নিজেদের সঙ্গে অর্ধেক বিশ্বকে নিয়ে ধ্বংসের হুঁশিয়ারি দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তথা ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। মনে করিয়ে দিলেন, তাঁরা পরমাণু শক্তিধর দেশ। পাকিস্তান থেকে নয়, হুঁশিয়ারি এল আমেরিকা থেকে। সম্প্রতি মুনির আমেরিকা সফরে গিয়েছেন। পাকিস্তানে ভারতের সেনা অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তৎপরবর্তী দুই দেশের সংঘাতের পরে দু’মাসে এই নিয়ে দু’বার আমেরিকায় গেলেন মুনির। সেখান থেকেই পরমাণু শক্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বার্তা দিয়েছেন ভারতকেও। ১০টি মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতে হামলার হুমকি দিয়েছেন মুনির।
ফ্লরিডার টাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদ আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলেন পাক সেনাপ্রধান। পাকিস্তানের শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে সেখান থেকে বলেন, ‘‘আমরা একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ধ্বংস হব।’’ পর্যবেক্ষকদের মতে, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃতীয় কোনও দেশকে এ হেন পরমাণু হুমকির নজির যথেষ্ট বিরল।
আরও পড়ুন:
পরমাণু-বার্তার পরেই সরাসরি ভারতের প্রসঙ্গ তোলেন মুনির। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত। সিন্ধু এবং তার পাঁচ উপনদীর জল কী ভাবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বণ্টিত হবে, এই চুক্তির শর্ত তা স্থির করে। সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগা— এই তিন নদী পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত। ভারত চুক্তির শর্ত না মানলে পাকিস্তানে জলের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। মুনির সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।’’ সিন্ধু চুক্তি নিয়ে মুনিরের দাবি, ‘‘সিন্ধু নদ ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও অভাব নেই।’’ দ্য প্রিন্ট সূত্র উল্লেখ করে মুনিরের এই বক্তব্যের কথা জানিয়েছে।
খনিজ তেল নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করেছে আমেরিকা। পাকিস্তানে খনিজ তেলের ভান্ডার রয়েছে বলে প্রমাণিত তথ্য খুব একটা নেই। তবে ভবিষ্যতে সেখানে তেলের বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠবে বলে আশাবাদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই মুনিরের মুখে আরও এক বার এসেছে ভারতের প্রসঙ্গ। ভারতকে তিনি চকচকে মার্সেডিজ় গাড়ির সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, ‘‘ভারত হাইওয়ের উপর দিয়ে আসতে থাকা ঝাঁ-চকচকে একটা মার্সেডিজ়, ঠিক ফেরারির মতো। কিন্তু আমরা নুড়ি ভর্তি ট্রাক। গাড়িটাকে যদি ট্রাক ধাক্কা দেয়, পরাজয় কার হবে?’’
উল্লেখ্য, পাকিস্তান থেকে ভারতকে হুঁশিয়ারি এই প্রথম নয়। সিন্ধু জলচুক্তি নিয়েও এর আগে একাধিক হুঁশিয়ারি এসেছে। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়ে দিয়েছিলেন, জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। পাকিস্তান সীমান্ত-সন্ত্রাস বন্ধ না করলে সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থান বদলাবে না। চুক্তি স্থগিতই থাকবে। সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির জলের উপর পাকিস্তানের কৃষির ৮০ শতাংশ নির্ভর করে থাকে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এ বিষয়ে একাধিক বার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছেন। এ বার মুনির ১০টি মিসাইলের হুঁশিয়ারি দিলেন।