ঘর ভাঙছে নেতাজির, গুছোচ্ছেন বহেনজি

নেতাজি-র ঘরে লড়াই লেগেছে। এ সময় বহেনজি-র ঘরে যে উত্সব চলবে, সেটা আশা করাই স্বাভাবিক। বিক্রমাদিত্য মার্গে সমাজবাদী পার্টির দফতর থেকে রিকশায় ওঠার সময়ও তেমনই ধারণা ছিল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

লখনউ শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০১
Share:

নেতাজি-র ঘরে লড়াই লেগেছে। এ সময় বহেনজি-র ঘরে যে উত্সব চলবে, সেটা আশা করাই স্বাভাবিক।

Advertisement

বিক্রমাদিত্য মার্গে সমাজবাদী পার্টির দফতর থেকে রিকশায় ওঠার সময়ও তেমনই ধারণা ছিল। কারণ সমাজবাদী পার্টির ক্ষতিতে সব থেকে বেশি লাভবান হওয়ার কথা বহেনজির দলেরই। ভুল ভাঙল মাইল খানেক দূরের মল অ্যাভিনিউয়ে বহুজন সমাজ পার্টির দফতরে পৌঁছে।

সমাজবাদী পার্টিতে চাচা-ভাতিজার সংঘাতে কে কার অনুগামী, তা প্রমাণে গোটা রাজ্যের নেতা-কর্মীরা লখনউয়ে এসে জুটেছেন। দলের দফতর থেকে অখিলেশ, মুলায়ম, শিবপাল যাদবের বাড়ির সামনে জটলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আর বিএসপির দফতর? দলের প্রতীক হাতির বিরাট মূর্তি রয়েছে। বাবাসাহেব অম্বেডকর, কাঁসিরাম, খোদ মায়াবতীর মূর্তিও সটান দাঁড়িয়ে। দফতর খাঁ খাঁ করছে। উত্সব কোথায়, লোকই নেই।

Advertisement

সব কোথায়? অফিস দেখভালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর জবাব মিলল, “নেতারা নিজের নিজের এলাকায়। ভোটের কাজে ব্যস্ত। বহেনজি বৈঠক না ডাকলে কেউ এখানে আসবেন না।” উল্টো দিকেই মায়াবতীর বিরাট বাসভবন। শোনা যায়, তাঁর ঘরে নাকি কোনও জানলা নেই। চার মানুষ সমান উঁচু পাঁচিলের সামনে ব্ল্যাক-ক্যাট কম্যান্ডো রয়েছে। পাঁচিলের উপর থেকে পুলিশের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু নেতা-সমর্থকদের জটলা নেই।

ফারাকটা স্পষ্ট। নেতাজি মুলায়ম সিংহ যাদবের ঘর ভাঙছে। বহেনজি মায়াবতী নিজের ঘর গুছোচ্ছেন।

সব থেকে তাজ্জব বিষয় হল, নেতাজির পারিবারিক লড়াই নিয়ে মুখই খুলছেন না মায়াবতী। তাঁর দলের নেতা সতীশ মিশ্র আজ ঝাঁসিতে বলেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটের লড়াইয়ে বিএসপি এতটাই এগিয়ে যে তা দেখে সমাজবাদী পার্টি নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। বিএসপি-র আর এক নেতা সুধীন্দ্র ভাদোরিয়ার কটাক্ষ, সমাজবাদী পার্টির সংঘাতের মূলে রয়েছে দুর্নীতির টাকা নিয়ে ভাগ বাঁটোয়ারা। বহেনজির দলের বাকিরা একেবারে নিশ্চুপ। এমনকী নেতাজি-র গৃহযুদ্ধ নিয়ে টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য বিতর্কেও বিএসপি মুখপাত্রদের দেখা মিলছে না।

মায়াবতী বরং মুখ খুলছেন নরেন্দ্র মোদী জমানায় দলিত ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার নিয়ে। তাঁর নিজের সম্পর্কে বিজেপি নেতা দয়াশঙ্কর সিংহের কু-মন্তব্য ও বিভিন্ন সময়ে বিজেপি নেতাদের দলিত-বিরোধী কাজ ও মন্তব্যকে অস্ত্র করে, মোদী সরকারকে দলিত-বিরোধী তকমা দিতে চাইছেন তিনি। মায়াবতী অভিযোগ তুলেছেন, “কেন্দ্রে বিজেপি আসার পরেই মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার। গো-রক্ষা, লাভ জেহাদের নামে তাদের নিশানা করা হচ্ছে। আলিগড়, জামিয়া-র মতো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যালঘু তকমা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।” লক্ষ্য স্পষ্ট। মুলায়মের দলে ভাঙনের সুযোগ নিয়ে নিঃশব্দে বিএসপি-র চিরাচরিত দলিত ভোটের সঙ্গে এ বার মুসলমান ভোটকেও এককাট্টা করতে চান মায়াবতী।

বহেনজি বরাবরই নিশ্চুপে কাজ করতে পছন্দ করেন। বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে তিনি স্থানীয় নির্বাচনকেও গুরুত্ব দেন না। কিন্তু ২০১২-র উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোট ও ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পরে তাঁর দলের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বিজেপি উত্তরপ্রদেশে বিএসপি নেতাদের ভাঙাতে শুরু করেছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে সংগঠন মজবুত করেছেন মায়াবতী। এমনিতে উত্তরপ্রদেশের মুসলিম ভোট কংগ্রেস, মুলায়ম ও মায়াবতীর দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। সমাজবাদী পার্টির লক্ষ্য থাকে যাদব ভোটের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব মুসলিম ভোট জড়ো করা। কিন্তু মায়াবতীর যুক্তি, মোদী জমানায় বিজেপি-সমাজবাদী পার্টির ষড়যন্ত্রেই মুজফ্ফরনগরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-আরএসএস দলিত-মুসলিমদের নিশানা করেছে। কিন্তু অখিলেশ সরকার তাদের রক্ষা করতে কিছুই করেনি। তাই একজোট হয়ে বিএসপিকে ভোট দিতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন মায়াবতী।

এতেই প্রমাদ গুনছে বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্ব। বিহারে ভরাডুবির পরে উত্তরপ্রদেশের ভোট মোদী-অমিত শাহের অগ্নিপরীক্ষা। হিন্দু উচ্চবর্ণের ভোটকে পাখির চোখ করা বিজেপি চাইছে, মুসলিম ভোটের একাংশ মুলায়মের ঝুলিতে যাক। মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হলেই অঙ্কের হিসেবে বিজেপি এগিয়ে থাকবে। কিন্তু সেটা হবে কি না, তা নিয়ে সমাজবাদী পার্টির আজম খানের মতো নেতারাই নিশ্চিত নন। আজম খান বলেন, “নেতাদের লড়াইয়ে মুসলিম সমাজ বিরক্ত। মুসলিম ভোটকে সবাই নিজের জমিদারি ভাবছে। কিন্তু সেটা থালার বেগুন-ভর্তা নয়”।

মায়াবতীও তা বিলক্ষণ জানেন। তাই এখনই উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে বিধানসভা ভোটের পরেই উত্সব করতে চান বহেনজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন