লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে বিল আনছে কেন্দ্র

অর্থলগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে আইন সংশোধন করে সেবি-র হাত শক্ত করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকায় সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। সেই ক্ষমতাই এ বার পাচ্ছে তারা। আজ সকালেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসে সংসদে এই বিল আনার অনুমোদন দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

অর্থলগ্নি সংস্থার কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে আইন সংশোধন করে সেবি-র হাত শক্ত করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

Advertisement

যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকায় সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ হস্তক্ষেপ করতে পারেনি শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি। সেই ক্ষমতাই এ বার পাচ্ছে তারা। আজ সকালেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে বসে সংসদে এই বিল আনার অনুমোদন দিয়েছে।

সেবিকে বাড়তি ক্ষমতা দিতে চেয়ে ২০১৩ সালেই একটি বিল এনেছিল আগের মনমোহন সিংহ সরকার। কিন্তু নানা কারণে তা পাশ করানো যায়নি। ১৯৭৮-এর সেবি আইন সংশোধনের জন্য পর পর তিন বার অর্ডিন্যান্স জারি করে আগের সরকার। তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন বিল আনতে হচ্ছে। আগের অর্ডিন্যান্সের খসড়াতেই কিছু অদলবদল করে আরও কড়া শাস্তির বিধান রাখছে মোদী সরকার।

Advertisement

এত দিন তল্লাশি চালানো বা নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা সেবির হাতে ছিল না। সরকার আইন সংশোধনের পরে সেবি এ বার সেই ক্ষমতা পাবে। পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধের তদন্তে কল ডেটা রেকর্ড পরখ করা, একশো কোটি টাকা বা তার বেশি অর্থ আদায় করলেই তার বাধ্যতামূলক বিবরণ সংগ্রহ এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকারও পাচ্ছে সেবি। এমনকী জরিমানাও নির্ধারণ করতে পারবে তারা। এ ধরনের প্রতারণা সংক্রান্ত মামলার জন্য একটি বিশেষ আদালত গড়ার প্রস্তাবও রয়েছে বিলে।

বাজেট পেশের সময়েই এই বিল আনার কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর কথায়, “আইনের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে এত দিন বেশ কিছু সংস্থা গরিব মানুষকে ঠকিয়ে এসেছে। সে জন্যই ১৯৭৮ সালে তৈরি আইনটি সংশোধন করা দরকার হয়ে পড়েছে।” অর্থ-বিল পাশের পরই সরকার এই বিলটি আনতে চায়।

সারদার মতো লগ্নি সংস্থাগুলি চিট ফান্ড বলে পরিচিত হলেও আইনি সংজ্ঞায় তারা চিট ফান্ডের আওতায় পড়ে না। চিট ফান্ড নিয়ন্ত্রণে যে আইন রয়েছে, সেই আইনও এই সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-ই মূলত এই সংস্থাগুলির কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্থাগুলি আইন ভাঙলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগে সেবি-র হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল না। সেবি-কে আরও ক্ষমতা দিতে মনমোহন সরকারের আমলেই সেবি আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৩ সালেই এ জন্য সেবি আইন সংশোধনী বিল আনা হয়েছিল। ওই বিলে ১৯৯২ সালের সেবি আইনের পাশাপাশি সিকিউরিটিজ চুক্তি আইন ও ডিপোজিটরিজ আইনেও দরকার মতো সংশোধনের কথা বলা হয়। কিন্তু বিরোধীদের বাধায় অধিবেশনের কাজ বার বার ভণ্ডুল হওয়ায় ওই বিলটি সংসদে পাশ হতে পারেনি। বাধ্য হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হয়। সরকারি সূত্রে খবর, সেই অর্ডিন্যান্সের খসড়া ধরেই তৈরি হচ্ছে নতুন বিল। শুধু আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য আরও কড়া শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেই অর্থমন্ত্রী জেটলি ও আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে আইন সংশোধনে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেন নরেন্দ্র মোদী। আইন মন্ত্রক গত সপ্তাহেই প্রস্তাবিত বিলটি অনুমোদন করে মন্ত্রিসভার কাছে পাঠিয়ে দেয়। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই ইতিমধ্যেই সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সেবি-র ভূমিকা ও আইনে যে গুরুতর খামতি রয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সে জন্যই আইনের ফাঁকফোকর বোজাতে উদ্যোগী হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যাতে এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা না রেখে নিরাপদ বিমা প্রকল্পে অর্থ সঞ্চয় করেন, সে জন্যও সচেষ্ট হচ্ছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন