বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধ নয়, আদালতে সওয়াল কেন্দ্রের

সরকারের আরও যুক্তি, ভারতের মতো দেশে সাক্ষরতা, আর্থিক ক্ষমতার অভাবের মতো সমস্যা রয়েছে। সমাজের মানসিকতা, বৈচিত্র্য, দারিদ্রও সমস্যা। তাই এ বিষয়ে পশ্চিমের দেশগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যায় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৭ ০৫:০২
Share:

দিল্লি হাইকোর্ট। —ফাইল চিত্র।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্কে ধর্ষণের অপরাধ হয় না বলে অবস্থান নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সরকারের যুক্তি, এতে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানেই অস্থিরতা তৈরি হবে। স্বামীদের হেনস্থা করার জন্যও এটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

Advertisement

বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে অপরাধের তকমা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কয়েকটি সামাজিক ও মহিলা সংগঠন। তাতেই আপত্তি তুলে মোদী সরকার হলফনামা দিয়ে বলেছে, ‘‘যদি স্ত্রী-র সঙ্গে স্বামীর সহবাসকে ধর্ষণের তকমা দেওয়া হয়, তা হলে ধর্ষণ হয়েছে কি হয়নি, তা শুধুমাত্র স্ত্রী-ই বলতে পারবেন। প্রশ্ন হল, কোন প্রমাণের উপর আদালত ভরসা করবে? কারণ স্বামী ও স্ত্রী-র মধ্যে সহবাসের স্থায়ী কোনও প্রমাণ থেকে যায় না।’’

সরকারের আরও যুক্তি, ভারতের মতো দেশে সাক্ষরতা, আর্থিক ক্ষমতার অভাবের মতো সমস্যা রয়েছে। সমাজের মানসিকতা, বৈচিত্র্য, দারিদ্রও সমস্যা। তাই এ বিষয়ে পশ্চিমের দেশগুলিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা যায় না।

Advertisement

আরও পড়ুন: অভিনব কেপমারির ফাঁদে কন্ডাক্টর, ধৃত যুবক

মোদী সরকারের এই অবস্থানের আজ ঘোরতর সমালোচনা করেছেন নারী অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারীরা। তাঁদের যুক্তি, সরকারের এই অবস্থানের অর্থ স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সহবাসে অনিচ্ছা থাকলেও না বলতে পারেন না। এই অবস্থান লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কমিটির সুপারিশেরও বিরোধী। প্রতিবেশী নেপাল, ভুটানের মতো দেশেও আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, তামিলনাড়ুর মতো উন্নত রাজ্যেও ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মহিলা হিংসার শিকার হন। নারী অধিকার আন্দোলনকারী কবিতা কৃষ্ণণের প্রশ্ন, ‘‘বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি তা হলে স্বামীর স্ত্রী-কে ধর্ষণের অধিকারের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে? লজ্জাজনক যুক্তি।’’

দিল্লিতে নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন কড়া করতে প্রয়াত বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়েছিল। বর্মা কমিটিরও সুপারিশ ছিল, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনি অপরাধের তালিকায় ফেলা হোক। কিন্তু মনমোহন সরকারও সেই সুপারিশ মানেনি। সেই আর্জি নিয়েই আরআইটি ফাউন্ডেশন ও গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠন দিল্লি হাইকোর্টে মামলা করে। তাদের দাবি ছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধিতের ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের যে সংজ্ঞা রয়েছে, সেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেই ছাড় তুলে দেওয়া হোক। সাধারণত ১৮ বছরের কমবয়সি মহিলার সঙ্গে সহবাসকে ধর্ষণ বলা হয়। কিন্তু বৈবাহিক সম্পর্কে ১৮ বছরের কমবয়সি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসকেও ধর্ষণ বলা হয় না। অথচ আইনে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে নিষিদ্ধ।

আজ দিল্লি হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি গীতা মিত্তলের বেঞ্চে শুনানিতে মহিলা সংগঠনের তরফে আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেসও যুক্তি দেন, স্বামীকে ইচ্ছোমতো সহবাসের অধিকার হিসেবে বিয়েকে দেখা উচিত নয়। উল্টো দিকে আবার নির্যাতিত পুরুষদের সংগঠন ‘মেন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ হাইকোর্টে যুক্তি দিয়েছে, বর্তমান আইনেই মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে।

কেন্দ্র যে এই অবস্থান নেবে, আগেই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। গত বছরেই সংসদে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘এ দেশে শিক্ষার অভাব, দারিদ্র, সামাজিক রীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মানসিকতা মিলিয়ে বিবাহকে পবিত্র হিসেবে দেখা হয়। তাই বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষণের অপরাধ নিয়ে আসা যায় না।’’ মেনকা অবশ্য আগে বৈবাহিক সম্পর্কেও ধর্ষণকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে যুক্তি দিয়েছিলেন।

এখন তা হলে এই সমস্যার সমাধান কী হবে? কেন্দ্রের হলফনামায় যুক্তি, এর জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। ভবিষ্যতে জটিলতা এড়াতে রাজ্যগুলির মত নেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছে মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন