—ফাইল চিত্র।
তাঁর লড়াই শুধুমাত্র দুই রাজধানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। নোট সঙ্কট ঘিরে শুরু হওয়া মোদী-বিরোধী লড়াইকে তিনি গোটা দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। সে কথা আগেই জানিয়েছেন তিনি। দিল্লি-কলকাতার পর তাই তাঁর প্রথম প্রতিবাদ র্যালি উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউতে। যে গোবলয়ে ঝড় তুলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়েছিলেন মোদী, সেই গোবলয়ের প্রাণকেন্দ্র থেকেই জাতীয় স্তরে মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া শুরু করছেন বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার লখনউয়ের গোমতীনগর এলাকায় র্যালি করবেন তৃণমূলনেত্রী। সোমবার কলকাতায় আক্রোশ দিবসের মিছিলে নেতৃত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলেই কলকাতা বিমানবন্দর থেকে লখনউয়ের বিমান ধরেন। লখনউতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ভিভিআইপি অতিথিশালায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লখনউ পৌঁছনোর আগেই অবশ্য সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে শহরে পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়। নোট বাতিলের প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা করার যে কর্মসূচি নিয়েছেন, সে সবের প্রস্তুতির দায়িত্ব মুকুলবাবুরই। গত সপ্তাহেই তিনি লখনউ থেকে এক দফা ঘুরে গিয়েছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে গিয়েছেন। চূড়ান্ত ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে সোমবার সকালেই মুকুলবাবু কলকাতা থেকে লখনউ পৌঁছন। দিনভর র্যালির প্রস্তুতি পর্বের তদারকি করেন। সোমবার দিনভর লখনউ শহর জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার প্রচার চালাতে দেখা গিয়েছে একাধিক প্রচার-গাড়িকে। মুকুল রায় এ দিন লখনউতে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করেছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গলবারের র্যালিতে হাজির থাকতে তিনি অনুরোধ করেছেন।
মমতার কর্মসূচি ঘিরে গোবলয়ের রাজনৈতিক অলিন্দে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সোমবার ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন দল সমাজবাদী পার্টি (সপা) কী অবস্থান নিতে চলেছে? সপা নোট বাতিলের বিরোধিতাই করছে। কিন্তু সংসদের ভিতরে সপার সুর যতটা চড়া, বাইরে ততটা নয়। লখনউতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাকে কেন্দ্র করে সপার সেই অবস্থানে কি কোনও বদল আসবে? সপা সুপ্রিমো মুলায়ম বা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ বা সপার অন্য কোনও প্রতিনিধিকে কি মঙ্গলবার মমতার মঞ্চে দেখা যাবে? প্রশ্ন এখন তা নিয়েই। এ প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেছেন, ‘‘আমি গত সপ্তাহে সপা-র দুই নেতার সঙ্গেই কথা বলেছি। এই ইস্যুতে দু’জনেরই নৈতিক সমর্থন রয়েছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে সপা-র কোনও প্রতিনিধি থাকবেন কি না, তা মঙ্গলবারই বোঝা যাবে।’’
লখনউতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া হোক বা না হোক, তৃণমূলকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন যে সপা দিচ্ছে, তা কিন্তু স্পষ্ট। লখনউ বিমানবন্দর থেকে বেরলেই চোখে পড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত বিরাট দু’টি হোর্ডিং। এক তৃণমূল নেতার কথায়, শুধু বিমানবন্দরের গেটের সামনেই নয়, গোটা লখনউ শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হোর্ডিং লাগানোর অনুমতি লখনউ প্রশাসন দিয়েছে। রাজ্য সরকারের সম্মতি না থাকলে লখনউ প্রশাসন এই অনুমতি দিত না বলেই ওই তৃণমূল নেতা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: মমতার সভায় আসবেন লালু-পুত্র
নোট বাতিলের পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এই ইস্যুতে গোটা দেশে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার পিছনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব যে অনেকটাই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় নেই। এই সাফল্যকে হাতিয়ার করে মমতা এ বার যে জাতীয় রাজনীতিতেও অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুখ হয়ে উঠতে চাইছেন তাও স্পষ্ট। এ হেন পরিস্থিতিতে দিল্লি-কলকাতার বাইরে মমতা লখনউকে প্রথম সভাস্থল হিসেবে বেছে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার মধ্যে গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনই এখন পাখির চোখ মমতার। তাই মোদী যে রাজ্যের সাংসদ, সেই রাজ্য থেকেই মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছোড়া শুরু করতে চাইছেন মমতা। তবে উত্তরপ্রদেশ কিন্তু শুধু মোদীর নির্বাচনী ক্ষেত্র হিসেবে বিজেপি-র কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই রাজ্যে ৮০টির মধ্যে ৭৩টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তাই ২০১৯-এ বিজেপিকে ধরাশায়ী করতে হলে এই উত্তরপ্রদেশেই তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেওয়া দরকার। জাতীয় রাজনীতির মানচিত্রে অন্যতম প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে মমতা যে উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েও বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে প্রস্তুত, মঙ্গলবারের র্যালি সম্ভবত সেই বার্তাই দিতে চলেছে।