পকেটে স্বাধীনতা সংগ্রামীর রেল পাস, বয়স মাত্র ১০ বছর!

সোমবার প্রকাশিত কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) রিপোর্ট রেলের আর্থিক অবনতির যে-ছবি দেখিয়েছে, তাতে ভুয়ো পাসও একটা বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

বয়স মাত্র দশ। কিন্তু পকেটে পাস স্বাধীনতা সংগ্রামীর! কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এ-রকম অন্তত ৩২০০ জন রেলের স্বাধীনতা সংগ্রামী পাসে ভারত ঘুরেছেন, যাঁদের জন্ম দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে। পরিসংখ্যান বলছে, এমন ১৬৭৬ জন যাত্রীর বয়স ষাটের কোঠা ছোঁয়নি। তবু রেলের চোখে তাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামী!

Advertisement

সোমবার প্রকাশিত কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) রিপোর্ট রেলের আর্থিক অবনতির যে-ছবি দেখিয়েছে, তাতে ভুয়ো পাসও একটা বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এল। রিপোর্ট বলেছে, ২০১৭-১৮ সালে রেলের আর্থিক পরিস্থিতি গত এক-দেড় দশকের মধ্যে সব চেয়ে খারাপ। রেলের অপারেটিং রেশিয়ো দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০২.৬৬। অর্থাৎ একশো টাকা আয় করতে গিয়ে খরচ হচ্ছে ১০২ টাকার বেশি। এর জন্য বিরোধীরা কেন্দ্রের দিকেই আঙুল তুলছেন এবং দাবি করছেন, রেলকে দুর্দশার পথে ঠেলে দিয়ে ক্রমে বিলগ্নির কথা বলতে শুরু করবে সরকার।

আজ কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা টুইট করেন, ‘‘বিজেপি সরকারের আমলে রেলের পরিস্থিতি সব চেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে। কিছু দিনের মধ্যেই অন্য সরকারি সংস্থাগুলির মতো রেলকে বিক্রি করা শুরু হবে। কেননা বিজেপি সরকার গড়তে নয়, বিক্রি করতেই পারদর্শী।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সুরক্ষার নির্দেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিন্দুই

মূলত যাত্রী-ভাড়ায় ছাড়ের কারণে ক্ষতির পরিমাণ খুঁজে বার করতে তদন্ত শুরু করেছিল সিএজি। তাদের মতে, ক্ষতির পিছনে অন্যতম কারণই হল ভুয়ো পাস। ২০১৭-১৮ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী পাসে ১৫ হাজার ৯২৮ জন যাত্রী সফর করেন, যার মধ্যে ২১ শতাংশ যাত্রীর বয়স ৭০ বছরের নীচে। অর্থাৎ তাঁরা সকলেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জন্মেছেন। দশ বছর বয়সি যাত্রীকেও কী ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীর টিকিট দিলেন কোনও রেলকর্মী?

এই প্রশ্ন সিএজি-র, মন্ত্রকেরও।

রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘দশ বছরের যাত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামীর সফরসঙ্গী হলে মানা যেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সঙ্গী বা ‘কমপ্যানিয়ন’ খাতে নয়, একেবারে ‘ফ্রিডম ফাইটার’ হিসেবেই টিকিট দেওয়া হয়েছে।’’ অনিয়ম হয়েছে সুবিধা বা গরিব রথ ট্রেনের ছাড়ের টিকিটের ক্ষেত্রেও। ১২টি সুবিধা ট্রেন ও একাধিক গরিব রথে নিয়মের বাইরে গিয়ে বর্ষীয়ান নাগরিকদের টিকিটে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি ধরা পড়েছে চিকিৎসার শংসাপত্র নিয়ে যাত্রী-সফরেও।

সিএজি-র মতে সংরক্ষিত যাত্রীদের সফরের ক্ষেত্রে অন্তত ১১.৪৫ শতাংশ যাত্রী বিভিন্ন ছাড়ের সুবিধে নিয়েছেন। যার ফলে ৮.৪২ শতাংশ যাত্রী-আয় হারিয়েছে রেল। যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক আয়ে। পণ্য পরিবহণের আয়ের ৯৫ শতাংশ চলে গিয়েছে যাত্রিভাড়ার ৩৭,৯৩৬ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি মেটাতে। ফলে সার্বিক ভাবে ২০১৬-১৭ সালে যেখানে ৪৯১৩ কোটি টাকা রেলের ভাঁড়ারে ছিল, সেটা পরের বছরে দাঁড়ায় মাত্র ১৬৬৫ কোটি ৬১ লক্ষে।

শুধু কি তাই? এই ১৬৬৫ কোটি ৬১ লক্ষের পিছনে আছে অগ্রিম টাকার জোগান। ২০১৭-১৮ সালে দুই সংস্থা এনটিপিসি ও ইরকন থেকে অগ্রিম এসেছিল। তার দৌলতেই রেলের ভাঁড়ারে বাড়তি অর্থ ১৬৬৫ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা দাঁড়িয়েছে। অগ্রিমে ভর করেই অপারেটিং রেশিও ১০২ থেকে নেমেছে ৯৮.৪৪-য়। ওই অগ্রিম ভাঁড়ারে না ঢুকলে ভাঁড়ারের অঙ্ক শূন্যের থেকেও অন্তত ৫৬৭৬ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা নীচে নেমে যেত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন