দেহ উদ্ধার অসম্ভব, আদালতে জানাতে পারে মেঘালয়  

সুপ্রিম কোর্টের কাছে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করার আর্জি জানাতে পারে মেঘালয় সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা  

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০২
Share:

শ্রমিকদের পরিবারগুলি চাপ দিচ্ছে যতটা সম্ভব অক্ষত দেহ তুলে আনতে হবে ৩৭০ ফুট গভীর কসানের কয়লাখনি থেকে। কিন্তু নৌসেনা রিমোট চালিত যানের সাহায্যে ৩৮ দিন পরেও মাত্র একটি দেহের সন্ধান পেয়েছে। নীল জিনস ও লাল গেঞ্জি পরা সেই দেহটিও কয়েক ফুট টেনে আনার চেষ্টা করতেই খসে গিয়েছে মাংস, চামড়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। তাই সুপ্রিম কোর্টের কাছে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করার আর্জি জানাতে পারে মেঘালয় সরকার।

Advertisement

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া তিন শতাধিক মানুষ, ওড়িশা, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, বিশাখাপত্তনম থেকে আসা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নত যন্ত্রপাতি, নৌসেনার দল, এনডিআরএফ বাহিনীর খরচ বইতে নাজেহাল জেলা প্রশাসন। প্রতি দিন শক্তিশালী পাম্পগুলি চালাতে লক্ষ টাকার জ্বালানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। তারপরেও কোনও লাভ হয়নি। কমেনি জলতল। নৌসেনা স্পষ্ট জানিয়েছে, জলের তলায় এতদিন থাকা গলিত দেহের অধিকাংশ অংশই তুলে আনা সম্ভব হবে না। কিন্তু আটকে থাকা ১৬ জন শ্রমিকের পরিবারের দাবি রীতি মেনে সৎকারের জন্য দেহাংশ চাইই।

রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পিটার ইংতি জানান, দেহগুলি উদ্ধার যে কার্যত অসম্ভব তা জেলাশাসক পরিবারগুলিকে বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রয়েছে বলেই রাজ্য সরকার উদ্ধার অভিযান জারি রেখেছে। জেলাশাসক ফেডরিক এম ডপ্থ বলেন, ‘‘আমরা রিমোট যানের ক্যামেরা ও মনিটরের মাধ্যমে পরিবারগুলিকে দেখাচ্ছি সামান্য টানলেই দেহ থেকে অংশ খুলে জলে গুলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দেহ তোলা সম্ভব নয়। দেহ তোলার জন্য গহ্বরের জলও অনেক কমাতে হবে। তবে ডুবুরিরা ভিতরে নামতে পারবেন। কিন্তু ১৬০ ফুট গভীর জমা জল একটুও কমেনি।’’

Advertisement

স্থানীয় শ্রমিকদের মতে তা কমতে মাস পাঁচেক লাগবে। ততদিনে দেহগুলির চিহ্নও থাকবে না। রাজ্য সরকার বাস্তব চিত্র তুলে ধরে আগামী কাল সুপ্রিম কোর্টে উদ্ধারকাজ বন্ধের আর্জি জানানোর কথা ভাবছে। সরকারের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের কথা মেনে ভারত ও বিদেশের প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব বিশেষজ্ঞকে তলব করা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আর কিছু করার নেই।

জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া ওই খনির আশপাশে পরীক্ষা চালানোর পরে জানায়, লিটিন নদীর জল সম্ভবত ওই খনি গহ্বরে ঢুকছে না। নদীর জলতল গুহা থেকে ১০-১১ মিটার উঁচু। হতে পারে, শ্রমিকরা ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার ও গুহার মধ্যের দেওয়াল ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। লিটিন নদীর তলায় কোথাও পাথরের চ্যুতি আছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। আশপাশের পরিত্যক্ত গুহাগুলির মধ্যেও কয়েক বছরের জল জমা হয়েছিল। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রলজি ও ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ভূগর্ভে কার্যকর রাডার ও সোনার যন্ত্রের মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে জানান, মাটি থেকে ১১৫ মিটার নীচে মূল গহ্বর থেকে অন্তত চারটি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে। কসানের গুহায় উপরের চুনাপাথরের স্তর থেকে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছিল। তা নীচের স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। উপর ও নীচের চুনাপাথর স্তরের মধ্যবর্তী অংশে ছিল কয়লার স্তর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন