খেহরের রায়ে মোদী অস্বস্তিতে

পাঁচ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে প্রধান বিচারপতির এই রায় ধোপে টেকেনি। কিন্তু তাঁর এই কথার পরে বিরোধীরা বলতে শুরু করেছে যে, সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে যাবতীয় কৃতিত্ব নিতে চেয়েছিলেন মোদী।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৮
Share:

উল্লাস: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খারিজ হয়ে গিয়েছে তিন তালাক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি হাতে সেই জয় উদ্‌যাপন করছেন মুসলিম মহিলারা। বুধবার হায়দরাবাদে বিজেপির দলীয় দফতরে। পিটিআই

তিন তালাক খারিজের কৃতিত্ব নরেন্দ্র মোদীকেই দিতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু তাতে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের মন্তব্য। কারণ রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে তিন তালাক খারিজ করে দিতে বলেছিল। কিন্তু বাস্তবে সরকারের নিজের হাতেই তা করার ক্ষমতা ছিল।

Advertisement

পাঁচ সদস্যের বিচারপতির বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে প্রধান বিচারপতির এই রায় ধোপে টেকেনি। কিন্তু তাঁর এই কথার পরে বিরোধীরা বলতে শুরু করেছে যে, সুপ্রিম কোর্টের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে যাবতীয় কৃতিত্ব নিতে চেয়েছিলেন মোদী। এবং এই ছক তাঁর গোড়া থেকেই ছিল।

স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। মোদী সরকারের এক শীর্ষ ব্যক্তি আজ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘উনি (প্রধান বিচারপতি) এক দিকে বলেছেন, তিন তালাক ইসলামের অংশ। তাই শরিয়ত আইনে কোর্টের পক্ষে নাক গলানো সম্ভব নয়। অথচ তিনি সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে বলছেন। অদ্ভুত, পরস্পরবিরোধী কথা।’’ প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে ছ’মাস সময় দেওয়া হোক। তত দিন তাৎক্ষণিক তালাকের উপরে স্থগিতাদেশ জারি থাকুক। সরকারের ওই শীর্ষ ব্যক্তির প্রশ্ন, ‘‘উনি নিজেই বলছেন, তিন তালাকের সঙ্গে মুসলমানদের বিশ্বাস জড়িত। ধর্মাচরণের অধিকারকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আবার সেই মৌলিক অধিকারের উপরেই তিনি স্থগিতাদেশ জারি করছেন। এ-ও অদ্ভুত।’’

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রচারে মোদী যখন তিন তালাকের বিরুদ্ধে সরব হন, তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, সরকার নিজেই কেন আইন আনছে না। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর কাছেও দরবার করেছিলেন আন্দোলনকারী মুসলিম মহিলারা। এক বিরোধী নেতার কথায়, ‘‘প্রধান বিচারপতির রায় আসলে ফাঁস করে দিয়েছে যে, মোদী চাইলেই নিজে আইন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন। সেই কারণেই প্রধান বিচারপতির ওপরে মন্ত্রীদের এত রাগ।’’

বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে কেন্দ্রীয় সরকার আর আইনের পথে হাঁটতে চাইছে না। কিন্তু এখনও মুসলিমদের বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মোদী সরকারের আইন করার প্রয়োজন রয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের মত। সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই করা ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলনের নেত্রীদের যুক্তি, কোর্ট শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক তালাক রদ করেছে। তালাকের অন্য দু’টি প্রথা, যেখানে তিন মাস ধরে তালাক হয়, সেখানেও কোনও আইনি নিয়ন্ত্রণ নেই। সবটাই নিয়ন্ত্রণ করে কাজি ও শরিয়ত আইন। ফলে পুরুষরা এখনও চাইলেই একতরফা তালাক দিতে পারেন। অতএব আইন দরকার। সংগঠনের দাবি, তাঁরা মুসলিম পারিবারিক আইনের যে খসড়া তৈরি করেছেন, সেই অনুযায়ীই সরকার নতুন আইন আনুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন