‘খালি হাতে ফেরাননি কখনও সুষমাদেবী’

দুপুরের দিকে সংসদের সেন্ট্রাল হলে সুষমাদেবীর সঙ্গে দেখা হল। কুশল বিনিময় করতেই তিনি আমায় হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন সংসদে নিজের চেম্বারে।

Advertisement

মৌসম নুর

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫৭
Share:

—ফাইল চিত্র।

সময়টা ছিল গত বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ। জাঁকিয়ে শীত পড়েছিল দিল্লিতে। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। কারণ, আমার উত্তর মালদহ সংসদ এলাকার পুরাতন মালদহ ব্লকের মহিষবাথানি গ্রামের প্রায় ৩৫ জন যুবক মালয়েশিয়ায় কাজে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। ওঁদের অভিযোগ, যে সংস্থাটি ওঁদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়েছিল তারা চুক্তিভঙ্গ করেছিল। ওঁদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছিল। খেতে পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছিল না। দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছিল না। কোনও রকমে লুকিয়ে ফোন করে বিষয়টি পরিবারকে জানাতে পেরেছিল এক যুবক। সেই পরিবারটিই আমার সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চেয়েছিল। তাই সংসদে গিয়ে বিদেশমন্ত্রী সুষমাদেবীর সঙ্গে দেখা করাটা খুবই জরুরি ছিল।

Advertisement

দিনটা মনে নেই। তবে দুপুরের দিকে সংসদের সেন্ট্রাল হলে সুষমাদেবীর সঙ্গে দেখা হল। কুশল বিনিময় করতেই তিনি আমায় হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন সংসদে নিজের চেম্বারে। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রায় ১৫ মিনিট সময় দিয়েছিলেন। আমি মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া যুবকদের দুর্দশার কথা ওঁকে বললাম। দেখলাম, শুনতে শুনতেই ওঁর চোয়াল যেন শক্ত হয়ে উঠেছিল। আমায় লিখিত ভাবে পুরো বিষয়টি দ্রুত জানাতে বললেন। ২ ফেব্রুয়ারি ওঁর হাতে সেই চিঠি দিলাম। মালয়েশিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করেছিলেন তিনি। দিনদশেক পর সেন্ট্রাল হলে ফের দেখা হতে নিজেই এগিয়ে এসে আমাকে সে-কথা বললেন। সেই স্মৃতি কখনও ভোলার নয়। সুষমাদেবীর উদ্যোগেই মে মাসের শুরুতে প্রথম ধাপে মালদহের ২০ জন ও দিনদশেক পর বাকি ১০ জন যুবক ভারতীয় দূতাবাসের মধ্যস্থতায় বাড়িতে ফেরেন। এজন্য সুষমাদেবীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এর বেশ কিছুদিন পর ফের ওই মালয়েশিয়াতেই মহিষবাথানির ১০ জনকে কাজে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। পাসপোর্টও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। একসময় তাঁদের ভিসাও বাতিল হয়ে গিয়েছিল। ফের সেই সুষমাদেবীরই দ্বারস্থ হই। ফের চিঠি। ফের তিনি বিপুল উদ্যমে সেই যুবকদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে সৌদি আরবে আটকে পড়া রতুয়া-২ ব্লকের দুই শ্রমিককেও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

Advertisement

১০ বছর সাংসদ থাকাকালীন সুষমাদেবীর সঙ্গে আমার বহু কারণে দেখা হয়েছে। সংসদের ভিতরে-বাইরে কত কথা হয়েছে। খুব ভাল করে কথা বলতেন তিনি। মন দিয়ে শুনতেন। বলিষ্ঠ নেত্রী ছিলেন। আর এটুকু বলতে পারি, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতেন। কোনও দিন আমাকে খালি হাতে ফেরাননি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা আমার রইল। আমরা রাজনীতির এক জনপ্রিয় নেত্রীকে হারালাম।

(লেখক মালদহ উত্তরের প্রাক্তন সাংসদ, এখন মালদহ জেলা তৃণমূল সভাপতি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন