চোখের জলে ত্রিপুরার ঋণ স্বীকার মিনু হকের

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনীর পাশবিক অত্যাচারের নাগাল থেকে বাঁচার জন্য ভাইয়ের হাত ধরে নদীনালা, জঙ্গল পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৩ অগস্ট তিনি ওপার বাংলা (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) থেকে চলে এসেছিলেন ত্রিপুরায়। তখন তিনি ছিলেন ১৬-১৭ বছরের এক কিশোরী। কিছু দিনের মধ্যেই ভারত সরকারের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পশ্চিম ত্রিপুরার বিশালগড়ে গড়ে ওঠা একটি স্বাস্থ্য শিবিরে নার্স হিসেবে যুক্ত হয়ে যান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আগরতলা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের রাজাকার বাহিনীর পাশবিক অত্যাচারের নাগাল থেকে বাঁচার জন্য ভাইয়ের হাত ধরে নদীনালা, জঙ্গল পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৩ অগস্ট তিনি ওপার বাংলা (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) থেকে চলে এসেছিলেন ত্রিপুরায়। তখন তিনি ছিলেন ১৬-১৭ বছরের এক কিশোরী। কিছু দিনের মধ্যেই ভারত সরকারের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পশ্চিম ত্রিপুরার বিশালগড়ে গড়ে ওঠা একটি স্বাস্থ্য শিবিরে নার্স হিসেবে যুক্ত হয়ে যান। বাগান বাড়িতে গড়ে ওঠা সেই স্বাস্থ্য শিবিরে জখম মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় কয়েক মাস কেটে যায় তাঁর। দেখতে দেখতে যুদ্ধের দামামাও শেষ ডিসেম্বরে। তার পর এক আত্মীয়ের সঙ্গে চলে যান কলকাতায়।

Advertisement

কলকাতায় থাকাকালীন সেখানকার সাংস্কৃতিক চর্চায় মুগ্ধ হয়ে যুদ্ধের আতঙ্ক-তাড়িত সেই কিশোরী উপলব্ধি করে, “সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনই মানুষের ‘গভীর অসুখ’ সারাবার একমাত্র পথ।”

১৯৭২ সালেই বাংলাদেশে ফিরে বহু কষ্টে অত্যাচারিত ভাইবোনদের এক জায়গায় করেন তিনি। পরিবারের সদস্য এবং আশপাশের অত্যাচার-জর্জরিত মানুষের আতঙ্ক সারিয়ে সচেষ্ট হন তাঁদের সকলকে ‘জগতের আনন্দ যজ্ঞে’ যুক্ত করতে। বেছে নিয়েছিলেন ‘কী আনন্দ, কী আনন্দ.... দিবারাত্রি নাচে মুক্তি...’র পথ। এক দিকে উচ্চশিক্ষা, অন্য দিকে নৃত্যচর্চা। পরবর্তী কালে সেই কিশোরীই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের প্রথম সারির নৃত্যশিল্পী মিনু হক। তৈরি করেছেন নিজের নৃত্য গোষ্ঠী—‘পল্লবী’।

Advertisement

বর্তমানে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্প গোষ্ঠী সংস্থার সভাপতি এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির প্রধান তিনি। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ কালচারাল রিলেসন্স (আইসিসিআর)-এর সহযোগিতায় বর্তমানে ষাটোর্ধ্ব এই শিল্পী তিন দিনের ত্রিপুরা সফরে এসেছেন। রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আমন্ত্রণে ‘পল্লবী’কে নিয়ে এসেছেন ত্রিপুরা সফরে। গত কাল রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘শাপমোচন’ মঞ্চস্থ করলেন রবীন্দ্র ভবনে।

স্মৃতিরোমন্থন করার সময়ে চোখের জলে ভেসে গেলেন মিনু। বললেন, ‘‘ত্রিপুরার কাছে আমি আজীবন ঋণী। পাষণ্ড রাজাকারদের হাতে বন্দি হওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন