Israel Palestine Conflict

ইজ়রায়েলে লড়ছেন ‘মণিপুরের’ বেনে মেনাশে

১৯৮৯ থেকে দফায় দফায় মণিপুরের সাড়ে তিন হাজার ও মিজ়োরামের দেড় হাজার বেনে মেনাশে ইজ়রায়েল গিয়েছেন। এখনও মণিপুরে প্রায় ৫ হাজার মেনাশের বাস। মিজ়োরামেও তাঁদের সংখ্যা হাজারখানেক।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৯
Share:

ইজ়রায়েলে সেনার উর্দিতে ‘মণিপুরের’ হসুয়ানমাং। —নিজস্ব চিত্র।

টেলিস্কোপ সাঁটা এম-১৬ রাইফেলটা উল্টো করে গলায় ঝোলানো। ওয়্যারলেস রেডিয়ো সেটটা বুকে আঁটা। গাড়িতে বসে ‘হোমল্যান্ড’-এর জন্য লড়াইয়ের কথা বলছিলেন হসুয়ানমাং ওরফে ইয়েহোসুয়া মেনাশে।

Advertisement

অবশ্য ‘হোমল্যান্ড’ কথাটা হসুয়ানমাং বা তাঁর মতো বেনে মেনাশেদের ক্ষেত্রে খুবই জটিল। তাঁর জন্ম হয়েছিল মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে। তিনি যে হোমল্যান্ডের জন্য রাইফেল ঝুলিয়ে যুদ্ধে চলেছেন ইজ়রায়েলে।

পূর্বপুরুষদের জন্ম-কর্ম মণিপুর, মিজ়োরামে। সেখানকার জো-কুকিদের সঙ্গে মিশে থাকলেও এই জন্মভূমিকে কোনও দিনও নিজের বলে মেনে নিতে পারেননি বেনে মেনাশেরা। ‘বেনে মেনাশে’ হিব্রু শব্দটির অর্থ, মেনাশের সন্তান। নিজেদের ইজ়রায়েলের ভূমিপুত্র বলেই বিশ্বাস করেন তাঁরা।

Advertisement

মিজ়ো, কুকি, পইতেদের বড় একটা অংশ নিজেদের বাইবেলে উল্লিখিত হারিয়ে যাওয়া ১০টি জনজাতির একটি বলে দাবি করেন। কথিত আছে, খ্রিস্টপূর্ব ৭২১ সালে আসিরীয়রা ইজ়রায়েল থেকে এই ১০টি আদি জনজাতিকে নির্বাসিত করেছিল। তাঁদেরই একটি ধারা পূর্ব এশিয়া, ইউনান, মায়ানমার হয়ে মিজ়োরাম, মণিপুরে প্রবেশ করেছিল।

১৯৮৯ থেকে দফায় দফায় মণিপুরের সাড়ে তিন হাজার ও মিজ়োরামের দেড় হাজার বেনে মেনাশে ইজ়রায়েল গিয়েছেন। এখনও মণিপুরে প্রায় ৫ হাজার মেনাশের বাস। মিজ়োরামেও তাঁদের সংখ্যা হাজারখানেক।

বর্তমানে ওফ্রার বাসিন্দা হসুয়ানমাং ২০০০ সালেই ইজ়রায়েল চলে যান। ২০ বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পরে চিত্রগ্রাহকের পেশা বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইজ়রায়েলের উপরে হামাসের সাম্প্রতিক হামলার পরে ফের যোগ দিয়েছেন বাহিনীতে। হসুয়ানমাং জানান, ইজ়রায়েলের নিয়মানুযায়ী পুরুষদের অন্তত ৩২ মাস ও মহিলাদের ২৪ মাস সামরিক বাহিনীতে থাকতে হয়। মণিপুর বেনে মেনাশে কাউন্সিলের সভাপতি লালাম হাংসিং জানান, বর্তমানে ৮০ জন বেনে মেনাশে সক্রিয় ভাবে যুদ্ধ করছেন। ৩০০ জন আছেন রিজ়ার্ভে। বেনে মেনাশেদের সাহায্যকারী সংগঠন দেগেল মেনাশে ইজ়রায়েলের কার্যকরী অধিকর্তা ইশাক থাংজ়োম জানান, এখনও পর্যন্ত সেখানে বেনে মেনাশেরা নিরাপদে আছেন।

২০০৬ সালে সপরিবার ইজ়রায়েলে চলে যাওয়া মিজ়োরাম সরকারের প্রাক্তন কর্তা পিয়াল ত্লাউ এখন সে দেশের উত্তরে আফুলায় চাকরি করেন। সেখানে যুদ্ধের আঁচ পড়েনি। জানালেন, তাঁর তিন ছেলে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন। বড় ছেলে মিখেল ১০ বছর সেনাবাহিনীতে কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে অবসর নেন। তিনি এসডেরোট শিবির ছাড়ার পরে হামাস হানায় তাঁর ১০ সতীর্থ মারা যান।

মিজ়োরাম-মণিপুরের বেনে মেনাশেরা রোজ সন্ধ্যায় ইজ়রায়েলে থাকা সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করছেন, মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন। চলছে তেহিলিম পাঠ। এলিসাভা জ়োডিংগি বলছিলেন, “মণিপুরে জনজাতিদের নির্মূল করার যুদ্ধ চলছে। অন্য দিকে ইজরায়েলে চলছে সন্ত্রাসবাদী হানা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন