ছবি: এএফপি।
পকেটের রেস্ত অনুযায়ী কে না বেড়াতে চায়! তা যদি আবার অস্ট্রেলিয়া হয়!
এমনিতে অস্ট্রেলিয়ার বদনাম রয়েছে। সে দেশে পা দিলেও নাকি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ হয়ে যায়। হোটেলে যান, কান কেটে টাকা নিয়ে নেবে। জলের বোতলের দামও আগুন।
কিন্তু, এ বার ভারতের দিকে এখন নজর ঘুরছে গোটা বিশ্বের। অস্ট্রেলিয়াই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এখানকার উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পায়ের তলায় যে চাকা লাগানো রয়েছে সে খবর অস্ট্রেলীয় পর্যটন কর্তাদের কাছে নতুন নয়। বিশেষ করে বাঙালিরা তো পারলে ফি বছরই এক বার বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সেই বেড়ানো এখন আর দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধও নেই। এ বছর ব্যাঙ্কক, তো পরের বছর সিঙ্গাপুর, ছেলের পরীক্ষা শেষে দুবাই বা হংকং— এখন বাঙালির কাছে প্রায় জলভাতের মতো। এ হেন উচ্চ মধ্যবিত্ত ভারতীয় তথা বাঙালিদের কম টাকায় কী করে অস্ট্রেলিয়া ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, তা নিয়ে রীতিমতো মাথা ঘামাতে শুরু করেছেন পর্যটন কর্তারা।
কলকাতায় এসেছিলেন ভারতের দায়িত্বে থাকা পর্যটন কর্তা নিশান্ত কাশিকর। আদতে মুম্বই নিবাসী এই ভারতীয়ের কথায়, ‘‘অনেকেই জানেন না, ভারতীয় ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আপনি অস্ট্রেলিয়াতেও গাড়ি চালাতে পারবেন। ছ’জনের দল নিয়ে এখন অনেকেই ভারত থেকে গিয়ে নেমে পড়ছেন সিডনি বা মেলবোর্নে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে নিচ্ছেন। বড় গাড়ি, নিজেই চালাবেন বলে। দিনে গাড়ির জন্য ভাড়া দিতে হবে ৪০ থেকে ৫০ অস্ট্রেলীয় ডলার। পেট্রলের দাম লিটার প্রতি এক ডলারের কিছু বেশি।’’ এমনিতেই অস্ট্রেলীয় ডলারের দাম পড়ে গিয়ে ভারতীয় টাকায় এখন ৪৭ টাকা। গত বছরে যা ছিল ৫৫ টাকা। নিশান্তের যুক্তি, অস্ট্রেলীয় ডলারের দাম কমে যাওয়ার পরে এ ভাবে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লে জনপ্রতি খরচ অনেক কমে আসবে। বিলাসবহুল হোটেলে না ঢুকে রাস্তার পাশের মোটেলে রাত্রিবাস করলে অথবা রাস্তায় খাবার খেলে অনেক কম খরচে ঘুরে ফেলা যাবে অস্ট্রেলিয়া। নিশান্তের দাবি, ‘‘ভারতীয় যুবক-যুবতীদের মধ্যে এ ভাবে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। আপনি সিডনি থেকে গাড়ি নিয়ে ফেরার সময়ে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে রেখে এলেও কেউ আপত্তি করবে না। ক্রেডিট কার্ড থেকে গাড়ির ভাড়া মিটিয়ে দিলেই হবে।’’
নিশান্ত জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দু’লক্ষের বেশি ভারতীয় পর্যটক গিয়েছেন সেখানে। গত বছরের চেয়ে যা ১৯ শতাংশ বেশি। এক বছরের মধ্যে ওই ভারতীয় পর্যটকেরা সে দেশে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এসেছেন! ফলে, ভারত এখন গুরুত্বের তালিকায়। আলাদা করে কলকাতারও হিসেব দিয়েছেন নিশান্ত। জানিয়েছেন, গত বছরে এই শহর থেকে আট হাজার পর্যটক গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া। তবুও এ শহর থেকে সরাসরি উড়ান চালাতে রাজি নয় সেখানকার সরকারি বিমানসংস্থা কোয়ান্টাস? উল্টে দিল্লি-মুম্বই থেকে সরাসরি যে উড়ান তারা চালাচ্ছিল তা-ও তুলে নেওয়া হয়েছে। এত পর্যটক অথচ কোয়ান্টাস নেই কেন? নিশান্ত জানাচ্ছে, বছর দুয়েক আগে দিল্লি থেকে সিডনি-মেলবোর্ন সরাসরি উড়ান চালু করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। তাতে প্রচুর যাত্রীও হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রচুর যাত্রী মালয়েশিয়া, ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, হংকং ঘুরেও অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে কোয়ান্টাসের কাছে পর্যাপ্ত বিমান নেই। নিশান্তের মতে, নতুন বিমান এলে দিল্লিই হবে পরবর্তী গন্তব্য।