষ্ট্র ডে’ কেবলমাত্র ঐতিহাসিক দিন নয়। দিনটা মরাঠাবাসীর প্রাণখোলা একটা দিবস। সব স্বতঃস্ফূর্ততা ও উৎসাহ উদ্দীপনার ১ মে।

মহারাজ শিবাজির নেতৃত্বে মরাঠা জাগছিল ১৬ শতক থেকেই। মোঘল সাম্রাজ্য ছাড়াও পরে অ্যাংলো-মরাঠা যুদ্ধও হয়েছে। মহারাষ্ট্রের ছোট ছোট সাম্রাজ্যগুলি ‘বম্বে স্টেট’ হিসেবে ব্রিটিশরাজের অধীনস্থ হতে থাকে। স্বাধীনতার পরই ‘সংযুক্ত মরাঠা সমিতি’ দাবি করতে থাকেন, মরাঠা ভাষাভাষীদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক রাষ্ট্রের। অম্বেডকরও ‘এক রাষ্ট্র—এক ভাষা’ হিসেবে ভিত্তি করে মরাঠা সাম্রাজ্যকে অধিকার দেওয়ার কথা। বাবাসাহেব এই ব্যাপারে একটি জোরালো স্মারকনামা পেশ করেন।

জওহরলাল নেহেরু কোনও ভাবেই এটা মানতে চাননি যে কেবল মাত্র ভাষার ভিত্তিতে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ভারত রাষ্ট্রের, প্রদেশ ভাগের চিন্তাকে। যদিও ১৯৫০ সাল নাগাদ ভাষাগত প্রাদেশিকতার ভিত্তিতে অন্ধ্র কেরালা কর্নাটক তত দিনে নিজের পৃথক রাজ্য গড়ে নিয়েছে। সেই হেতু মহারাষ্ট্র গড়ার দাবি মরাঠাবাসীরা তখনও করে আসছিলেন। শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের অবিচলতার বিরুদ্ধে সমগ্র মরাঠাবাসী জনগণ মনে করতে শুরু করলেন এ বার নিজেদের অধিকার আদায়ের সময় হয়েছে।

১৯৫৬ সালে ভারতে নতুন প্রণীত সংবিধান আইনে, ‘দ্য স্টেট রিঅর্গানাইজেশন অ্যাক্ট’-এ প্রতিটি রাজ্যকে তাদের মৌখিক ভাষা সংস্কৃতি লোকাচারের দিক দিয়ে চিহ্নিত করার সুবিধার্থে পৃথক করার কথা ঘোষণা করা হয়। শেষপর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে হস্তক্ষেপ দাবি করার প্রতিবাদে মুম্বইয়ের ফ্লোরা ফাউন্টেনের কাছে সে সময় এক সরকারবিরোধী জমায়েত হয়। সেখানে সরকার পক্ষের পুলিশের গুলিতে শতাধিক লোকের প্রাণ যায়। অতি দুঃখজনক তথা ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির জন্য মুম্বইয়ের এই ফ্লোরা ফাউন্টেনের শহিদ স্মারক হিসেবে নতুন নামকরণ হয় ‘হুতাত্মা স্মারক’।

‘‘জয় জয় মহারাষ্ট্র মাঝা

করু উদঘোষ হরিৎ ক্রান্তিচাহাস

দালু পর্য্যাওবরণাচা

গর্জা মহারাষ্ট্র মাঝা’’

প্রাথমিক ভাবে বম্বে স্টেট নামে সেই সময় যে বৃহৎ অ়ঞ্চলটি পরিচিত ছিল—সেখানে অ়ঞ্চলভেদে মোট চার রকম ভাষার ব্যবহার প্রচলন ছিল। সমগ্র অঞ্চলের জনসাধারণ এলাকা বিশেষে নিজেদের জাতি বিশেষে গুজরাতি, কাচ্ছি, মরাঠা ও কোঙ্কনি ভাষায় নিজেদের গোষ্ঠীতে কথোপকথন করতেন।

‘সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতি’র উদ্যোগে এই বৃহৎ বম্বে রাজ্যটিকে দুটি ভাগে ভাগ করার লিখিত প্রস্তাবনা পার্লামেন্টে পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যেখানে গুজরাতি ও কাচ্ছি ভাষার বাহুল্য রয়েছে সেই অ়ঞ্চলটি গুজরাত। এবং বাকি অন্য যে বৃহৎ অ়ঞ্চলটি রয়েছে সেখানকার মানুষজন মরাঠি ও কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলেন, সেই অঞ্চলটির নাম হোক মহারাষ্ট্র।

সংযুক্ত মহারাষ্ট্র সমিতির এই লক্ষ্যপূরণ সফল হয়। ১৯৬০ সালের ২৪ এপ্রিল ভারতে সংসদে প্রস্তাবটি প্রথমে গৃহীত হয়। এবং এর ঠিক ছয় দিন পরই ১৯৬০ সালের ১লা মে মহারাষ্ট্র ও গুজরাত দুটি পৃথক রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বম্বে রি-অর্গানাইজেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে ১ মে, মুম্বইকে মহারাষ্ট্রের রাজধানী শহর হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। মহারাষ্ট্রের জনগণ স্বরাজ্য পেয়ে খুশি হন। মরাঠাবাসীরা এমনিতেই উৎসবমুখর থাকতে পছন্দ করেন। তাঁদের প্রতিটি উৎসবই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দ্যোতক। মহারাষ্ট্রের নাগরিকের কাছে মহারাষ্ট্র দিবস এক ঝলমলে রঙিন উৎসবের প্রতীক। তাঁরা উদাত্ত হয়ে বলেন,

‘‘শ্রীখণ্ড পুরি

রেশমী ডোরি

লিম্বা চে পান

নব বর্ষা যাও ছান

আমচা সর্ভনচা

সর্ভনচা তরফে

হার্দিক শুভেচ্ছা’’

মরাঠা বীরের জাতি। তাদের যশ তাদের আত্মাভিমানও বাড়িয়ে দেয়। মরাঠিদের আবেদন তাঁদের ঋজুতায়, তাঁর বাক্যের স্পষ্টতায়, তাঁর সৃজনশীল নান্দনিকতায়। মহারাষ্ট্রের প্রাণশক্তির কাছে হার মানে আরও কিছু নামজাদা শহরও। মনোরঞ্জন, উন্নতি, প্রগতি সবেতে মহারাষ্ট্রবাসী যথেষ্ট তুখোড়। তাঁরা এই ঐতিহ্য পরম্পরায় যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাঁরা বলতেই পারেন—

‘‘আমহালা আভিমান আহে

মহারাষ্ট্রীয় অসন্যাচা

আমহালা গর্ব আহে

মরাঠি ভাদেয়া

আমহি জপতো
আমচি সংস্কৃতি, আমচি নিষ্ঠা আহে মাতীশী’’

১ মে মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সরকারি ছুটির দিন এবং এই মহারাষ্ট্র দিবস দিনটি ‘মহারাষ্ট্র রাইজিং ডে’ নামে যথেষ্ট উৎসব-উদ্দীপনায় পালিত হয়। ইতিমধ্যেই গত তিন বছর আগে ২০১১ সালে, দিনটি ‘স্বর্ণজয়ন্তী’ হিসেবে পালিত হয়েছে যথেষ্ট ধুমধামের সঙ্গে। মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও ঐতিহ্যবাহী মরাঠি সাংস্কৃতিক উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। রাজ্যের রাজ্যপাল সেনাবাহিনীর প্যারেড-সহ অভিবাদন গ্রহণ করেন। স্যালুট প্রদান করেন স্টেট রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স, বৃহন্মুম্বই কমান্ডো ফোর্স, হোম গার্ড, সিভিল ডিফেন্স, ফায়ার বিগ্রেড, সিটি পুলিশ ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ উচ্চ পর্যায়ের সব মন্ত্রী, আমলা ও তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতারা। প্যারেড কুচকাওয়াজের পর সংস্কৃতিক নাচ-গানের অনুষ্ঠানও হয়। মুম্বইকররা সমস্বরে বলে ওঠেন—

‘‘জয় জয় মহারাষ্ট্রা মাঝা

গর্জা মহারাষ্ট্র মাঝা’’

এই মহারাষ্ট্র দিবস দিনটিতে আরও একটি বিশেষ সতর্কীকরণ বহাল থাকে সমগ্র মহারাষ্ট্রে। সারা মহারাষ্ট্রে ১ মে দিনটি ‘মহারাষ্ট্র দিবসে’র মর্যাদা স্বরূপ কোনও প্রকার মাদক জাতীয় দ্রব্য ও পানীয় সেবনের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। বৃহমুম্বই ও নভি মুম্বইয়ের রাস্তার মোড়ে, বাজার চত্বরে চোখে পড়বে বিশাল হোর্ডিং ব্যানার কিয়স্ক ৫৫তম ‘মহারাষ্ট্র দিবসের’ শুভেচ্ছা।

‘‘মহারাষ্ট্রা দিনাচ্যা

প্রত্যেক মহারাষ্ট্রীয়

জানালা শুভেচ্ছা’’

ভাষা বা জাতি হিসেবে আলাদা হলেও, আমরা যারা ভিন রাজ্য থেকে মুম্বই বা মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে কর্মসূত্রে, বৈবাহিক সূত্রে বা জন্মসূত্রে রয়েছি, তারাও ৫৫তম মহারাষ্ট্র দিবসের আনন্দ উদ্দীপনার শরিক হয়ে যেতে থাকি। পয়লা মে দিনটা ‘শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে ডে’ হিসেবে পালন করতে দেখে এসেছি এত কাল। আর মহারাষ্ট্রে বসবাস করতে এসে দেখলাম শুধুই ‘শ্রমিক দিবস’ নয়। পয়লা মে দিনটায় মহারাষ্ট্রে শ্রমিক দিবসের সঙ্গে সবেতন ছুটির আরও একটা নতুন উৎস ‘মহারাষ্ট্র ডে’-এর ছুটি।

আবার অন্য দিকে, ১ মে দিনটি সারা বিশ্বের পরিচিত ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে। মে দিবসকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি প্রতিটি সংস্থার কর্মীদের সংক্ষিপ্ত ছুটির পরিমাণের বিরুদ্ধাচরণ করে সংঘবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছিল। পরে এই দিনটিতে উগ্র বামপন্থী রাজনীতির তকমা লেগে যায়। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ‘সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত’ পর্যন্ত কাজ করার সময় নির্দেশিত ছিল। পরে সমস্ত দিনরাতের নির্ঘণ্টের নিরিখে ৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা উপভোগ ও ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের দাবিতে সমস্ত কর্মরত মানুষ সংঘবদ্ধ হন। বর্তমানে আ-বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষ ও সমস্ত শ্রমিক সংগঠনগুলি ভাষণ, অনুষ্ঠান, শোভাযাত্রা, দলীয় পতাকা বা ব্যানার উপস্থাপনের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে ১ মে সবেতন জাতীয় ছুটি উপভোগ করেন সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীরা।

তবে যে মতাদর্শের ভিত্তিতে কর্মজগতে অযৌক্তিক নিয়মনীতির উপস্থিতি প্রকট হয়, তখন তার অপদমনের জন্যও সাম্যের দাবিতে এক ধরনের অন্তর্নিহিত বিরুদ্ধ শক্তিও ক্রমশ সোচ্চার হয়ে উঠবে, এ তো বলাই বাহুল্য। তবে বছরে ওই একটা মাত্র দিন শ্রমজীবী মানুষরা আয়াস করে ছুটি উপভোগ করলেও নারীশ্রমিক ও শিশুশ্রমিকদের কথাও এই সামান্য পরিসরে বলে নেওয়া যাক। অর্থনৈতিক ও পারিবারিক সংকট, জীবনধারণের মান উন্নত করার তাগিদ, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন, স্ত্রীশিক্ষার প্রসার—এ সব অনেক কিছুই নারীদের ঘরের চৌহদ্দি ছেড়ে বাইরে পা রাখতে বাধ্য করেছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের শ্রমজীবন ও রোজগার, বলা যেতে পারে শুকনো সেঁকা পাইরুটিতে মাখনের ছিটে লাগানোর সামর্থ্যটুকু জোগালেও মধ্যবিত্ত সমাজে এই সব কর্মরতা মেয়েদের উপরই কিন্তু আধুনিক নারীর সংজ্ঞা অনেকটাই টিকে আছে। অথচ এও দেখা যায় নিম্নবিত্ত নারীশ্রমিকদের জন্য সরকারের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রক নানা রকম কার্যক্রম ও যোজনা প্রণয়ন করলেও প্রবঞ্চিত হতে হয়।

এই অল্প বয়সেই তাদের ছোট্ট শরীরে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের ভার নেমে এসেছে। বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক শিশুদের পরিবারগুলো আশঙ্কায় ভোগেন যে, এখন থেকেই কাজেকম্মে ছেলেপিলেদের জুতে না দিলে সংসারে একটা রোজগারের হিল্লে হবে না।

মধ্য যুগীয় কালে নাকি শোনা যায়, এক ধরনের বিচ্ছিরি রকমের গোঁড়া সংস্কারের নিরিখে— অযৌক্তিক ভাবেই নারীদের কৃষিকাজ, যন্ত্রপাতি চালানোর কাজে কোনও অধিকার ছিল না। তা সে তাঁতির ঘরের মেয়েদের তাঁতযন্ত্রে হাত দেওয়া বা জেলেনির জাল স্পর্শ করা, চষির ঘরে লাঙলে হাত দেওয়া সবই একাধারে নিষিদ্ধ ছিল। যথেষ্ট অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা ছিল ব্যাপারগুলো, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সমস্ত মধ্য যুগীয় অভ্যাসে, অকিঞ্চিৎকর কারণেই মেয়েরা এ সব কাজে অদক্ষ, অপারগ ও অপারদর্শী রয়ে গেছে আজও। আর বহু স্তরে শিল্পোন্নয়নের সঙ্গেই সঙ্গেই নারীশ্রমিকের দুর্দশা বেড়েছে। মর্যাদা কমেছে। যেহেতু যুগের সঙ্গে তাল রেখে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার তারা সে ভাবে শিখে নেওয়ার প্রকৃত সুযোগ সব সময় পাচ্ছে না। বিভিন্ন দিক দিয়ে এগিয়েও আজও বেশ কিছু ক্ষেত্রে নারীশ্রমিকদের দুর্দশা, সামাজিক ও অর্থনেতিক অধিকারবোধ, মানবিক মর্যাদাবোধ—প্রভৃতি গভীর তত্ত্বগুলো চাপা পড়ে আছে। রাষ্ট্রসংঘ, মানবাধিকার কমিশন, শ্রমমন্ত্রকের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের গভীরে।

ভারতীয় সংবিধানের ২৪ নং ধারায় এও বলা আছে—নো চাইল্ড বিলো দ্য এজ অফ ফোর্টিন ইয়ার্স শ্যাল এমপ্লয়েড টু ওয়ার্ক ইন এনি আদার হ্যাজারডাস এমপ্লয়মেন্ট’’— বাংলা তর্জমা করলে কথাটা অনেকটাই এ রকম দাঁড়ায় , ‘‘১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের কোথাও কাজে নিয়োগ করা দণ্ডনীয় অপরাধ’’। সংবিধানে আরও বলা আছে, ১৪ বছরের নীচে কোনও শিশুকে কাজে নিয়োগ করলে নিয়োগকর্তার ৮ বছরের জেল ও ৫০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে।

তবে এটাও লক্ষণীয় যে, নিরক্ষরতা দূরীকরণ সাক্ষরতা প্রাসারের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপক কর্মসূচি চালু হয়েছে, প্রচার ও প্রসার হয়েছে বহু দিন। ১৪ বছর বয়সি সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং স্কুলে মিড ডে মিলের লোভনীয় ইশারা সরকার করেছে। যাতে আহারের লোভে হলেও দুঃস্থ শিশুরা স্কুলে অন্তত আসে। সরকারের শিশু শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রকের নানা রকম বিধিনিষেধ খাতায়-কলমে রয়ে যায় কখনও সখনও। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও দুঃস্থ পরিবারের অগণিত শিশুরা আজও হয়তো ‘বর্ণ পরিচয়’ বা ‘ধারাপাতের’ সঙ্গে নিত্য পরিচয়ের সুযোগটুকুও অধরা থেকে গেছে।

নিজের রুটি নিজেই রোজগারের চেষ্টায় এরা স্টেশনে, কারখানায়, গ্যারেজে,দোকানে, বাড়ির কাজে শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এই অল্প বয়সেই তাদের ছোট্ট শরীরে শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জনের ভার নেমে এসেছে। বিশেষত দরিদ্র ও প্রান্তিক শিশুদের পরিবারগুলো আশঙ্কায় ভোগেন যে এ ভাবে এখন থেকেই কোনও না কোনও কাজেকম্মে ছেলেপিলেদের জুতে না দিলে সংসারে একটা রোজগারের হিল্লে হবে না। বড় শহরে ভাল কাজের প্রলোভন কিংবা বড় শহরে কাজকর্ম করে এমন ভাল পাত্রের কথা শুনলেই সেই পাত্রের সঙ্গে বিয়ের ফাঁদে পা দিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের তুলে দিচ্ছেন চেনা-অচেনা মানুষের হাতে। নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার বাচ্চা পাচার হয়ে যাচ্ছে ভিন্ রাজ্যে। সীমান্তে মাল পাচারের জন্য ছোট্ট ছোট্ট ছেলেদের কাজে লাগাচ্ছে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ।

ইদানীং কিছুটা হলেও প্রগতি হয়েছে বা হচ্ছে। এই সমস্ত পাচার হওয়া ছেলেমেয়েদের উদ্ধার করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে পুলিশি তৎপরতা কিছুটা বেড়েছে। এখন ওই ‘পিছড়ে বর্গ’’ শ্রেণির পরিবারও ক্রমশ মাথা তুলে রুখে দাঁড়াতে, পড়াশোনা করিয়ে সন্তানদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এ সব দেখে আমরা চমকিত হই। একই ভাবে চাকরির ক্ষেত্রেও তপশিলি উপজাতিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ মেয়েরাও হাতে-কলমে নানা কাজ শিখছে। কখনও হয়তো এক শ্রেণির রক্ষণশীল গোষ্ঠী প্রতিরোধ করতে চায়। তবে ঘুম ভাঙছে সমাজের। তবে সেও খুব দেরিতে।

যাই হোক, ‘মে দিবস’ বা ‘শ্রমিক দিবস’ এবং ‘মহারাষ্ট্র দিবস’-এর মর্যাদাপূর্ণ দিনট শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক ছুটির দিন মাত্র না হয়ে দিনটির গুরুত্ব রেখে সুচারু ভাবে পালন করা হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন