Amritpal Singh

মুখে হিংসার কথা, গায়ে সামরিক পোশাক, পঞ্জাবের অমৃতপাল কি ‘দ্বিতীয় ভিন্দ্রানওয়ালে’?

দুবাই থেকে ফেরা অমৃতপাল তাঁর খলিস্তানি পরিচয় নিয়ে গর্বিত। নিজেকে ‘ভিন্দ্রানওয়ালের অনুগামী’ বলে পরিচয় দেওয়া এই ধর্মীয় নেতা প্ররোচনামূলক বক্তব্যের কারণে আগেও সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪১
Share:
০১ ২২

স্বাধীনতার পর শরণার্থী স্রোত, খলিস্তানি আন্দোলন কিংবা কৃষক আন্দোলন, বার বার অশান্ত হয়েছে পঞ্জাব। স্থিতাবস্থা সরিয়ে পঞ্জাবে নতুন করে অশান্তির আঁচ করছেন কেউ কেউ।

ছবি: পিটিআই।

০২ ২২

এই আশঙ্কার নেপথ্যে রয়েছেন ৩০ বছরের এক যুবক এবং তাঁর সাম্প্রতিক কিছু কার্যকলাপ। স্বঘোষিত খলিস্তানপন্থী অমৃতপাল সিংহ ঘুম উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্জাব সরকারের। কেন্দ্রের গোয়েন্দারাও তাঁকে নিয়ে চিন্তিত।

Advertisement
০৩ ২২

গত বৃহস্পতিবার হাজারেরও বেশি সমর্থক নিয়ে পঞ্জাবের অমৃতসর লাগোয়া আজনালা থানা ঘেরাও করেন অমৃতপাল। দাঙ্গা বাঁধানোয় অভিযুক্ত লভপ্রীত সিংহ ‘তুফান’কে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায় উত্তেজিত জনতা।

০৪ ২২

অমৃতপালের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত লভপ্রীত। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার পরেই লভপ্রীতকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্জাবের আপ সরকার।

০৫ ২২

রাজ্যে নৈরাজ্য এবং অশান্তি তৈরি করা শক্তির কাছে আপ সরকার ‘আত্মসমর্পণ’ করেছে বলে অভিযোগ তোলে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি। আপ সরকারের তরফে অবশ্য জানানো হয়, অমৃতপাল এবং তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপই করা হয়েছে।

০৬ ২২

কিন্তু কে এই অমৃতপাল, যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, এত ডামাডোল? পঞ্জাবের রাজনীতির সঙ্গে যাঁদের কমবেশি পরিচয় রয়েছে, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই অমৃতপালের মধ্যে জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।

০৭ ২২

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, অমৃতপাল নিজের পরিচয় দিচ্ছেন ভিন্দ্রানওয়ালের উত্তরসূরি হিসাবেই। অমৃতপাল ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’ বলে একটি ধর্মীয় সংগঠন চালান। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় ‘পঞ্জাবের উত্তরাধিকারী’।

০৮ ২২

এই স‌ংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা পঞ্জাবের অভিনেতা তথা রাজনীতিক দীপ সিধু। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান দীপ। তাঁর মৃত্যুর পর সংগঠনের প্রধান হন অমৃতপাল।

০৯ ২২

প্রথম দিকে সংগঠনটি বঞ্চনার বিরুদ্ধে পঞ্জাবের জনগণের দাবিদাওয়া নিয়ে লড়ার কথা বলত। কিন্তু অমৃতপাল দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠনের কার্যকলাপ আরও ‘চরমপন্থী’ হয়ে যায়। সরাসরি স্বতন্ত্র খলিস্তানের দাবি জানাতে শুরু করে ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’।

১০ ২২

কিছু বছর আগে দুবাই থেকে ফেরা অমৃতপাল তাঁর খলিস্তানি পরিচয় নিয়ে রীতিমতো গর্বিত। নিজেকে ‘ভিন্দ্রানওয়ালের অনুগামী’ বলে পরিচয় দেওয়া এই ধর্মীয় নেতা নানা প্ররোচনামূলক বক্তব্য রেখে আগেও সংবাদ শিরোনামে এসেছেন।

১১ ২২

ভিন্দ্রানওয়ালের মতোই সামরিক পোশাক পরেন অমৃতপাল। এমনকি দীপের মৃত্যুর পর সংগঠনের নেতা হিসাবে যখন তাঁকে বেছে নেওয়া হয়, তখন এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ হয়েছিল ভিন্দ্রানওয়ালের গ্রাম মোগা জেলা রোদ গ্রামে। পঞ্জাব পুলিশের একটি সূত্র বলছে, অমৃতপালকে নেতা বেছে নেওয়ার ওই কর্মসূচিতে হাজির ছিলেন প্রায় এক হাজার সমর্থক।

১২ ২২

খলিস্তানের দাবিতে রক্তঝরা আন্দোলন আগেও দেখেছে পঞ্জাব। অমৃতপালকে দেখে অনেকেরই অশান্ত আটের দশকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। নিজেকে ‘ভিন্দ্রানওয়ালের উত্তরসূরি’ বলে পুরনো স্মৃতিকে আরও উস্কে দিচ্ছেন অমৃতপাল নিজেই।

১৩ ২২

খলিস্তানি নেতা ভিন্দ্রানওয়ালের বিরুদ্ধেও সরকারের নাকের ডগায় বসে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। গোঁড়া এবং রক্ষণশীল শিখনেতা হিসাবে পরিচিত ভিন্দ্রানওয়ালে সে সময় গোটা পঞ্জাবের ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছিলেন।

১৪ ২২

ভিন্দ্রানওয়ালের বিরুদ্ধে শান্তিকামী, তুলনায় নরমপন্থী শিখ এবং হিন্দুদের হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ভিন্দ্রানওয়ালের রোষে পড়েন। ভিন্দ্রানওয়ালের পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ ওঠে শিখদের অন্যতম শীর্ষ ধর্মীয় সংগঠন অকাল তখ্‌তের বিরুদ্ধে।

১৫ ২২

ভিন্দ্রানওয়ালে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, দলবল নিয়ে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের বিরুদ্ধে ঘাঁটি গাড়লে, ১৯৮৪ সালের ১ জুন অপারেশন ব্লু স্টার চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। ভারতীয় সেনার হামলায় ভিন্দ্রানওয়ালে মুক্ত হয় শিখদের পবিত্র তীর্থ স্বর্ণমন্দির।

১৬ ২২

ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করে থাকেন, ভিন্দ্রানওয়ালের মৃত্যু পঞ্জাবে সাময়িকভাবে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনলেও ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’র অভিঘাত জাতীয় রাজনীতিতে পড়েছিল। অনেক শিখ ধর্মাবলম্বী স্বর্ণ মন্দির এবং তাঁর ভিতরে থাকা অকাল তখ্‌তের উপর ‘আঘাত’ মেনে নিতে পারেননি।

১৭ ২২

১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা। এর সঙ্গে ‘অপারেশন ব্লু স্টারে’র কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা তর্কসাপেক্ষ, তবে খলিস্তান পঞ্জাবের রাজনীতি থেকে কখনওই হারিয়ে যায়নি। বার বার তা ভেসে উঠেছে।

১৮ ২২

কিছু দিন আগেই অমৃতপাল হুমকির সুরে জানিয়েছেন, হিংসা এখনও শুরুই হয়নি। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো অবস্থা হবে অমিত শাহেরও।”

১৯ ২২

খলিস্তান প্রসঙ্গে অমৃতপাল নিজের মনোভাব জানিয়ে বলেছেন, “এটি একটি আদর্শ এবং আদর্শ কখনও মরে না। আদর্শের জন্য কী করতে হয়, তা আমরা জানি।” গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, অমৃতপালের উত্থানের নেপথ্যে বিদেশি মদতও থাকতে পারে।

২০ ২২

কানাডা দীর্ঘ দিন ধরেই খলিস্তানিদের নিরাপদ স্থান হিসাবে পরিচিত ছিল। কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার ভারতীয় দূতাবাসের বাইরেও হঠাৎ খলিস্তানি পতাকা দেখা যায়। অমৃতপালের স্ত্রীও বিদেশে থাকেন। পঞ্জাবে পরিবারের পরিবহণ ব্যবসা দেখার পাশাপাশি জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে সমর্থকদের স্বতন্ত্র পঞ্জাব গঠনের স্বপ্ন দেখান পঞ্জাবের এই উত্তরাধিকারী।

২১ ২২

ভিন্দ্রানওয়ালের মতোই খলিস্তানি আন্দোলনকে ধর্মের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন অমৃতপাল। বৃহস্পতিবার থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে ছিল শিখদের ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহিব। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এই প্রসঙ্গে অমৃতপালের কড়া সমালোচনা করে জানান, পবিত্র গুরু গ্রন্থসাবিবকে যাঁরা এ ভাবে ব্যবহার করেন, তাঁরা পঞ্জাবের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না।

২২ ২২

পঞ্জাবের লেখক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমনদীপ সান্ধু মনে করেন, পঞ্জাবে যুব সম্প্রদায়ের অনেকেই বেকার এবং মাদকাসক্ত। এই অংশটার কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেন অমৃতপাল। নিজেকে ভিন্দ্রানওয়ালের উত্তরসূরি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অমৃতপাল যদি হিংসার আশ্রয় নেন, তবে তাঁকে তাঁর পূর্বসূরির মতোই সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement