(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, শাহবাজ় শরিফ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্য নিয়ে কড়া বার্তা দিল নয়াদিল্লি। সোমবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ নিয়ে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়ালও। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করা হবে না। সেই সঙ্গে ‘বন্ধু দেশের’ মাটি থেকে এমন বার্তা দুর্ভাগ্যজনক বলেও জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমেরিকা থেকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের কিছু মন্তব্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পরমাণু অস্ত্র নিয়ে হট্টগোল করা পাকিস্তানের প্রধান চালিকাশক্তি। এই ধরনের মন্তব্যে যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা প্রকাশ পেয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমন একটা দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকায় যে সন্দেহগুলি দানা বেঁধেছিল, সেগুলিই আরও জোরদার হচ্ছে। সেখানে সামরিক বাহিনী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।’’ এর পরেই আমেরিকার উদ্দেশে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য বন্ধুত্বপূর্ণ তৃতীয় দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে করা হচ্ছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ভারত পরমাণু হুমকির সামনে মাথা নত করবে না। আগেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমরা প্রয়োজনীয় সব রকম পদক্ষেপ করব।’’
পাকিস্তানে ভারতের সেনা অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তৎপরবর্তী দুই দেশের সংঘাতের পরে দু’মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমেরিকায় গিয়েছেন পাক সেনাপ্রধান। ফ্লরিডার টাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদ আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে বলেন, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।’’ পর্যবেক্ষকদের মতে, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃতীয় কোনও দেশকে এ হেন পরমাণু হুমকির নজির বিরল।
এর পর সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানের কথা তুলে ধরেন মুনির। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত। সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল কী ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে, এই চুক্তির শর্ত তা স্থির করে। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা— এই তিন নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত চুক্তির শর্ত না মানলে পাকিস্তানে জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মুনির বলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের অভাব নেই।’’
সম্প্রতি খনিজ তেল নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের চুক্তি হয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সূত্রে পাকিস্তানের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। ইসলামাবাদের উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে দুই দেশকেই বার্তা দেওয়া হল।