কংগ্রেস সদর দফতরে দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে সনিয়া গাঁধী। মাঝে প্রিয়রঞ্জনের ছেলে মিছিলও। —নিজস্ব চিত্র।
নয়াদিল্লির ২৪ নম্বর আকবর রোড থেকে কলকাতার ১০৪/ই লালমোহন ভট্টাচার্য রোড— প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে শোকের ছায়া সর্বত্রই। সোমবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সদর দফতর চত্বর উপচে পড়ল প্রয়াত নেতার মরদেহে অন্তিম শ্রদ্ধা জানানোর ভিড়ে। মঙ্গলবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতরের জন্যও সম্ভবত একই ছবি অপেক্ষায়। দীর্ঘ দিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। কিন্তু জনপ্রিয়তা যে হারাননি, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে সাধারণ কর্মী— সব অংশের প্রতিক্রিয়াতেই তার প্রমাণ মিলল সোমবার। তবে শুধু কংগ্রেস নয়, অন্যান্য দলও গভীর শোক প্রকাশ করল প্রিয়রঞ্জনের প্রয়াণে। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, শোকবার্তা এল সব মহল থেকেই।
পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর শেষকৃত্য, এ দিন নবান্নে সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ দিন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় প্রিয়রঞ্জনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মোদী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ছিলেন একজন জনপ্রিয় নেতা, যাঁর প্রগাঢ় রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ছিল। ভারতে ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে তিনি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। তাঁর প্রয়াণে আমি শোকাহত। দীপা দাশমুন্সি-সহ তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের প্রতি আমার সহমর্মিতা রইল।’’
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও প্রিয়রঞ্জনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ‘‘তাঁর অভাব চিরকাল অনুভূত হবে’’, টুইট প্রণববাবুর।
আরও পড়ুন: প্রয়াত প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি
আরও পড়ুন: ‘আজ আবার আমার পিতৃবিয়োগ হল’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও শোক প্রকাশ করেছেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে। টুইটারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বার্তা, ‘‘প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির প্রয়াণে আমি শোকাহত। স্বজনহারা পরিবারকে আমি সহমর্মিতা জানাচ্ছি, তাঁদের জন্য প্রার্থনা করছি।’’
মরদেহে অন্তিম শ্রদ্ধা কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর। —নিজস্ব চিত্র।
প্রিয়রঞ্জনের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোমবার শোক ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রিয়দার চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি জীবন্মৃত অবস্থায় ছিলেন। কোনও কিছু বোঝার ক্ষমতা ছিল না। শয্যাশায়ী ছিলেন। প্রিয়দার সেই কর্মপ্রেরণা, কর্মোন্মাদনাটাই আর ছিল না ২০০৮ থেকে। তবু জনপ্রিয় নেতা বেঁচে তো ছিলেন।’’ প্রিয়রঞ্জনের প্রয়াণের খবর আসার পর সোমবার রাজ্যে অর্ধ দিবস ছুটি ঘোষিত হয়। আগামী কাল দুপুর ১২টার পর বিধানসভাতেও ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সোমবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছচ্ছে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দেহ। রাতে তাঁর দেহ পিস হাভেনে রাখা থাকবে। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে প্রদেশ কংগ্রেস সদর দফতর বিধান ভবনে এবং পরে দক্ষিণ কলকাতার রানি ভবানী রোডে প্রিয়রঞ্জনের বাসভবনে মরদেহ শায়িত থাকবে কিছু ক্ষণ। তার পর হেলিকপ্টারে দেহ পাঠানো হবে প্রিয়রঞ্জনের পৈতৃক ভিটে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে। সেখানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হবে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।