নিশানা তিনি, বুঝেই মোদীর সাজা কীর্তিকে

বিতর্কের বাইশ গজে প্রথমে নামতে চাননি তিনি। কিন্তু বিপক্ষের বাউন্সারে নিজের দলের বেহাল দশা দেখে শুধু দর্শকের ভূমিকায় আর থাকতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী। মাঠে নামতেই হল তাঁকে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২৪
Share:

বিতর্কের বাইশ গজে প্রথমে নামতে চাননি তিনি। কিন্তু বিপক্ষের বাউন্সারে নিজের দলের বেহাল দশা দেখে শুধু দর্শকের ভূমিকায় আর থাকতে পারলেন না নরেন্দ্র মোদী। মাঠে নামতেই হল তাঁকে। বিদ্রোহী কীর্তি আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দলীয় সভাপতি অমিত শাহকে নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠলেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও তাতে ম্যাচ কিছুটা সামাল দেওয়া গেলেও টিম বিজেপির অন্দরের অশান্তি রয়েই গেল বলে আশঙ্কা অনেকের।

Advertisement

এটাই চাননি মোদী! দিল্লি ক্রিকেট সংস্থায় (ডিডিসিএ) দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বহু দিন ধরেই হইহল্লা করছিলেন কীর্তি। কিন্তু তখনও প্রধানমন্ত্রীর মত ছিল, ক্রিকেট থাকুক নিজের জায়গায়। সেখানে আগ বাড়িয়ে শাসক দলের ঢোকার দরকার নেই। ইতিমধ্যে দিল্লির সচিবালয়ে হানা দেয় সিবিআই। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল দাবি করেন, ডিডিসিএ দুর্নীতির ফাইল খুঁজতেই এসেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল। তির ঘুরে যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দিকে। নয়া ইন্ধনে চাঙ্গা হয়ে জেটলিকে তোপ দাগা শুরু করেন কীর্তি। তখনও কিন্তু মোদী লালকৃষ্ণ আডবাণীর দৃষ্টান্ত দিয়ে জেটলির সততার প্রশংসা করেছিলেন। যদিও সেই মন্তব্য অস্বস্তি বাড়িয়েছিল জেটলি-শিবিরে। অনেকেরই মনে হয়েছিল, গোটা ব্যাপারটা থেকে নিজের দূরত্ব বাড়িয়ে ফেললেন মোদী।

আসলে কিন্তু মোদী-অমিত ধরে ফেলেছিলেন, কীর্তি নিমিত্ত মাত্র। ক্রিকেটার-সাংসদকে ঢাল করে নেপথ্যে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বিজেপিরই জেটলি-বিরোধী শিবির। তাঁদের আক্রমণের লক্ষ্য যতটা না জেটলি, তার চেয়েও বেশি মোদী নিজে! এই কারণেই প্রথমটায় কীর্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাননি মোদী-অমিত। সময় নিয়েছিলেন দিন চারেক। কিন্তু ততক্ষণে রাজনৈতিক ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যায়। ‘দুর্নীতি-দমনে’ ব্যর্থতা নিয়ে সটান কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়ে আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস।

Advertisement

মোদী বোঝেন, এর পরেও কীর্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিপদ বাড়বে। এক দিকে নিশানা হচ্ছিলেন তিনি নিজে, অন্য দিকে জেটলির নাম জড়ানোয় অস্বস্তি বাড়ছিল। জেটলি শুধু মোদী-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত নন, দেড় বছর ধরে সাধারণ মানুষও ভাবতে শুরু করেছে, সরকার চালাচ্ছেন এই দু’জনই। তাই সুষমা স্বরাজ বা বসুন্ধরা রাজেকে ঘিরে বিতর্কের আঁচ মোদীর গায়ে লাগেনি। কিন্তু এ বার অন্তত প্রকাশ্যে জেটলির পাশে দাঁড়ানোটা জরুরি হয়ে পড়েছিল মোদীর কাছে।

বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করেন, একটি বেসরকারি ক্রিকেট সংস্থার দুর্নীতি নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার অধিকারই নেই কীর্তির। ক্রিকেটার হিসেবে তিনি সংসদে আসেননি, বিহারের সাংসদ হিসেবে এসেছেন। তা ছাড়া, বেসরকারি সংস্থায় দুর্নীতি হলে তার বিচারের দায়িত্ব সেই সংস্থার। বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, ‘‘বিহারে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কীর্তি সরব হলে বরং সেটা প্রাসঙ্গিক হতো।’’ অনেকে আবার বলছেন, কীর্তি যখন বিহারের প্রতিনিধি, তখন দিল্লি ক্রিকেট প্রশাসনের ব্যাপারে তাঁর কথা বলা অনুচিত। সে তিনি যতই জাতীয় দলের প্রাক্তন সদস্য হোন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কি দিল্লি বা কেরলের ক্রিকেট প্রশাসন নিয়ে মাথা ঘামাতে যান? যদিও কেউ কেউ মনে করিয়ে দিয়েছেন, রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লির হয়েই খেলতেন কীর্তি।

আজ কীর্তি বলেন, ‘‘আমি চাইব মোদীজি ব্যাপারটায় হস্তক্ষেপ করুন। সব খতিয়ে দেখে বলুন, আমার ভুলটা কোথায়?’’ তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামিকাল জনস্বার্থ মামলা করে আদালতের নজরদারিতে ডিডিসিএ-দুর্নীতির তদন্ত চাইবেন তিনি। জেটলির ঘনিষ্ঠ মহলের মতে, তাঁর মোদী-ঘনিষ্ঠতা এবং বকলমে ‘নম্বর-টু’ হওয়া— দু’টোই কী ভাবে শত্রুপক্ষকে তাঁর বিরুদ্ধে একজোট করেছে, সেটা টের পাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। এক দিকে প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল গোপাল সুব্রহ্মণ্যম, আইনজীবী রাম জেঠমলানী, বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো আইনজীবীরা একজোট। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা এস গুরুমূর্তিও সেই দলে ভিড়েছেন। রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ীরা চুপ থাকলেও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে অখুশি নন। জেটলি ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলছেন, ‘‘সব নেতিবাচক ঘটনার একটা ইতিবাচক দিক থাকে। অরুণজিও বুঝতে পেরেছেন তাঁর বন্ধু ক’জন আর শত্রুই বা ক’জন!’’

২৮ ডিসেম্বর জেটলির জন্মদিন। সেই উপলক্ষে আজ আগাম ভোজসভার আয়োজন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি। অর্থমন্ত্রীর শুভানুধ্যায়ীদের একাংশের মতে, এ বারের জন্মদিনে ও নতুন বছরে একটা সংকল্প নেওয়ার সময় হয়েছে জেটলির। সেটা হল, ক্রিকেট আর নয়! বাইশ গজকে সেলাম ঠুকে এ বার অবসর নেওয়াই ভাল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন