মাঝপথে এসে সংখ্যালঘু মন জয়ের চেষ্টা

দাদরির হত্যাকাণ্ডের ঠিক এক বছরের মাথায় এ বারে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের অভিযানে নামল কেন্দ্র। সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় ভারী, দেশের এমন এলাকাগুলিতে ৫০০টি ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’-এর আয়োজন করবে সরকার। কাল থেকেই শুরু হচ্ছে এই অভিযান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫০
Share:

দাদরির হত্যাকাণ্ডের ঠিক এক বছরের মাথায় এ বারে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের অভিযানে নামল কেন্দ্র। সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় ভারী, দেশের এমন এলাকাগুলিতে ৫০০টি ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’-এর আয়োজন করবে সরকার। কাল থেকেই শুরু হচ্ছে এই অভিযান।

Advertisement

এক বছর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ৫০ বছর বয়সি মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে খুন করা হয় বাড়িতে গোমাংস রাখার গুজবের জেরে। এখনও দোষীদের শাস্তি হয়নি। অথচ সামনেই উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। দু’বছরের মাথায় লোকসভা ভোটে ফের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে। সংখ্যালঘুরা যাতে বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে না যায়, তার জন্যই গত রবিবার কোঝিকোড়ে দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুদের কাছে টানার প্রসঙ্গ তোলেন। আর তার পরেই কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি আজ ঘোষণা করলেন, কাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হবে ‘উন্নতি পঞ্চায়েত।’

এই ‘উন্নতি পঞ্চায়েত’-এর নামে ঠিক কী করতে চাইছে সরকার?

Advertisement

কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রক জানাচ্ছে, দেশের ৯০টি জেলাকে ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি। সেই সব এলাকায় দফায় দফায় বসবে পঞ্চায়েতের আসর। এলাকার মন্ত্রী তো থাকবেনই। অন্য মন্ত্রীরাও সেখানে যোগ দেবেন প্রয়োজন মতো। শোনা হবে নিচু তলার মানুষের সমস্যার কথা। সংখ্যালঘুদের জন্য মোদী সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও সেগুলির সুবিধা কেন ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না, তা-ও বোঝার চেষ্টা করবে কেন্দ্র। এবং তার ভিত্তিতে দূর করা হবে প্রকল্প রূপায়ণের বাধা।

উন্নয়নের মোড়কে সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছনোর এই চেষ্টার পিছনে রাজনীতি ছাড়া কিছুই দেখছেন না বিরোধীরা। কংগ্রেসের নেতা মীম অফজল বলেন, ‘‘মোদী সরকারের অর্ধেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন নিয়ে এখন টনক নড়ছে! এর অর্থই হল, সরকার কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছে, গত আড়াই বছরে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে তারা কিছুই করেনি। এখন ভোটের কথা মাথায় রেখে উঠেপড়ে লাগতে চাইছে।’’

নকভির অবশ্য দাবি, ‘‘সংখ্যালঘুদের আমরা আদৌ ভোটব্যাঙ্ক বলে মনে করি না। বিরোধী দলগুলিই এত দিন তাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। উন্নয়নের মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের মূলস্রোতে আনতেই এই উদ্যোগ। কাল ছাত্রীদের হস্টেল, বিদ্যালয় ইত্যাদির শিলান্যাস হবে। সংখ্যালঘুরা ‘দক্ষতা উন্নয়ন’ প্রকল্পের সুফল কী করে পেতে পারেন, তা বোঝানো হবে।’’ আগামিকাল প্রথম পঞ্চায়েতটি বসছে বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার মেওয়াতে। পরেরটি হবে ৬ অক্টোবর, রাজস্থানের অলওয়রে।

সম্প্রতি কোঝিকোড়ে দলের সম্মেলনেই মোদী সংখ্যালঘুদের কাছে টানার ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের না পুরস্কৃত করা উচিত, না তিরস্কৃত করা উচিত। দরকার তাঁদের ক্ষমতায়ন। তাঁরা ভোট-বাজারের সামগ্রী নন, ঘৃণার পাত্রও নন। তাঁদের আপনজন ভাবা উচিত।’’ বিজেপির আশঙ্কা, দাদরির ঘটনায় দেশের নানা প্রান্তে যে ভাবে দলিত-সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে, তা দলের ভাবমূর্তিতে আঁচ ফেলেছে। তার উপর সম্প্রতি পাকিস্তান নিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যাতে নিজেদের দলছুট মনে না করেন, তার জন্যই আরও বেশি করে তাঁদের কাছে পৌঁছনো দরকার। শাসক দলের ভাবনা হল, সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের ঝুলিতে না আসুক, অন্তত তাঁরা যেন বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট না হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন