ভারতে জার্মান চ্যান্সেলর

মোদীর হাতে দুর্গামূর্তি, ২০০ কোটি ইউরোও

দীর্ঘ দু’দশক জার্মানিতে কাটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরলেন দশপ্রহরণধারিনী! ভারত এবং জার্মানির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এই ঘটনাকে শুভ সূচক বলেই ঘরোয়াভাবে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:১০
Share:

দুর্গামূর্তির প্রত্যাবর্তন। সোমবার নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। ছবি: পিটিআই

দীর্ঘ দু’দশক জার্মানিতে কাটিয়ে অবশেষে ঘরে ফিরলেন দশপ্রহরণধারিনী! ভারত এবং জার্মানির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এই ঘটনাকে শুভ সূচক বলেই ঘরোয়াভাবে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন সাউথ ব্লকের কূটনীতিকরা।

Advertisement

দশম শতকের এই দুর্গামূর্তিটি বিশ বছর আগে কাশ্মীর থেকে চোরাপাচার হয়ে গিয়েছিল জার্মানিতে। স্টুটগার্টের একটি জাদুঘরে এত দিন ছিল সেটি। ২০১২ সালে ভারতের নজরে পড়ার পরে শুরু হয় সেটিকে ফেরানোর জন্য দীর্ঘ কূটনৈতিক দৌত্য। যার ফলস্বরূপ আজ ভারত সফরে এসে সে দেশের চ্যান্সেলার আঙ্গেলা মের্কেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তুলে দিলেন সেই মূর্তি।

দু’দেশের মধ্যে এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশেই প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ তুলে ধরেছেন তাঁর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন। তাতে সাড়া দিয়ে প্রতিরক্ষা থেকে শিক্ষা, দূষণমুক্ত শক্তি থেকে ভারতে মসৃণ বিনিয়োগব্যবস্থা তৈরি— মোট ১৮টি চুক্তিপত্র সই করেছে দু’দেশ। পাশাপাশি, কথা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধিতায় জার্মানি তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের গাঁটছড়া আরও পোক্ত করার বিষয়টি নিয়েও। পাকিস্তানের নাম না-করে আজ বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, ‘‘ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতা কথা বলেছেন। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়েও তাঁরা আলোচনা করেছেন।’’

Advertisement

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদেরই মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম শক্তিধর এই দেশটির সঙ্গে (গোটা ইউনিয়নের ২০ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ থাকে জার্মানির জন্য) আজকের এই বৈঠক ভারতের শিল্প, বাণিজ্য এবং বিকল্প শক্তিক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক হয়ে থাকবে। ‘ক্লিন এনার্জি করিডর’-এর জন্য জার্মানির কাছ থেকে ২০০ কোটি ইউরোরও বেশি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে নয়াদিল্লি। মের্কেলের সঙ্গে বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ‘‘ভারত এবং জার্মানির মধ্যে দূষণমুক্ত শক্তি ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতা হয়েছে। উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করব আমরা।’’

দূষণমুক্ত শক্তির পাশাপাশি মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অগ্রাধিকার পেয়েছে। বিদেশসচিব জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘ভারতের বাণিজ্যিক আবহাওয়া যে আগের থেকে অনেকটাই উন্নত হয়েছে এ কথা ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন মের্কেল। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটিকে আজ বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ খুলে দেওয়ায় যে সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে তাতে জার্মান নেতৃত্ব উত্তেজিত।’’ বিদেশসচিব জানিয়েছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে জার্মান সংস্থা ভারতে বিনিয়োগ করতে পারে, তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে।

ভারতে জার্মান সংস্থাগুলোর কাজ মসৃণ এবং দ্রুত করার জন্য দু’দেশ আজ এক ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ বিনিয়োগ মেকানিজমের কথা ঘোষণা করেছে। এর ফলে এ দেশে জার্মান উদ্যোগ যাতে কোনও ভাবেই লাল ফিতের ফাঁসে আটকে না যায় তা বিশেষ ভাবে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী কথায়, ‘‘উৎপাদন শিল্প, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র এবং আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমাদের অংশীদারিত্ব বাড়বে। পাশাপাশি সন্ত্রাস এবং চরমপন্থা বিরোধিতার ক্ষেত্রেও দু’দেশের গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় ঘটানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন