বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে সাময়িক সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব মাওবাদীদের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে সাময়িক ভাবে সরে আসতে চায় মাওবাদীরা। বিবৃতি জারি করে কেন্দ্রকে এমনই বার্তা দিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)। শান্তি আলোচনার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে বিরতির প্রয়োজন বলে দাবি করেছে তারা। সরকারকে এক মাসের ‘যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করতে এবং আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযান বন্ধের অনুরোধ করেছেন মাওবাদীরা।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, তারা আগেও যুদ্ধবিরতি চেয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ প্রশস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়নি। তারা কোনও আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয়নি। মাওবাদীদের দাবি, সংগঠনের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (প্রয়াত নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ ওরফে গগন্না) শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আবারও সরকারের কাছে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
মাওবাদীরা আরও জানিয়েছেন, সাময়িক ভাবে সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করা হচ্ছে। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা স্পষ্ট করে দিচ্ছি, ভবিষ্যতে যত দূর সম্ভব জনসাধারণের স্বার্থে লড়াই করা সকল রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব। আমরা এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ) বা তাঁর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থাকা আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য এক মাসের সময় দিন।’’ কী ভাবে আলোচনা করতে চায় তারা, তা-ও দীর্ঘ বিবৃতিতে জানিয়েছে সিপিআই (মাওবাদী)। তাদের কথায়, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত।’’ তবে সরকারকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করতে হবে, সেই দাবিও তোলা হয়েছে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) তরফে জারি করার বিবৃতির সত্যতার যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ছত্তীসগঢ় সরকার। সে রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিবৃতিতে যে সংঘর্ষববিরতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা আপত্তিজনক। কারণ, এখানে যুদ্ধের কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, বিবৃতির সত্যতা যাচাইয়ের পর এই বিষয় নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি এ-ও মনে করেন, মাওবাদীদের উচিত আত্মসমর্পণ করে পুনর্বাসনের সুবিধা ভোগ করা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বারে বারেই ‘মাওবাদী’ নির্মূল করার বার্তা দিয়েছেন। দেশ জুড়ে চলছে তল্লাশি অভিযান। আধাসেনা এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে মিলে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে মাওবাদীদের ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে। প্রায় প্রতি দিনই কোনও না কোনও মাও নেতা বা কর্মীর মৃত্যুর খবর মিলছে। সেই আবহে মাওবাদীদের এই বিবৃতি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই।