এক দিকে ভারতের ওষুধ শিল্প। অন্য দিকে দেশেরই নানান রোগে আক্রান্ত আমজনতা। ওষুধ সংস্থার স্বার্থ বাঁচাতে গিয়ে রোগীর সেবায় আঘাত হানার অভিযোগ নিয়ে সারা দেশ সরগরম। তাতে এ বার যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
জীবনদায়ী ওষুধের উপর থেকে আমদানি শুল্কে ছাড় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর তাতেই তীব্রতর হয়েছে জীবনদায়ী ওষুধের দাম বাড়ার আশঙ্কা। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা সোমবার নবান্নে জানান, ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, জীবনদায়ী ওষুধের উপর থেকে কেন্দ্র আমদানি শুল্কে ছাড় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ক্যানসার, কিডনিতে পাথর, ডায়াবেটিস, পার্কিনসন্স, হেপাটাইটিস বি, কোলাইটিস, হাড়ের রোগ, হেপাটাইটিস, হিমোফিলিয়া-সহ বিভিন্ন রোগের প্রায় ৭৪টি ওষুধের দাম বাড়তে চলেছে। তা হলে রোগীর স্বার্থ-বিরোধী এমন সিদ্ধান্ত কেন? কেন্দ্রের যুক্তি, এ দেশের ওষুধ শিল্পের স্বার্থরক্ষার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।
কী ভাবে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, বিদেশি ওষুধের উপর থেকে আমদানি শুল্কে ছাড় তুলে নেওয়া হলে সেগুলোর দাম বাড়বে ঠিকই। কিন্তু দেশি ওষুধের দাম আগের মতোই থেকে যাবে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে দেশীয় সংস্থাগুলির টিকে থাকতে সুবিধা হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী জীবনদায়ী ওষুধের দাম যে-ভাবে বাড়ছে, তাতে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের উপরেই এর প্রভাব পড়বে। ‘‘বাচ্চা, মহিলা, বয়স্কদের ওষুধের দাম বাড়লে বিপদে পড়বেন সাধারণ মানুষ। বিষয়টি বিবেচনা করে কেন্দ্রকে আমদানি শুল্কে ছাড় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলেছি,’’ সোমবার বলেন মমতা।
কেন্দ্রের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জ্ঞানেন্দ্র সিংহের আশ্বাস, এমন নীতি গ্রহণ করা হবে, যাতে কোনও রাজ্যেই সাধারণ মানুষের উপরে বিরূপ প্রভাব না-পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হল, বেশ কিছু রোগের ক্ষেত্রে আমদানি করা ওষুধের উপরেই চিকিৎসকদের বেশি নির্ভর করতে হয়। কারণ, এ দেশে সেই সব ওষুধের উৎপাদন খুবই কম। সে-ক্ষেত্রে রোগীরা তো বেশি দাম দিয়েই ওই সব ওষুধ কিনতে বাধ্য হবেন। সেই পরিস্থিতি কী করে এড়ানো যাবে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি কেন্দ্রের ওই কর্তার কাছে।
রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল এখনও এই বিষয়ে অন্ধকারে। ‘‘এ মাসের শেষে সব রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলারদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে এই প্রসঙ্গ নিশ্চয়ই উঠবে,’’ বললেন ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষ।