লালু প্রসাদ
আরজেডি নেতা লালু প্রসাদের ডাকা সমাবেশে যোগ দিতে আজ শনিবার পটনা যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার, দুপুর একটায় গাঁধী ময়দানে বিরোধী দলের নেতাদ-নেত্রীদের নিয়ে সভা। তবে মমতা গেলেও সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁরা ওই সভায় উপস্থিত থাকবে না। এ ক্ষেত্রে আরও একবার প্রকাশ কারাটের রাজনৈতিক লাইনই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সিপিএমের অন্দরে।
শুধু ধর্মনিরপেক্ষ হলেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে কোনও আঞ্চলিক দলের সঙ্গে হাত মেলানো যাবে না— কারাটের এই লাইন মেনেই রবিবার পটনায় লালুপ্রসাদের জনসভায় যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় না পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরে ফের যে সিদ্ধান্তকে কারাট-শিবিরের জয় হিসেবেই দেখছেন সিপিএম নেতারা।
প্রথমে ঠিক ছিল, সীতারাম ইয়েচুরি না হলেও সিপিএমের অন্য কেউ লালুপ্রসাদের জনসভায় যোগ দেবেন। লালুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের আঁচ এসে পড়বে ভেবে ঠিক ছিল, রাজ্য স্তরের কোনও নেতাকে পাঠানো হবে। কিন্তু বিহারের নেতারাই তাতে রাজি হননি। শেষে যখন দেখা যায়, মমতা নিজে ওই সভায় যোগ দেবেন, তখন একেবারেই কাউকে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সিপিএম সূত্রের খবর, দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরো সদস্যদের বৈঠকে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়। ইয়েচুরি শিবিরের মত, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের এককাট্টা করা ও সেই মঞ্চে থাকার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। যে যুক্তিতে সিপিআই লালুর সভায় যাচ্ছে। কিন্তু কারাট-শিবিরের নেতারা আপত্তি তোলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে যেতে রাজি নন কারাটরা। সেই কারণেই কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে আলিমুদ্দিনের প্রস্তাব খারিজ হয়ে গিয়েছে। কারাটের জমানাতেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বিজেপি বা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলিকে ভরসা করা মুশকিল।
পলিটব্যুরোর এক সদস্যর যুক্তি, ‘‘কাদের উপর ভরসা করব? কিছুদিন আগে বিরোধী জোটের প্রধান স্তম্ভ ছিলেন নীতীশ কুমার। এখন তিনিই এনডিএ-তে।’’ কিছু দিন আগে দলীয় মুখপত্রে কলম ধরে কারাট যুক্তি দিয়েছিলেন, শুধুই ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ভেবে বিরোধী দলগুলিকে একজোট করে লাভ নেই। সেই রাজনৈতিক লাইন মেনেই বিহার ভোটে মহাজোটে যোগ দেয়নি সিপিএম। পরে ইয়েচুরি-শিবিরের অনেকেই বলেছিলেন, জোটে যোগ দিলে লাভই হতো।
শরদ যাদবের ডাকা বিরোধীদের সভায় ইয়েচুরি গিয়েছিলেন। ছিলেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায়ও। দু’জনের হাত মেলানোর ছবি নিয়ে সিপিএমের অন্দরে বিতর্কও হয়। পলিটব্যুরোর এক নেতা বলেন, ‘‘তৃণমূলই পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে। তাদের সঙ্গে কী করে এক মঞ্চে হাজির হওয়া যায়!’’ সিপিএম নেতাদের মতে, পরের এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেস। সেখানে নতুন রাজনৈতিক লাইন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই বিতর্ক চলতেই থাকবে।