৭০তম প্রজাতন্ত্র দিবসে যখন রাজপথ মাতিয়ে দিচ্ছেন দেশের কন্যারা, ঠিক তখনই দুবাইতে ভারতীয় দূতাবাসে ‘অ্যায় মেরে ওয়তন কে লোগো’ গেয়ে জমিয়ে দিল দেশেরই এক খুদে। তাতে কী? এমন দিনে তো বিশ্বের নানান প্রান্তে ভারতীয়রা গেয়েই থাকেন এই গান। কিন্তু ১২ বছর বয়স থেকেই ছোট্ট সুচেতা সতীশ ১০২ ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় গান গাইতে পারে। এই বয়সেই সে নাম লিখিয়ে ফেলেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও।
গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে দুবাইতে ৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের টানা কনসার্টে মোট ১০২ ভাষায় গান গেয়ে গোটা বিশ্বের নজরে চলে এসেছিল সুচেতা। সুচেতার জন্ম আর বেড়ে ওঠা— দুইই দুবাইতে।
দুবাইয়ের ইন্ডিয়ান হাইস্কুলে ক্লাস এইটের ছাত্রী সে। এখন বয়স ১৩। ভারতবর্ষের সব ভাষাতেই গান গাইতে পারদর্শী সুচেতা। তবে বরাবরই ছোট্ট এই মেয়ের পাখির চোখ ছিল বিদেশি ভাষা শেখা।
২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুবাইয়ের এক কনসার্টে মোট ৮৫ ভাষায় গান গেয়েছিল সুচেতা সতীশ। আর তার পরেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠে যায় ছোট্ট মেয়ের।
বয়স ১২ হতে না হতেই ১০২ ভাষায় গান শিখল কী করে ছোট্ট মেয়ে? সুচেতার কথায়, ‘মাত্র এক বছরেই আমি ৮০ ভাষায় গান শিখে ফেলেছিলাম।’
ছোট থেকেই গানের ওস্তাদ সুচেতা। মা-বাবা যেহেতু কেরলের, তা-ই সে মালয়ালম ভাষা আগেই শিখে ফেলেছিল। আর ঠিক করেছিল, হিন্দি আর তামিলও শিখে ফেলবে। সেই শুরু। তার পর থেকে একের পর এক ভাষায় গান গড়গড় করে শিখে ফেলেছে সুচেতা।
স্কুলের কম্পিটিশনে বরাবরই ইংরেজিতে গান গেয়ে এসেছিল সে। এক বার ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীনই এই খুদের মনে ইচ্ছে জাগে, বিদেশি ভাষায় গান গেয়ে ফেলতেই হবে।
২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ২৬ দেশের প্রত্যেকটির একটি করে ভাষায় গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সুচেতা সতীশ। শুধু তা-ই নয়, ভিন্ন ভিন্ন দেশের জার্সি গায়ে গানের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল ছোট্ট এই মেয়ে।
হায়দরাবাদের গায়ক কেসিরাজু শ্রীনিবাস যিনি গজল শ্রীনিবাস বলেই অধিক খ্যাত, তাঁর রেকর্ড ছিল ৭৬ ভিন্ন ভাষায় গান গাওয়ার। ৮৫ ভিন্ন ভাষায় গান গেয়ে সেই গজল শ্রীনিবাসের রেকর্ড এক নিমেষে ভেঙে দিয়েছিল সুচেতা।
বিদেশি ভাষার গানের মধ্যে প্রথমেই জাপানিজ শিখেছিল সুচেতা। কিন্তু এত ভাষার কোনওটাই কঠিন মনে হল না সুচেতার? তার কথায়, ‘‘ফ্রেঞ্চ, হাঙ্গেরিয়ান এবং জার্মান শিখতে আমার অনেক সময় লেগেছিল।’’
২০১৮ সালে কেরলে বন্যা দুর্গতদের জন্য একটি গানও গেয়েছিল সুচেতা সতীশ। সঙ্গীত পরিচালক অজয় গোপালের সুরে ‘মাঝাইলাম মায়াথোরু ওনাস্মৃতি’ গানটি জনপ্রিয়ও হয়েছিল। আর এই গান গেয়ে সুচেতা যে টাকা আয় করেছিল তার পুরোটাই দিয়েছিল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। সে সময়ে সুচেতা বলেছিল, ‘‘দেশের মানুষের জন্য এই সামান্য কিছু করতে পেরে আমি গর্বিত।’’
দুবাইতে এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে সুচেতার গান গাওয়ার ভিডিয়ো টুইটারে পোস্ট করেছে অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো। ইউটিউবে খোঁজ করলেই পাওয়া যায় এই বিস্ময় বালিকার গান। ছোট্ট মেয়ের কিছু সাক্ষাৎকারও আছে সেখানে।