Zapad Military Drills

রাশিয়া এবং বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় যোগ ভারতের! আমেরিকার উপর চাপ তৈরির কৌশল না নেপথ্যে অন্য কারণ?

এই সামরিক মহড়ার পোশাকি নাম ‘জ়াপড়’। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, আকাশপথে হামলা এবং প্রতিরোধ— এমন নানা বিষয়ে মহড়া চলছে। এই মহড়ার বিস্তৃতি মস্কোর পূর্বাঞ্চল, বাল্টিক সাগর থেকে শুরু করে বেলারুশের পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১৩
Share:

(বাঁ দিক থেকে) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। (উপরে) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

রাশিয়া এবং বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়ায় এ বার যোগ দিল ভারত। বিশ্ব কূটনৈতিক মহলে ভারতের এই পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, রাশিয়া এবং বেলারুশের নেতৃত্বাধীন পাঁচ দিনের এই মহড়ায় যোগ দেবেন ৬৫ জন জওয়ান। রাশিয়ার সরকারি সংস্থা তাস জানিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে তাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে মজবুত করতে এই সামরিক মহড়ায় যোগ দিচ্ছে নয়াদিল্লি।

Advertisement

এই সামরিক মহড়ার পোশাকি নাম ‘জ়াপড়’। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, আকাশপথে হামলা এবং প্রতিরোধ— এমন নানা বিষয়ে মহড়া চলছে। এই মহড়ার বিস্তৃতি মস্কোর পূর্বাঞ্চল, বাল্টিক সাগর থেকে শুরু করে বেলারুশের পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত।

রাশিয়া এবং বেলারুশের এই যৌথ সামরিক মহড়ায় দেশ-বিদেশের প্রায় এক লক্ষ সেনাকর্মী যোগ দিয়েছেন। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বোমারু বিমান, যুদ্ধজাহাজ, ভারী কামান— এমন নানা ধরনের যুদ্ধসামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে এই মহড়ায়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে সামরিক সাজে এই যৌথ মহড়া পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন নিঝনি নভগোরদ শহরের মুলিনো প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। উল্লেখ্য, এই কেন্দ্রেই রয়েছেন ভারত থেকে যাওয়া জওয়ানেরা। পুতিন বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি সারতেই এই মহড়া।’’

Advertisement

কেন এই মহড়ায় যোগ দিল ভারত? নয়াদিল্লির বক্তব্য, ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। সেই সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যেই ভারত যোগ দিয়েছে এই মহড়ায়। পাশাপাশি, দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার উদ্দেশ্যও রয়েছে মহড়ায় যোগদানের নেপথ্যে।

অতীতেও এই মহড়ার আয়োজন করেছে রাশিয়া এবং বেলারুশ। ভারতও তাতে যোগ দিয়েছে। আবার এক বার যৌথ মহড়ায় সেনা পাঠাল নয়াদিল্লি। তবে অন্য বারের তুলনায় এ বার ভারতের যোগ নিয়ে চর্চার অন্যতম কারণই হল নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের টানাপড়েন। রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার কারণে ভারতের উপর ‘জরিমানা’ হিসাবে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে আমেরিকা। শুধু তা-ই নয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন বার বার এ-ও হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, যদি ভারত রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ না করে তবে আরও শুল্ক আরোপ করা হবে। আমেরিকা চায়, বিশ্বের অন্য প্রধান দেশগুলি বিশেষত ইউরোপের দেশগুলিও শুল্ক আরোপ করুক ভারতের উপর। তবে আমেরিকার হুঁশিয়ারির পরেও ভারত নিজের অবস্থানে অনড়। নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধের কোনও সম্ভাবনা নেই!

সেই আবহে রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ মহড়ায় ভারতের যোগ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি অনেকের। তবে এই মহড়ায় শুধু ভারতের জওয়ানেরা যোগ দিচ্ছেন, তা নয়। ইরান, বাংলাদেশের মতো দেশগুলিও প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। এ ছাড়াও, মার্কিন কর্তারাও এই মহড়ায় যোগ দিচ্ছেন, যা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং এখনও পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে না-বসায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনও চলছে। মস্কোর দিকেও উড়ে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি। সেই আবহে মার্কিন প্রতিনিধিদের মহড়ায় যোগ দেওয়ার নেপথ্যে অন্য কোনও সমীকরণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের একাংশের মতে, বেলারুশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতি করতে চায় আমেরিকা। সেই লক্ষ্যেই এই মহড়ায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

তবে আমেরিকার যোগ দেওয়ার থেকেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে মহড়ায় ভারতের উপস্থিতি! ট্রাম্পের শুল্ক চাপানোর পর থেকেই আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ অবনতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে দিন কয়েক ধরে দু’দেশই চাইছে, সম্পর্কের উন্নতি। ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার বার ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বলেছেন। দু’দেশের বাণিজ্যচুক্তির জট কাটানোর চেষ্টাও চলছে। মার্কিন প্রতিনিধি সোমবারই নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্যবৈঠক করেছেন।

সেই আবহেই মোদীর জন্মদিনে তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ট্রাম্প। জন্মদিনের আগের রাতে শুভেচ্ছাবার্তা পেয়ে, তাঁর সমাজমাধ্যমে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীও। তিনি লেখেন, “৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধু।” তাঁর সংযোজন, “আপনার মতো আমিও ভারত-আমেরিকার সমঝোতা এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বকে সম্পূর্ণ নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই।” পাশাপাশি তিনি আরও লেখেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আপনার উদ্যোগকে আমরা সমর্থন করি।”

উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মতোই বেলারুশও সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের আর এক দেশ। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কোর পরিচিতি ‘পুতিন-ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে। এমনকি, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মস্কো তাদের পরমাণু অস্ত্রভান্ডারের একাংশ বেলারুশে মজুত করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement