বিধানসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার ডালটনগঞ্জে। ছবি: সৈকত চট্টোপাধ্যায়।
লোকসভায় তাঁর ‘জেহাদ’ ছিল দিল্লির মসনদে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এ বার ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা ভোটেও একই ভাবে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে গেলেন নরেন্দ্রভাই মোদী। লোকসভায় তাঁর লড়াই ছিল নেহরু-গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে। আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে তাঁর লক্ষ্য সাঁওতাল পরগনার সোরেন পরিবার।
সরাসরি নাম না করে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের কাছে মোদীর বক্তব্য খুব স্পষ্ট, “ঝাড়খণ্ডকে যদি আপনারা উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চান তবে এ রাজ্য থেকে পরিবারবাদ হঠান। এই বাপ-ছেলে, ভাই-ভাতিজাদের হঠিয়ে দিন।” তাঁর কথায়, “তা যদি না করেন তবে ওই পরিবারটি দিনের পর দিন ধনবান হবে। আর ঝাড়খণ্ডের মানুষ গরিব হবে।” একই সঙ্গে মোদী এটাও বুঝিয়ে দিলেন, ঝাড়খণ্ডের চতুর্মুখী লড়াইয়ে বিজেপি-র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু শিবু সোরেন-হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাই, কংগ্রেস নয়।
পাঁচ দফার ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ আগামী মঙ্গলবার। আজ, শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি-প্রভাবিত পলামু জেলার ডালটনগঞ্জে তাঁর প্রথম প্রচার সভাটি করেন। এবং প্রথম সভা থেকেই রাজ্য-রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি ও অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে তাঁর দলের লড়াইকে তিনি নিজের লড়াই হিসেবে নিয়েছেন। ভোটের আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী পদ-প্রত্যাশীদের হতাশ করে নেতা-কর্মীদের এক সভায় স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে আমরা লড়ব না। দল লড়বে একটি মুখকে সামনে রেখেই। সেই মুখ নরেন্দ্র মোদীর।” আজ মোদীর বক্তব্যেও সেই সুরই ধরা পড়েছে। ঝাড়খণ্ডবাসীর উদ্দেশে তাঁর আবেদন, “খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ঝাড়খণ্ডের উন্নয়ন যদি চান তবে আমায় (আমাদের নয়) একটা সুযোগ দিন।”
ব্রিসবেন-সিডনি থেকে সদ্য ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ ডালটনগঞ্জের সভায় বোঝা গেল সেই ঘোর তাঁর এখনও কাটেনি। মোদীর কথায়, “এই দ্বীপ-রাষ্ট্রটির সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের অনেক মিল। জনজাতি অধ্যুষিত অস্ট্রেলিয়া যেমন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ তেমনই ঝাড়খণ্ড। কিন্তু সেখানে উন্নয়নের ঢল। আর এখানে শুধুই লুঠ।” সিডনির অনাবাসী ভারতীয়দের সভায় যে সুরে তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি বড় কথার মানুষ নন, ছোট ছোট কাজের মানুষ, সেই একই সুর ডালটনগঞ্জেও শোনা গেল মোদীর গলায়, ‘‘আপনারা আগে অনেক প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়তো শুনেছেন। খুব বড় বড় কথা। কিন্তু আমি বড় কথার লোক নই। আমি মা-বোনেদের জন্য শৌচালয় গড়া বা স্কুলে ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচালয়ের মতো ছোট ছোট কাজের কথাই বলি।” মোদীর কথাকে সহর্ষে স্বাগত জানান উপস্থিত মহিলারা।
পনেরো মিনিটের বক্তব্যে মোদী কংগ্রেসের নাম উচ্চারণ করেন মাত্র দু’বার। তাও ওই ঝাড়খণ্ডের অনুন্নয়ন প্রসঙ্গেই। তবে জঙ্গি-প্রভাবিত পলামুতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি মাওবাদী প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মাওবাদী মোকাবিলায় মোদী যেমন উন্নয়নকেই হাতিয়ার করেছিলেন, আজও সেই উন্নয়নই ছিল তাঁর অস্ত্র। ঝাড়খণ্ডের শিল্পায়নের পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্যের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন তাঁর সরকারের নদী-সংযোগ প্রকল্পের কথা। ঘোষণা করেছেন, “ঝাড়খণ্ডে পাঁচটি প্রধান নদী রয়েছে। কিন্তু কৃষকরা চাষের জন্য জল পান না। আমি কৃষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী সেচ প্রকল্পের আওতায় এ রাজ্যের জন্যও একটি প্রকল্প তৈরি করছি। রাজ্যের পাঁচটি নদীকে সংযুক্ত করা হবে। আমায় আপনারা একবার সুযোগ দিন।”
মোদী বলেন, “আজ জনসভায় যত ভিড় হয়েছে, লোকসভায় তার অর্ধেকও ছিল না। তা সত্ত্বেও আপনারা বিজেপিকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন। আজ তার কয়েক গুণ বেশি মানুষ এই সভায় এসেছেন।” এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর সহাস্য মন্তব্য, “হাওয়া কোন দিকে আমি বেশ বুঝতে পারছি।” ডালটনগঞ্জ ছাড়া মোদী এ দিন চান্দোয়াতেও একটি সভায় ভাষণ দেন।