গোর্ধন ঝড়াপিয়া এবং নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে কট্টর মোদী সমালোচক গোর্ধন ঝড়াপিয়ার নাম ঘোষণা করল বিজেপি। প্রায় রাজনৈতিক অবসরে চলে যাওয়া গুজরাত বিজেপির এই নেতাকে উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়ায় বিজেপি সহ অবাক দেশের রাজনৈতিক মহল। মোদী-শাহ জুটির কট্টর সমালোচক হলেও বরাবরই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পরিবারের অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ বৃত্তে ঘোরাফেরা করেন গোর্ধন। তাহলে কি বিজেপিতে মোদী-শাহ জুটিকে ছাপিয়ে দীর্ঘতর হচ্ছে সঙ্ঘের ছায়া? উঠছে সেই প্রশ্নও।
গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন খোদ অমিত শাহ। আর শুধু দায়িত্বে থাকাই নয়, উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭১টি আসন দখল করে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য উত্তরপ্রদেশে অপেক্ষা করছে কঠিন লড়াই। সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির জোটের সামনে আধিপত্য টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাই উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব কার হাতে যায়, তা নিয়ে একটা কৌতূহল ছিলই রাজনৈতিক মহলে। যদিও সেই দায়িত্ব গোর্ধন ঝড়াপিয়ার হাতে যাবে, সেই ইঙ্গিত কোনও ভাবেই ছিল না কারও কাছে।
গোর্ধন ঝড়াপিয়ার রাজনৈতিক কেরিয়ারের দিকে তাকালে দু’টি বিষয় মূলত সামনে আসে। প্রথমত, গুজরাতের এই বিজেপি নেতা কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ। দ্বিতীয়ত, তিনি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটির কট্টর সমালোচক। এতটাই যে মোদী-শাহ জমানায় একসময় তিনি বিজেপি ছেড়ে নতুন দলও তৈরি করে ফেলেছিলেন।
আরও পড়ুন: কর্পোরেট ভঙ্গিতে বিজ্ঞাপন, অ্যাপের মাধ্যমে চাঁদা দেওয়ার ডাক বিজেপির, নেপথ্যে কি সমীক্ষা?
২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় অবশ্য গুজরাত বিজেপিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন গোর্ধন। দাঙ্গায় সময় তিনি ছিলেন খোদ বিজেপি সরকারের পুলিশমন্ত্রী। সেই দাঙ্গায় জড়িত থাকার অভিযোগের তালিকায় তাঁর নাম ছিল উপরের দিকেই। গুজরাত দাঙ্গার তদন্তে তাঁকে তিনবার জেরাও করা হয়। কিন্তু বাকি অনেকের মতো শেষ পর্যন্ত ক্লিনচিট পান তিনিও। সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দেওয়া হয় তাঁকে। যদিও এর পর থেকেই শুরু হয় মোদীর উত্থান, আর রাজনৈতিক ভাবে আরও কোণঠাসা হয়ে যেতে শুরু করেন ঝড়াপিয়া। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে। গুজরাত বিজেপিতেও তথৈবচ ছিল তাঁর অবস্থা। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে বিজেপি ছেড়ে নিজের দল তৈরির কথা ঘোষণা করেন ঝড়াপিয়া।
পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে সঙ্ঘ পরিবারের উদ্যোগে ফের বিজেপিতে ফেরেন ঝড়াপিয়া। যদিও মোদী-শাহ জুটির সঙ্গে তাঁর সমঝোতা বা বোঝাপড়ার কোনও ইঙ্গিত কোথাও পাওয়া যায়নি। গুজরাত বিজেপিতে তাঁর অবস্থান ছিল নাম কা ওয়াস্তে। ২০১৭ সালে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। সবাই প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁকে। মনে করা হচ্ছিল তিনি রাজনৈতিক অবসরের দিকে এগোচ্ছেন।
আরও পড়ুন: তিন রাজ্যে হারের ধাক্কা! ১৭ নয়া পর্যবেক্ষক আনলেন অমিত
ঠিক সেই সময়ই আগামী লোকসভা নির্বাচনে নিজেদের জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে তাঁকে দায়িত্ব দিল বিজেপি। এমন একটা সময়, যখন হিন্দি বলয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে বিজেপি। সদ্যসমাপ্ত রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় আর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মিলেছে সেই স্পষ্ট ইঙ্গিত। কিন্তু কী কারণে তাঁকে উত্তরপ্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ফিরিয়ে আনল বা আনতে বাধ্য হল বিজেপি, প্রথমেই সামনে আসছে সেই রাজনৈতিক প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: তেলঙ্গানার সমস্যা না জোট নিয়ে পরামর্শ? মোদী-কেসিআর বৈঠক নিয়ে খোঁচা চন্দ্রবাবুর
কারও মতে, সদ্যসমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় হারের পর বিজেপিতে প্রভাব বাড়াচ্ছে আরএসএস। মোদী-শাহ জুটির অপছন্দের কাউকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়ে সেই বার্তাই পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। সে ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখতে চাইছে আরএসএস। কেউ আবার খুঁজে পাচ্ছেন জাত-পাত ভিত্তিক রাজনৈতিক সমীকরণ। গোর্ধন ঝড়াপিয়া গুজরাতের কৃষক সম্প্রদায় পাতিদার গোষ্ঠীর লোক। তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে উত্তরপ্রদেশের কৃষক বেল্টে প্রভাব বাড়াতে চাইছে বিজেপি, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা।
অনেকে আবার মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদী- অমিত শাহ চমকের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বিভিন্ন সময়ই তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে চমক লক্ষ্য করা যায়। সেই চমকের রাজনীতিরই নতুন সংযোজন গোর্ধন ঝড়াপিয়া।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)