কালো টাকার খোঁজে উদ্বেগ কর সন্ত্রাসেরও

মুখে এক। কাজে আর এক। নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে আয়কর অফিসারদের হাতে যথেচ্ছ ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে, তা দেখে এমনটাই বলছে শিল্প মহল। মুখে এখনও শিল্পপতিরা মোদী সরকারের ‘কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই’-কে স্বাগত জানাচ্ছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২০
Share:

মুখে এক। কাজে আর এক।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে আয়কর অফিসারদের হাতে যথেচ্ছ ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে, তা দেখে এমনটাই বলছে শিল্প মহল। মুখে এখনও শিল্পপতিরা মোদী সরকারের ‘কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই’-কে স্বাগত জানাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার হলেই তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে লাল কেল্লার র‌্যাম্পার্ট থেকে অন্য কথাই বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। গত ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, আয়কর অফিসারদের হাতে সাধারণ মানুষের হেনস্থা বন্ধ হবে। এর পর সারা দেশের আয়কর অফিসারদের ডেকেও একই মন্ত্র দিয়েছিলেন মোদী— আয়কর দফতর সম্পর্কে মানুষের মনে আতঙ্ক কমাতে হবে।

Advertisement

কাজ কিন্তু এগিয়েছে উল্টো পথেই। এ বার বাজেটের অর্থ বিলে আয়কর অফিসারদের কোনও কারণ না দেখিয়েই যে কারও বাড়ি বা দফতরে ঢুকে তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে তল্লাশি দরকার বলে আয়কর অফিসারদের বিশ্বাস, তা নিয়ে ফাইলে নোট রাখতে হবে। তল্লাশিতে হেনস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলে তবেই আয়কর দফতর নোটটি দেখাবে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘ওই নোট দেখালে কার থেকে আয়কর অফিসাররা গোপন তথ্য পেয়েছেন, তা ফাঁস হয়ে যাবে। কোনও সংস্থার কর্মী সংগঠনের নেতা, বিক্ষুব্ধ কর্মী বা ব্যবসায় অংশীদারদের থেকেই কর ফাঁকির খোঁজখবর মেলে। তা ফাঁস হয়ে গেলে তদন্তই এগোবে না।’’

আরও পড়ুন: কুলভূষণের জন্য ফের আবেদন নয়াদিল্লির

বণিকসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘এ হল ইন্সপেক্টর রাজের প্রত্যাবর্তন। মোদী সরকারের মনোভাব থেকে স্পষ্ট, তাঁরা ধরে নিচ্ছেন, মধ্যবিত্তরা হলেন সৎ করদাতা। ধনী, শিল্পপতি বা ব্যবসায়ী মানেই তিনি কালো টাকার মালিক, কর ফাঁকি দেন।’’ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের যুক্তি, ‘‘সরকার বলছে, আদালতে গিয়ে তল্লাশির কারণ দেখাবে। কিন্তু ওই তল্লাশির কারণ দেখেই ক্ষুব্ধ করদাতারা আদালতের দ্বারস্থ হতেন। সেটাই ছিল রক্ষাকবচ। কিন্তু এখন যা হল, তা কর সন্ত্রাস।’’

এই ‘কর সন্ত্রাস’ ও ‘ইন্সপেক্টর রাজ’-এর ছায়া জিএসটি বিলেও রয়েছে বলেও বিরোধীদের যুক্তি। কারণ জিএসটি বিলেও ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফা আটকাতে কর অফিসারদের হানা-তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জেটলির যুক্তি, যদি জিএসটিতে করের হার কমার পরে লাভের পরিমাণ বাড়ে, ক্রেতাকেও দাম কমিয়ে তার সুরাহা দিতে হবে। চিদম্বরমের যুক্তি, ‘‘করের বোঝা কমলেই শুধু লাভের অঙ্ক বাড়ে না। তার সঙ্গে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।

এমনকী করের বোঝা কমলেও অন্য কারণে খরচ বেড়ে গিয়ে ক্ষতি হতে পারে। সরকার যদি ধরে নেয়, করের হার কমছে বলেই লাভও বাড়বে, তা হলে মুশকিল।’’

কর বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, প্রতিযেগিতার বাজারে কোনও পণ্যের উপরে যদি করের বোঝা ও খরচ কমে যায়, তা হলে এমনিতেই বাজারে সেই সংস্থা পণ্যের দাম কমাবে। না হলে তার পণ্য প্রতিযেগিতায় পিছিয়ে পড়বে। সেখানে সরকারকে নাক না গলালেও চলে। তার থেকেও বেশি জরুরি, নতুন কর-ব্যবস্থা সম্পর্কে শিল্পমহল ও ব্যবসায়ীদের অবহিত করা। না হলে তাঁরা অনিচ্ছাকৃত ভুল করে কর অফিসারদের কোপে পড়বেন। চিদম্বরম বলেন, ‘‘ভ্যাট চালুর সময় আমি কর অফিসারদের ডেকে ব্যবসায়ীদের ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করে দিতে বলেছিলাম। এ বার জিএসটি-তেও তেমন না হলে শিল্প মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন