রাশিয়ার সঙ্গে তেলের বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ায় ভারতের উপর নেমে এসেছে মার্কিন শুল্কের খাঁড়া। ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে ভারতীয় পণ্যের উপর। এ ভাবে পরোক্ষে রাশিয়াকেই ‘শাস্তি’ দিতে চাইছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্টে দাবি, শুধু ভারতকে জরিমানার মধ্যেই রাশিয়ার ‘শাস্তি’ সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং আরও কিছু পরিকল্পনা করে রেখেছেন ট্রাম্প। ফলে আরও কিছু দেশের উপর আমেরিকার কোপ পড়তে পারে।
জ্বালানি, বিশেষত খনিজ তেল বিক্রিকেই রাশিয়ার যুদ্ধের নেপথ্যে আর্থিক উৎস বলে মনে করছে আমেরিকা। দাবি, খনিজ তেল বিক্রি করে যে টাকা রাশিয়া পাচ্ছে, সেটাই ইউক্রেনের যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। ফলে পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ থামছে না। আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুদ্ধ শুরুর পরপরই, তাতে লাভ হচ্ছে না। এর জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করেছেন ট্রাম্প। দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়ার খনিজ তেল এবং অস্ত্র কিনে চলেছে। এই অর্থ ইউক্রেন যুদ্ধে খরচ হচ্ছে। অর্থাৎ, ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে রাশিয়াকে সাহায্য করছে নয়াদিল্লি। ট্রাম্পের এহেন অভিযোগের জবাবে ভারত একাধিক বার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্যনীতি স্থির করা হয়, জানিয়েছে ভারত।
আরও পড়ুন:
ব্লুমবার্গের রিপোর্ট বলছে, রাশিয়ার গোপন তেল ট্যাঙ্কারের বহর ইউক্রেন যুদ্ধের নেপথ্যে অন্যতম প্রধান আর্থিক সহায়ক। আমেরিকা এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গোপনে সমুদ্রে যাতায়াত করে ওই সব ট্যাঙ্কার। বেশ কিছু দেশ তাতে সাহায্যও করে। এই সমস্ত ট্যাঙ্কার পরিচালনায় রাশিয়াকে যারা সাহায্য করছে, আমেরিকার কোপ এ বার পড়তে চলেছে তাদের উপর। গোপন ওই ট্যাঙ্কার বহরের উপর আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। যারা ট্যাঙ্কারগুলিকে সাহায্য করছে, তাদের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। রাশিয়াকে এ ভাবে কোণঠাসা করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিছু দিন আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ অ্যান্ড্রি ইয়েরমাক সমাজমাধ্যমে রুশ তেল ট্যাঙ্কারের উপরে আলোকপাত করেছিলেন। দাবি করেছিলেন, যুদ্ধের অর্থের প্রধান উৎস এই সমস্ত ট্যাঙ্কার। তাঁর কথায়, ‘‘রাশিয়া যে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলতে পারছে এবং যুদ্ধের অর্থ জোগাড় করতে পারছে, তার মেরুদণ্ড তাদের ট্যাঙ্কারের ছায়াবহর।’’
জ্বালানি থেকে পুতিনের আয় কী কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আমেরিকার আধিকারিকেরা তা দেখছেন। বিভিন্ন তেল সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হতে পারে। চলতি শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। যে করেই হোক, তেল থেকে রাশিয়ার আয় কমাতে মরিয়া ট্রাম্প। তাঁর আশা, এই চাপের কাছে নতিস্বীকার করবেন পুতিন। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তা অত সহজে হবে না। ট্রাম্প যে পদক্ষেপই করুন, সহজে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সমঝোতা হবে না পুতিন এবং জ়েলেনস্কির মধ্যে। তবে ইতিবাচক আলোচনা শুরু হতে পারে।
বুধবার রাশিয়ায় গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ। ক্রেমলিন থেকে এখনও পর্যন্ত সেই বৈঠক প্রসঙ্গে তেমন কিছু জানানো হয়নি। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলেই এই আলোচনা ইতিবাচক হল কি না, সেই সম্ভাবনাও ভাসিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।