সীমান্ত থেকে অসমের ঘরে ফিরে গেলেন গল্লু

করিমপুরের আনন্দপল্লির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই অনাত্মীয় মানুষগুলির চেষ্টাতেই পাঁচ বছর পর তাঁর নিজের পরিবার খুঁজে পেলেন গল্লু ওরফে রবীন্দ্র মালা। পুলিশেরও বড় ভূমিকা রয়েছে হারিয়ে যাওয়া রবীন্দ্রকে বাড়ি ফেরানোর পিছনে।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

উলুঝুলু হয়ে ঘুরে বেড়াত লোকটি। কখনও করিমপুর এলাকায় কখনও আবার জলঙ্গি পেরিয়ে বক্সিপুরে। কথাবার্তা এলোমেলো ছিল। বিড়বিড় করত। কিন্তু কখনও কারও উপর তাঁকে চড়াও হতে দেখা যায়নি। বরং পরিজনহীন, একাকী মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণকে দেখে খারাপই লাগত আনন্দপল্লির বাসিন্দাদের। তাঁরাই নাম দিয়েছিলেন ‘গল্লু’।

Advertisement

করিমপুরের আনন্দপল্লির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এই অনাত্মীয় মানুষগুলির চেষ্টাতেই পাঁচ বছর পর তাঁর নিজের পরিবার খুঁজে পেলেন গল্লু ওরফে রবীন্দ্র মালা। পুলিশেরও বড় ভূমিকা রয়েছে হারিয়ে যাওয়া রবীন্দ্রকে বাড়ি ফেরানোর পিছনে।

মানসিক ভারসাম্যহীন ‘গল্লু’কে এলাকায় প্রথম দেখা যায় বছর দু’য়েক আগে। এলাকার লোকজনই তাঁকে খেতে দিতেন। তিনি রাত কাটাতেন এর-ওর বাড়ির দরজার পাশে, দোকানের চালার নীচে। এ বছর পয়লা বৈশাখে সবাই যখন নতুন পোশাক পরেছেন তখন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী গোপী সাহা গল্লুকে স্নান করিয়ে নতুন পোশাক পরিয়ে দেন। থালায় খাবার সাজিয়ে দেন আর এক ব্যবসায়ী গৌতম বিশ্বাস। তখনই কেমন যেন অন্য রকম হয়ে যায় তরুণের চোখমুখ। চমকপ্রদ ভাবে পুরনো অনেক কথা মনে পড়ে যায় তাঁর। গ্রামের নাম বলতে পারেন তিনি। বলেন, অসমে তাঁর বাড়ি—জানালেন আনন্দপল্লির বাসিন্দা জহর জোয়ারদার।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দারা এ বার ঠিক করেন, গল্লুকে বাড়ি ফেরানোর একটা চেষ্টা অন্তত করবেন। পুলিশকে সব জানানো হয়। পুলিশ ইন্টারনেট ঘেঁটে অসমের বিহুপুরিয়া থানার বরাইখনা গ্রামের খোঁজ পায়। সেখানকার থানায় ছেলে হারিয়ে যাওয়ার পর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বাড়ির লোক। নদিয়ার পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পর বরাইখনা গ্রামের পুলিশ ওই পরিবারের ফোন নম্বর জোগাড় করে পাঠায়। তার পর পুলিশ উদ্যোগী হয়ে মোবাইলে ভিডিও কল করায়। ছেলেকে চিনতে পারেন বাবা-মা। শুক্রবার অসম থেকে গল্লুর ভগ্নীপতি ও বাবা এসে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান।

বাবা কামাখ্যা মালা বলেছেন, “ওর কিছু সমস্যা ছিল। চিকিৎসার জন্য বছর পাঁচেক আগে পটনায় নিয়ে যাই। চেম্বারের বাইরে ওকে বসিয়ে ভিতরে গিয়েছিলাম। কিছু পরে বেরিয়ে দেখি ছেলে নেই। ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ছেলেকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য করিমপুরের মানুষের কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”

মাস চারেক আগে এই ভাবেই চার জন মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন যুবককে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছিল করিমপুর এবং হোগলবেড়িয়া থানার পুলিশ।

এসডিপিও কার্তিকচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশের এমন মানবিক মুখই সকলে প্রত্যাশা করেন। আনন্দপল্লির বাসিন্দারাও যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তা অভাবনীয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন